• ঢাকা
  • শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার গড়ে তুলেছেন যাঁরা : চার বছর ধরে গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২২, ২০২২, ১০:৩৮ অপরাহ্ন / ৮৬
নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার গড়ে তুলেছেন যাঁরা : চার বছর ধরে গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া প্রায় চার বছর ধরে গোপনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। নতুন সদস্য সংগ্রহ করে চরাঞ্চল ও পাহাড়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছিল তারা। এ সংগঠনের লক্ষ্য ছিল সশস্ত্র হামলা চালানো। এ লক্ষ্যে তাদের সদস্য সংগ্রহের বিষয়টি জানাজানি হয় গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা থেকে আট কলেজ ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার পর। এসব তরুণের খোঁজ করতে গিয়ে র‍্যাব জানতে পারে, তাঁদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ‘হিজরতের’ নামে ঘর ছাড়া করা হয়েছে। এরপর ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে র‍্যাব এই জঙ্গি তৎপরতায় সংশ্লিষ্ট এবং জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ায় জড়িত অভিযোগে পাহাড়ের একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ সংগঠনের ৩ সদস্যসহ ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে। রাঙামাটির বিলাইছড়ির সাইজামপাড়া ও তৎসংলগ্ন বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাজার এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়ার সাত সদস্য এবং পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের আমির ও শুরা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ছয়জনের নাম জানা গেছে।

র‍্যাব জানায়, হরকাতুল জিহাদ, জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) এবং আনসার আল ইসলামের কিছু সদস্য মিলে ২০১৭ সালে নতুন করে উগ্রবাদী সংগঠনের কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৯ সালে জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নাম দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে। সংগঠনটির আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। তাঁর নেতৃত্বেই উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়া উগ্রবাদী এ সংগঠনে ছয় শুরা সদস্য রয়েছেন, যাঁরা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া দেখভাল এবং উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

শুরা সদস্য আবদুল্লাহ মাইমুন দাওয়াতি শাখার প্রধান, মাসকুর রহমান সামরিক শাখার প্রধান, মারুফ আহমেদ সামরিক শাখার দ্বিতীয় ব্যক্তি, মোশারফ হোসেন অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান, শামীম মাহফুজ প্রধান উপদেষ্টা ও প্রশিক্ষণের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ক এবং ভোলার শায়েখ আলেম বিভাগের প্রধান হিসেবে সংগঠনটিতে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের মধ্যে মারুফ আহমেদ ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা ও কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামি হাফেজ নাঈমের ছোট ভাই। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা শেষ করে হাঁস, মুরগি, গবাদিপশু ও মাছের খামার চালাতেন। তাঁদের মধ্যে শুধু মারুফ আহমেদ গ্রেপ্তার হয়েছেন। র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, বড় ভাইয়ের পরামর্শে জামায়াতুল আনসারের শুরা সদস্য মাসুকুর রহমানের মাধ্যমে উগ্রবাদী এ সংগঠনে যুক্ত হন। তিনি সিলেট অঞ্চলে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনাসহ ওই অঞ্চল থেকে নিরুদ্দেশ ব্যক্তিদের জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতেন।

র‍্যাবের তথ্যমতে, বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাদ্রাসা ও মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের কথা বলে চাঁদা তুলে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল নতুন জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া। এ ছাড়া ধর্মান্তরিত মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা অর্থও তাঁরা এ কাজে ব্যবহার করতেন।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের বলেন, নতুন জঙ্গি সংগঠনটি অস্ত্র চালনাসহ সশস্ত্র সংগ্রামের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গোপনে পরিচালনার জন্য বান্দরবান ও রাঙামাটির দুর্গম এলাকাকে বেছে নেয়। কেএনএফ নামক সশস্ত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বমের সঙ্গে ২০২১ সালে জামায়াতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে কেএনএফের ছত্রচ্ছায়ায় জামায়াতুল আনসারের সদস্যদের ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য তাঁরা চুক্তিবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী, কেএনএফকে প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়া হতো এবং কেএনএফের সদস্যদের খাবারের খরচও দিত জামায়াতুল আনসার।

নতুন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়ে গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা থেকে আট কলেজছাত্র নিখোঁজ হন। কিছুদিন পর তাঁদের একজন ফিরে এলে এই তরুণদের জঙ্গিবাদে জড়িয়ে ‘হিজরতের’ নামে ঘরছাড়ার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এর কয়েক দিন পর কুমিল্লা শহরের কুবা মসজিদের ইমাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহ আত্মগোপনে চলে যান। এরপর ৫ অক্টোবর সাতজনকে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁদের মধ্যে কুমিল্লার দুজনসহ নিখোঁজ চার তরুণ ছিলেন। বাকি তিনজন জঙ্গি সংগঠক ও আশ্রয়দাতা। এরপর ৯ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় আরও পাঁচজনকে। পরদিন ১০ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ৩৮ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করে এবং পাহাড়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালানোর কথা জানায়।