মুহাম্মাদ মামুন শেখঃ রোজার মাস ক্লান্তি নিয়ে প্রতিদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে ঢাকার অধিকাংশ মেগা প্রজেক্টগুলোর নির্মাণযজ্ঞ চোখে পড়ে। মস্তবড় গগনছোঁয়া ক্রেন টেনে তুলছে নির্মাণ সামগ্রী। আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার চিত্র। ক্রেনে তুলতে থাকা প্রতিটি ইটে দেখি আমার প্রজন্মের অর্জন ও ভবিষ্যতের শক্তভীত। স্বাধীন সার্বভৌম আধুনিক বাংলাদেশ দেখি।
ফিরতে ফিরতে ট্রাফিকের চাপ থাকে, সেই সুযোগে ফেসবুকে নানা মানুষের জীবন যাপনের চিত্রও দেখতে পাওয়া যায়। গোপালগঞ্জ থেকে রুবিনা ফেসবুকে একটা দোকান খুলেছে এবং ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশে তার পণ্যের ডেলিভারি দিচ্ছে, আমি দেখি। আমি দেখি, মেঘনার মোহনায় জেলেবাবা ফোনে দেখতে পাচ্ছে ছেলের পাঠানো রেমিটেন্স বার্তা, ফেসবুক তো তাই-ই মানুষ নিজের জীবন ও যাপনের ভাগ করে নেওয়া নিজের বন্ধুদের সাথে।
গত কয়েকদিন ফেসবুকে সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়া দেখেছি সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া একটি সংবাদপত্রে সংবাদ প্রকাশ নিয়ে জনতার করা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন একজন সংবাদকর্মী এবং তার সম্পাদকের বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে। যখন এই লেখাটি লিখছিলাম ততক্ষণে সম্পাদক সাহেবকে আগাম জামিন দিয়েছে কোর্ট। ফেরার পথে গত দু’দিন আর ভালোলাগ ছিলনা এসব মেগা প্রজেক্ট দেখতে। শুধুই ভাবছি কী হবে এসবের। কারা বুক পেতে পাহারা দিয়ে রাখবে প্রজন্মের কাছে সব ইতিহাস ও ঐতিহ্য। আমাদের জাতীয়তাবাদের ইতিহাসকে আমি দুইভাবে বিবেচনা করি, একাত্তর পূর্ববর্তী সময় ও একাত্তর পরবর্তী সময়। আমি সৌভাগ্যবান স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মেছি। পরাধীনতার যে শিকল আমার বাবা-দাদার পায়ে ছিল তা আমার নেই। আমার যেমন পরাধীনতা নেই তেমন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কোথাও কোনো পরাধীনতা নেই। রাষ্ট্র নাক গলায় না অবাদ তথ্য প্রবাহে; সেই নাক না গলানোর সুযোগে কেউ কেউ নিজেদের ইজমের ঝান্ডাধারী হয়ে যান। দেশের স্বনামধন্য পত্রিকাটি সরকারের নাক না গলানোর সুবিধাকে অসুবিধায় রূপান্তর করার মতো একটা অপেশাদার আচরণ করেছে। মজার তথ্য হচ্ছে, সম্পাদক মহাশয় ছিলেন ৬০-এর দশকের বাম রাজনৈতিক কর্মী, একটা গোটা জীবন ব্যর্থ বিপ্লবের গ্লানি নিয়ে তিনি মাঝেমধ্যেই এমন কিছু করে বসেন, যা স্বাধীনতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলে। এবারও তাই হয়েছে, Freedom is fake পড়া আর আওড়ানো মানুষ শেষ অবধি কোনও স্বাধীনতায় পৌঁছায় কে জানে? সম্পাদক মহাশয়ও বা জানেন কী? কেন বলছি একথা? ত্যাগ, তিতিক্ষার ইতিহাস, অর্জন বা রক্ত এসব ইজমবাদীদের নিজেদের মনগড়া চিন্তার সামনে কত ফিকে ও মূল্যহীন। সম্পাদক সাহেব ও তার পোষ্যরা যার মধ্যে বাস করে তা খালি চোখে দেখতে কেমন, তাদের কী আবার মাঠের ও সংসদের রাজনীতিতে আগ্রহ জন্মতে শুরু করেছে? না কী তৃতীয় শক্তির আগমন বার্তা, জানতে ইচ্ছে করে। জানতে ইচ্ছে করে শেখ হাসিনার বিকল্প কী আপনারা পেয়েছেন? নিজেকে প্রশ্ন করলে উত্তর নিজেই পাবেন। যদি না পেয়ে থাকেন তবে ইতিহাসও সাক্ষি দেবে, আওয়ামি লীগ তিন তিন বার নিজেদের রাজনৈতিক সক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধী জোটকে রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে দূরে রাখতে পেরেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক যাত্রা টিকিয়ে রাখতে পর পর তিনবারের সরকার গঠন, আগামীর ইতিহাসে এক গৌরবগাথা হয়ে থাকবে। আর ফেসবুকে যে নিউ লিবারেলিজমের কথা বলেন, তাতে লজ্জা লাগে। স্বাধীনতার প্রশ্নবিদ্ধ প্রচার নিশ্চিত অপরাধ হিসেবেই দেখছে সরকার ও জনগন এবং তাই তো দেখার কথা। কিন্তু বার বার যারা প্রশ্নের জন্ম দেয় তখন কী করার থাকে। আর যারা বোঝেন না তখন দেখতে হয় নির্বোধের বোধ বিচার। সম্পাদক সাহেব তার বুদ্ধিদীপ্ততায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ও সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নকে যেমন মুদ্রার অন্যপিঠ দিয়ে দেখছেন তেমন মুদ্রার অন্যপিঠ দিয়ে দেখলে কিউবা বিপ্লবও পৃথিবীর অন্যতম বড় গণহত্যা। কমরেড সম্পাদক সাহেব নিশ্চিয়ই সে তথ্য জানেন।
(লেখক: মুহাম্মাদ মামুন শেখ, সাংবাদিক)
আপনার মতামত লিখুন :