এম শিমুল খান ঢাকাঃ বিএনপি-জামাত মনোনীত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দ্বায়িত্ব দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদকে। তখন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইয়াজ উদ্দিন আহম্মদ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সারা দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করে এবং দেশের সুশীল সমাজের ব্যক্তিদের নিয়ে সরকার গঠন করেন।
আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সে সময় গ্রেফতার করে কারাবাস করান। তখন সারা দেশের জনগনের মধ্যে একটি অস্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তৎকালীন সময়ে দেশের এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী এবং বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে যারা নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালবাসেন তারা চুপ করে বসে থাকতে পারেনি, তেমনি একজন মানুষ হলেন অভিনেতা শেখ কামরুজ্জামান পান্না।
তিনি তার বিবেকের দংশনে ১/১১’র সময় তৎকালীন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মঈন ইউ আহম্মদের কাছে নিজ হাতে আওয়ামীলীগের সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে একটি চিঠি লেখেন।
অভিনেতা ও চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক তৎকালীন সেনা প্রধানের কাছে প্রেরিত পত্রের একাংশে মঈন ইউ আহম্মদ কে উদ্দেশ্য করে লেখেন “বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কোন কিছু হয়ে গেলে এই সরকার মহাবিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। ২/১ দিনের মধ্যে আপনারা শেখ হাসিনাকে ছেড়ে দিন”
এই চিঠির মাধ্যমে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারকে প্রচ্ছন্ন হুমকি দেওয়াতে অভিনেতা ও চলচ্চিত্র সহকারী পরিচালক শেখ কামরুজ্জামান পান্নার জীবনে নেমে আসে অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার, ওই হুমকি দেওয়াটা কাল হয়ে দাঁড়ায় শেখ কামরুজ্জামান পান্নার জীবনে। তার জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ নির্যাতন, নির্মম অত্যাচার। ওই সেনা নির্যাতনে তাঁর তিনটি দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়। মেরুদণ্ড ও বুকে পিঠে প্রচন্ড আঘাত করা হয়। বাম পায়ে আঘাতের কারনে এখন হাঁটতে কস্ট হয় শেখ কামরুজ্জামান পান্নার। নির্যাতনের কারনে শারীরিক ভাবে তিনি অনেকাংশে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি খুব মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছেন।
অভিনেতা ও চলচ্চিত্রের সহকারী পরিচালক শেখ কামরুজ্জামান পান্নার পৈতৃক বাড়ি বাগেরহাট শহরে। তিনি ছাত্রজীবন পার করেছেন নিজ এলাকা বাগেরহাটে। তিনি ১৯৮৩ সালে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন। অভিনয়ের পাশাপাশি পরবর্তীতে তিনি চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। নরম-গরম,পয়সা পয়সা, জবলিম, লাল দরিয়া, পর্বত, তালাচাবি, পদ্মবতী, নয়া তুফান, মি.মাওলা ছবি গুলি তিনি পরিচালনা করেন। তার অভিনয় করা উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে অন্ধকার জগৎ, আমার মা এবং অভিনেতা ডি. এ তায়েবের সাথে অফিসার্স। অভিনয় জগতে শেখ কামরুজ্জামান পান্নার গুরু ছিলেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক এফ কবীর চৌধুরী এবং চিত্রালী পত্রিকার কিংংবদন্তি সম্পাদক আহম্মদ জামান চৌধুরী।
১/১১ ‘র সময়ে তৎকালীন সেনা সমর্থিত সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার শেখ কামরুজ্জামান পান্না একটি বার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে চান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাতে চান তার উপর নির্মম নির্যাতনের কাহিনী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে তার একদিন না একদিন দেখা হবে এ আশা বুকে নিয়ে আর নির্মম নির্যাতনের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন শেখ কামরুজ্জামান পান্না।
আপনার মতামত লিখুন :