নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা : দেশের কারাগারগুলোতে শাস্তি পাওয়া অপরাধীদের সংশোধন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক। তিনি বলেছেন, দেশের কারাগারগুলোতে শাস্তি পাওয়া অপরাধীদের সংশোধন করা হচ্ছে। অপরাধী তার দন্ড ভোগের সঙ্গে সঙ্গে সংশোধিত হচ্ছেন কারাগারেই।
এক সাক্ষাতকারে কারা মহাপরিদর্শক বলেন, প্রতিটি কারাবাসী সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন কারাগারে। বন্দিদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সর্বাত্বক চেষ্টা করা হচ্ছে কারাগারে। বন্দিরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে পারছেন। বন্দিদের মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠাতেও কাজ করছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা হাসপাতালের ঘুষ বাণিজ্য সিন্ডিকেটের স্থান নেই। কারাগারের আটক বন্দিরা তাদের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারছেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক আরও বলেন, কোনো বন্দি যেন নিগ্রহের শিকার হন এদিকেও আমরা সজাগ। আমাদের কর্মকান্ড অর্থাৎ কারাগার সত্যিকারের অপরাধী সংশোধন কেন্দ্র হয়ে দেশে অপরাধ কমাতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এই আমার লক্ষ্য। দেশের প্রতিটি কারা কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, কারাগারের বন্দিদের প্রতি যেন অবহেলা না হয়। তারা যাতে আলোর পথ দেখতে পান সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
জানা যায়, কারাগার উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেয় বর্তমান সরকার। তন্মধ্যে বহু কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন হওয়ায় কারাগারে সিংহভাগ পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে। কারবাসীরা সংশোধনের সুযোগ পাচ্ছেন। কারাগার থেকে মুক্তির পর তাদের সমাজে পুনর্বাসন করার জন্য সমাজসেবা ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।বন্দিদের আত্মকর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য বন্দি পুনর্বাসন প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক গত ১২ অক্টোবর ২০২১ হতে কারা মহাপরিদর্শক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ দায়িত্বে যোগদানের প্রথম দিন থেকেই তিনি করাগারকে ঢেলে সাজাতে কাজ করছেন। আগে কারাগারে দুর্নীতি অনিয়মের কথা সংবাদপত্রে প্রকাশ হলেও এখন তা শূন্যের কোঠায়। বন্দিদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবার যথাযথ পরিবেশন, সুষ্ঠু চিকিৎসা সেবাসহ সকল সুযোগ ভোগ করছেন বন্দিরা।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারাগারে প্রতিটি বন্দির সুরক্ষা দিতে আমরা সচেষ্ট। কারাবন্দিদের নিয়ম অনুযায়ী যা যা প্রাপ্য, সব কিছুই দেওয়া হচ্ছে। কারাবন্দিদের প্রশিক্ষিত করে তাদের বিভিন্ন কাজে লাগানো হচ্ছে। তাদের তৈরি করা উন্নতমানের হ্যান্ডিক্রাফট বা হস্তশিল্প বাজারজাত করা হচ্ছে। বিক্রি করা পণ্যের লভ্যাংশ তাদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এস এম আনিসুল হক (এসজিপি, বিজিবিএম, পিবিজিএম, এনডিসি, পিএসসি) ১৯৭১ সালের পহেলা ডিসেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯১ সালের ২০ ডিসেম্বর তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। তাঁর কার্যকালে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন নিয়োগসহ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদানের পূর্বে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ (বিইউপি), মিরপুর সেনানিবাসে সিকিউরিটি এন্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিভাগের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১০ অক্টোবর ২০২১ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগদান করেন।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনিস ১৯৯১ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ডিগ্রী, ২০০৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড এন্ড স্টাফ কলেজ হতে মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ এবং ২০২০ সালে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্ হতে মাস্টার্স অব সোশাল সাইন্স ইন সিকিউরিটি এন্ড ডেভেলপমেন্ট ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সিয়েরালিওন ও সুদান এ দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও সরকারি ও ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, চীন, জাপান, ফিলিপাইন, ভারত, ফ্রান্স, বুলগেরিয়া, জার্মানী, মিয়ানমার, তুরস্ক, মিশর, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া গমণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি দুই কন্যা সন্তানের জনক।
আপনার মতামত লিখুন :