• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৯ অপরাহ্ন

নরসিংদীতে অল্পসময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তার হলো মা ও ছেলে-মেয়ে হত্যার মূল আসামী


প্রকাশের সময় : মে ২২, ২০২২, ১০:৪৮ অপরাহ্ন / ২৮৪
নরসিংদীতে অল্পসময়ের ব্যবধানে গ্রেপ্তার হলো মা ও ছেলে-মেয়ে হত্যার মূল আসামী

রাজিব আহমেদ নরসিংদী জেলা প্রতিনিধিঃ পরকীয়া সম্পর্ক ও প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই নরসিংদীর বেলাবতে নিজ স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন গিয়াস উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। দিনভর নানা রহস্য থাকলেও বেলা বাড়তে থাকে আর আস্তে আস্তে রহস্যের জট খুলতে শুরু করে। হত্যাকান্ডের মূল হোতা গিয়াস উদ্দিন (৪১) কে আটকের পর স্ত্রী-সন্তানসহ একে একে তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরা ও ক্রিকেট ব্যাট জব্দ করে পুলিশ।

রোববার (২২ মে) সকালে বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রাম থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন, গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫), তার ছেলে রাব্বি শেখ (১২) ও মেয়ে রাকিবা (৭)। রবিবার সকালে বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামে একই পরিবারের তিনজন নিহতের ঘটনায় নরসিংদী জেলা পুলিশের পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআিই) সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। সেখানে একটি ঘরের মেঝেতে গিয়াসের স্ত্রী রহিমার রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে। অন্য একটি ঘরে বিছানার ওপর দুই সন্তানের মরদেহ পড়ে আছে। আটঘাট বেঁধে মাঠে নামে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। শুরু হয় তদন্ত।
পুলিশের জিজ্ঞেসাবাদে নিহতের স্বামী গিয়াস জানান, কাজের সুবাদে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে বাড়িতে রেখে শনিবার সন্ধ্যায় গাজীপুরে যান তিনি। এরইমধ্যে সকালে মোবাইল ফোনে স্ত্রী ও সন্তানদের মৃত্যুর খবর পান। পরে পুলিশ এসে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে। পিবিআই নরসিংদীর পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নান বলেন, তিনটি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ার পর নিহতের স্বজনরা কান্নাকাটি শুরু করেন। কিন্তু নিহতের স্বামী গিয়াসের মধ্যে তেমন কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তাই তার প্রতি আমাদের সন্দেহ ঘনীভূত হয়। পরে তার ব্যবহৃত মোবাইল ট্র্যাক করে ঘটনার সময় এলাকায় থাকার নিশ্চিত হয়ই আমরা। একইসঙ্গে পরকীয়ার বিষয়েও নিশ্চিত হয়ই আমরা। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে সে তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বাড়ির পাশের একটি খাল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরা এবং জঙ্গল থেকে তার দেখনোমতে রক্তমাখা ক্রিকেট ব্যাট উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও জানান, ঘাতক গিয়াস উদ্দিনের জবানবন্দি মতে, গাজীপুর যাওয়ার কথা বলে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলেও গভীর রাতে তিনি ফিরে আসেন। তার স্ত্রী ও সন্তানরা ঘুমিয়ে পড়লে রাত আড়াইটার দিকে গিয়াস ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে তার স্ত্রীকে উপর্যুপুরি পেটান। পরে তাকে মাটিতে ফেলে মাথায় ও বুকের মাঝখানে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন। স্ত্রীকে হত্যার পর পাশের ঘরে ঘুমন্ত ছেলেমেয়েকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। বাড়ির রাস্তা নিয়ে প্রতিবেশী রেনু মিয়াদের সঙ্গে গিয়াসের বিবাদ ছিল। তাই মূলত প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে এবং পরকীয়ার কারণেই ঠান্ডা মাথায় স্ত্রী সন্তানদের হত্যা করেন তিনি। শুধু তাই নয়, হত্যার পর আইনের চোখ ফাঁকি দিতে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও পিবিআইকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দুপুর পর্যন্ত বিভ্রান্ত করে রাখেন। গিয়াস পেশায় একজন রং মিস্ত্রি ও মাদকাসক্ত ছিলো। আটক হওয়ার আগে নিহত রহিমার স্বামী গিয়াস জানিয়েছেন, ১৫ দিন আগে বাড়ির পেছন থেকে একটি গাছ বিক্রি করেন তিনি। বাড়ির চারপাশ জুড়ে প্রতিবেশী রেনু মিয়ার জায়গা। এই গাছটি বাড়ির ওপর দিয়ে নিতে গেলে রেনু মিয়া বাধা দেন। এ নিয়ে তাদের সঙ্গে রেনু মিয়ার ঝগড়া হয়। ওই সময় রেনু মিয়া তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বামী।