• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৩৬ অপরাহ্ন

নির্ধারিত পরিমাণের অধিক খাদ্য মজুদের শাস্তি যাবজ্জীবন বা অনূর্ধ্ব ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড!!


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ১০, ২০২৩, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন / ৭২
নির্ধারিত পরিমাণের অধিক খাদ্য মজুদের শাস্তি যাবজ্জীবন বা অনূর্ধ্ব ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড!!

এম রাসেল সরকারঃ খাদ্য মজুদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করেন নতুন আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রস্তাবিত এই আইন অনুসারে, কোনো ব্যক্তি সরকার কর্তৃক প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণের অধিক পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য মজুদ করলে বা মজুদ সংক্রান্ত সরকারের কোনো নির্দেশনা অমান্য করলে সেটি হবে একটি অপরাধ। আর এ জন্য তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। মজুদদারির বিষয়ে এমন চরম বিধান রেখে ‘খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন ২০২৩’ আইন মন্ত্রিসভায় উঠছে আজ। এ-সংক্রান্ত বর্তমান আইনে তিন বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

প্রস্তাবিত আইনে উৎপাদন বা বিপণনসংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো অনুমোদিত জাতের খাদ্যশস্য থেকে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যকে ওই জাতের উপজাত পণ্য হিসেবে উল্লেখ না করে ভিন্ন বা কাল্পনিক নামে বিপণন করা অথবা খাদ্যদ্রব্যের মধ্য হতে কোনো স্বাভাবিক উপাদানকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে অপসারণ করে বা পরিবর্তন করে উৎপাদন করেন বা বিপণন করা হলে সেটি এই আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এ ছাড়া খাদ্যদ্রব্যের সাথে মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কৃত্রিম উপাদান মিশ্রণ করে উৎপাদন বা বিপণন করা এবং খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক ইস্যুকৃত খাদ্যশস্য ব্যবসার লাইসেন্স ছাড়া বা মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স দ্বারা কোনো ব্যবসা পরিচালনা বা লাইসেন্সে উল্লিখিত পরিমাণের অধিক পরিমাণ খাদ্যশস্য বিপণন করা হলে সেটিও এই আইনে হবে একটি অপরাধ। আর এসব অপরাধে অনূর্ধ্ব দুই বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

সরবরাহ সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি পুরনো খাদ্যদ্রব্য পলিমিং বা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের সাথে মিশ্রণ করে; সরকার কর্তৃক খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহকালে সরকারি গুদামে রক্ষিত খাদ্যদ্রব্য বৈধ বা অবৈধভাবে সংগ্রহ করে, দেশে উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্য বা সরকারি গুদামের পুরনো বা বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এরূপ চিহ্নযুক্ত খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ; আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে খাদ্যদ্রব্যের পরিমাণগত বা গুণগত পরিবর্তন করে অথবা অন্য কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে সরকারি গুদামে সরবরাহ করলে সেটি হবে একটি অপরাধ। এ অপরাধের জন্য অভিযুক্ত অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয়সংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়, কোনো ব্যক্তি খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক প্রদত্ত বিতরণকৃত সিল বা বিতরণ করা হয়েছে এরূপ চিহ্নযুক্ত সিল ছাড়া সরকারি গুদামের খাদ্যদ্রব্য ভর্তি বস্তা বা ব্যাগ বিতরণ, স্থানান্তর, ক্রয় বা বিক্রয় করলে সেটিও হবে একটি অপরাধ এবং এ জন্য অভিযুক্ত অনূর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।

বিভ্রান্তি সৃষ্টিসংক্রান্ত অপরাধ ও দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্যের উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন সম্পর্কিত কোনো মিথ্যা তথ্য বা বিবৃতি তৈরি, মুদ্রণ, প্রকাশ, প্রচার বা বিতরণ করলে তা হবে একটি অপরাধ এবং এ জন্য তিনি পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। আইনের এ ধারাটি আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যম বা সামাজিক গণমাধ্যমের ব্যাপারে প্রয়োগ করার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

কর্তব্য পালনে বিরত থাকা বা কর্তব্য পালনে বাধা প্রদানের বিষয়ে বলা হয়েছে, এই আইনের অধীন শ্রমিক, কর্মচারী, ঠিকাদার, মিল মালিক, ডিলার বা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত কোনো ব্যক্তি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন বা এতদ্সংক্রান্ত কোনো কর্মসম্পাদনে নিজে বিরত থাকলে বা সম্পৃক্ত কোনো ব্যক্তিকে তার কর্তব্য পালনে বিরত থাকতে বাধ্য বা প্ররোচিত করলে বা তাদের মধ্যে অসন্তোষ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে এক বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এই বিধান ধর্মঘট সীমিতকরণ বা নিষিদ্ধকরণের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে। সম্প্রতি এ ব্যাপারে বিশেষ আইন প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে।

এর আগে ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভা নীতিগতভাবে এই খসড়া আইনটির অনুমোদন দেয় এবং এটি আরো যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

২০২১ সালে মজুদদারির বিষয়ে আরো কঠোর হতে খাদ্য মজুদকারীর মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান করার প্রস্তাব দেয় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এ সময় গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে খাদ্য সচিব বলেন, খাদ্য মজুদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান বিশেষ ক্ষমতা আইন, ১৯৭৪-এ রয়েছে। এটি এখন প্রস্তাবিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।