নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সাত সদস্য ও পাহাড়ি তিন বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বৃহস্পতিবার বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সাতজন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের তিনজনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে পরে বিস্তারিত জানানো হবে। এর আগে বুধবার দুপুরে খন্দকার আল মঈন বলেন, ১০ অক্টোবর থেকে পার্বত্য এলাকায় যৌথ অভিযান চলছে। অপারেশনে বেশ অগ্রগতি আছে। আমরা বেশকিছু দূর পর্যন্ত চলে এসেছি। আশা করছি কয়েক জনকে আইনের আওতায় আনতে পারব। সম্প্রতি উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ১৯ জেলার ৩৮ তরুণের তালিকা প্রকাশ করে র্যাব। দুই দফায় পৃথক অভিযান চালিয়ে নিরুদ্দেশ ছয়জন তরুণসহ মোট ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব বলছে, অন্তত ৫৫ জন কথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৮ জন পার্বত্য চট্টগ্রাম দুর্গম এলাকায় অবস্থান করছেন। তাদের অনেকে স্বশস্ত্র প্রশিক্ষণ ও বোমা বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে দাবি বাহিনীটির। জঙ্গি সম্পৃক্ততায় কুমিল্লা ও দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তরুণদের সঙ্গে জড়িত সংগঠনের দাওয়াতি ও অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ ও বাড়ি ছেড়ে যাওয়া তিনজনসহ মোট পাঁচজনকে গত ৯ অক্টোবর রাতে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আট তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। একদিন পর (২৫ আগস্ট) কোতয়ালী থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়, যা দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে র্যাব নিখোঁজদের উদ্ধারে ও জড়িতদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে।
প্রাথমিকভাবে র্যাব জানতে পারে, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা বাড়ি ছেড়েছিল। পরে ৬ সেপ্টেম্বর চার তরুণকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয় র্যাব। তাছাড়া সামরিক জঙ্গি প্রশিক্ষণের সময় শারতাজ ইসলাম নিলয় নামে এক যুবক পটুয়াখালী থেকে পালিয়ে আসেন। হিজরতে থাকা বাকি তিন যুবক সেখানে প্রশিক্ষণ নেন। র্যাবের পৃথক অভিযানে তারাও গ্রেপ্তার হন।
কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ যুবকরা স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম হাবিবুল্লাহর মাধ্যমেই প্রথমে নতুন জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে ধারণা পায়। এ সময় ওই যুবকদের পাশ্ববর্তী দেশে মুসলমানদের উপর নির্যাতনের বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রদান ও বিভিন্ন ভিডিও দেখানো হত। এভাবে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগ্রহ তৈরি করা হয়।
হাবিবুল্লাহকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। কুমিল্লার স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতির পাশাপাশি তিনি পাহাড়ে একটি মাদ্রাসার পরিচালনা করেন। এই মাদ্রাসার নামে বিদেশ থেকে অর্থ আনতেন তিনি। পরে সেই অর্থ জঙ্গিবাদে খরচ করতেন। এছাড়া সংগ্রহ করা অর্থ বিচ্ছিন্নতাবাদিদের দিয়ে পাহাড়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ করানো হতো।
আপনার মতামত লিখুন :