নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ কেরাণীগঞ্জ থানার বরিশুর এলাকায় রেশমা আক্তারের সঙ্গে ইতালি প্রবাসীর পরোকিয়া রয়েছে এমন সন্দেহে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেন স্বামী নুরুল ইসলাম। স্ত্রীকে হত্যা শেষে গ্রেফতার এড়াতে বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে আসছিলো। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর কাকরাইল এলাকা থেকে নুরুল’কে গ্রেফতার করে র্যাব।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (সিইও) মাহফুজুর রহমান।
র্যাব-১০ অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান জানান, ১২ বছর পূর্বে নিহত রেশমা আক্তার (২৫)’র সঙ্গে নুরুল ইসলাম (৩৫)’র বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ১০ বছর বয়সি একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী অনুমতিতে রেশমা জর্ডান চলে যায়। জর্ডানে থাকাবস্থায় রেশমার সাথে নুরুল ইসলামের সাংসারিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদ তৈরি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তাদের সাংসারিক বনিবনা না হওয়ায় তিন মাস আগেরেশমা স্বামী নুরুল ইসলামকে ডিভোর্স দেন।
গত ২৮ এপ্রিল রেশমা দেশে ফিরে আসলে স্বামী নুরুল তালাক হওয় সত্ত্বেও তাকে নিয়ে সংসার করার জন্য রেশমা ও তার মা-বোনসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বিভিন্ন ভাবে আকুতি-মিনতি করতে থাকে। একপর্যায়ে রেশমাসহ সবাই নুরুলের কথায় রাজি হয়ে গত ১৫ মে পুঃনরায় সংসার শুরু করেন তারা।
মাহফুজুর রহমান বলেন, ঘটনার দিন সকালে রেশমা ও নূরুল ইসলাম দুজনে মিলে মো. ইয়াসিন ( আল-আমিন (১০)কে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে যায়। মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে ইয়াসিনকে একা তার নানার বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে দুজনে পাসপোর্ট ফটোকপি করকে যায়। এরপরই বেলা পৌনে একটার দিকে নুরুল তার শ্বশুরের বাসায় এসে জানায় রেশমাকে তারা ভাড়া করা মেসে আটকে রেখে এসেছে। রেশমার স্বজনরা মেসের দরজা ভেঙ্গে গলা কাটা রক্তাক্ত অবস্থায় লাশ ফ্লোরে পড়া অবস্থায় দেখতে পায়। পরবর্তীতে মৃত রেশমার বোন বাদী হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় হত্যাকান্ডের সেঙ্গ জড়িত মো. নুরুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা ২ থেকে ৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই ঘটনার পরে আত্মগোপনে থাকা নুরুলকে রাজধানী ঢাকার পল্টন থানার কাকড়াইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার সত্যতা স্বীকার করেছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরুল র্যাবকে জানিয়েছে, সে পেশায় বাবুর্চী। পাশাপাশি বোকরা তৈরির একটি কারখানা ছিলো। কিন্তু মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকায় সেই কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। জর্ডান ফেরত স্ত্রী রেশমার সঙ্গে পুঃনরায় সংসার শুরু করার দুদিনের মাথায় রেশমা সঙ্গে আক্তারের সাথে কাতার প্রবাসী এক যুবকের সম্পর্কের সন্দেহসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিবাদের সৃষ্টি হয়। এতে নুরুল ক্ষুব্ধ হয়ে পরিকল্পিতভাবে তার স্ত্রী রেশমা আক্তারকে ভাড়া বাসায় নিয়ে ধারালো চাকু দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে বলে জানা যায়। হত্যাকান্ডের পরপরই নুরুল ইসলাম আত্মগোপন করার জন্য প্রথমে বরিশাল, চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম যায়। চট্টগ্রামে দুইদিন অবস্থান করার পর সেখানেও নিজেকে নিরাপদ মনে না করে পুনরায় ঢাকা হয়ে বরিশাল যাওয়ার সময় র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
আপনার মতামত লিখুন :