নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে জমি ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বিরোধের জেরে ৯নং বাটিকামারী ইউপি চেয়ারম্যান (স্বতন্ত্র) ইবাদত মাতুব্বরের নেতৃত্বে হামলা, বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পরে খবর পেয়ে পুলিশ অভিযুক্ত ওই চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী ও হামলার শিকার জাফর লস্কর (৫৫) কে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এদিকে, হামলা ও ভাংচুরের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি কোন ধরনের আইনি ঝুট ঝামেলায় জড়ালে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন জাফর লস্কর এবং তার দুই ছেলের চোখ তুলে নেওয়ারও হুমকি দেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্বজনেরা। বর্তমানে পরিবারটি নিজেদের বসতবাড়ি ছেড়ে চরম আতংকে ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
পরে অভিযোগের ভিত্তিতে গণমাধ্যমকর্মীদের একটি দল সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে জাফর লস্করের বাড়িঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুরের আলামত দেখতে পান ও মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে হাসপাতালের বিছানায় তাকে কাতরাতে দেখেন।
এ ঘটনায় হামলার শিকার জাফর লস্কর গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে হলুদ ভিটা বাজার থেকে ডেকে তার সাথে চেয়ারম্যানের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আমার ছোট ছেলে সবুজ লস্করকে চোরের বদনাম দিয়ে তাকে হাজির করতে বলেই প্রথমে চেয়ারম্যান আমাকে চড়-থাপ্পর দিতে থাকে। পরে চেয়ারম্যানের ছেলে ও ভাইয়েরা মিলে মোটা লাঠি দিয়ে আমাকে নিষ্ঠুর ভাবে আঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে কি হয়েছে জানিনা।
ভুক্তভোগীর স্ত্রী (শারীরিক প্রতিবন্ধী) জবেদা বেগম বলেন, গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) আনুমানিক ১০ টা সাড়ে ১০ টার দিকে চেয়ারম্যান ইবাদত মাতুব্বরের ছেলে সাজিদ মাতুব্বর দলবল নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আমার ছোট ছেলেকে খুঁজে বের করে দিতে বলে নতুবা তাদের বাড়িতে অচেতন অবস্থায় থাকা আমার স্বামীর চোখ উঠিয়ে ফেলবে বলে হুমকি দিয়েই আমার বসত ঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমি যেহেতু অসুস্থ আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে আমরা বাড়িঘর ছেড়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ বিষয়ে যদি আমরা থানা পুলিশ ও কোট-কাচারী করি তাহলে আমার স্বামী ও দুই সন্তানের চোখ তুলে নেওয়ারও হুমকি দেন তারা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বলতে চাই সারা জীবন বঙ্গবন্ধুর নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে এসেছি। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে যদি আমাদের এই করুন পরিণতি হয়। তাহলে আমরা যাব কোথায়? শুধু তাই নয়, সেদিন ইবাদত চেয়ারম্যান এ ঘটনা ঘটিয়ে বিচারের নামে এলাকায় মাইকিং করে তার এই অপকর্মকে আড়াল করার চেষ্টা ও চালান তিনি। আমার ছেলে যদি প্রকৃত অর্থে চুরিও করে থাকে তাহলে তার জন্য দেশে আইন- আদালত রয়েছে। চোরের অপবাদ দিয়ে চেয়ারম্যান নিজের হাতে আইন তুলে নিয়ে আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্য নির্যাতন করা সহ আমাদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করতে পারে? সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আমরা ইবাদত চেয়ারম্যান সহ জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডাঃ তপন ভক্ত গণমাধ্যমকে জানান, জাফর লস্কর অসুস্থ অবস্থায় আমাদের এখানে ভর্তি রয়েছেন। আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে তাকে পরিপূর্ণভাবে সুস্থ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
অভিযুক্ত ৯নং বাটিকামারী ইউপি চেয়ারম্যান (স্বতন্ত্র) ইবাদত মাতুব্বরের নিকট উক্ত ঘটনার বিষয়ে তিনি আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন কি-না এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি টু টাইমস চেয়ারম্যান। চোর ধরলে পাবলিক মারবেই। ওরা আমার আপনজন কিন্তু চোর। তাহলে জাফর লস্করের বিরুদ্ধে কতগুলো মামলা রয়েছে, জিজ্ঞাসা করলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদেরকে খোঁজ নিয়ে দেখতে বলেন।
এ বিষয়ে মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আশরাফুল আলম জানান, খবর পেয়ে এসআই হাবিবুর রহমান মোল্লা জাফর লস্করকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি, পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
আপনার মতামত লিখুন :