নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ রাজধানীতে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে এ খাতকে বাঁচাতে চালু করা হয়েছিলো ঢাকা নগর পরিবহন। ঢাকা নগর পরিবহনে বাস নামিয়ে লোকসানে পড়ে বাস মালিকরা। তাই এ সার্ভিস থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয় তারা।
এখন বিআরটিসির কয়েকটি বাস চলছে ভর্তুকি দিয়ে। বেসরকারি পরিবহনের বাস চলছে একই রুটে নিজেদের মতো করে। ২০২১ সালের ২৬ ডিসেম্বর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর পর্যন্ত ঢাকা নগর পরিবহন নামে প্রথম বাস সেবা চালু করা হয়েছিল। পরে আরও দুটি রুটে এই সেবা চালু হয়। সেই সময়ে চালু হওয়া সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেড়শ বাস থেকে কমতে কমতে এখন বিআরটিসির কয়েকটি বাস চলছে।
আগে বিআরটিসির মোহাম্মদপুর বাস ডিপো ও গাবতলী বাস ডিপো থেকে নগর পরিবহনের বাস চলাচল করত। দেখা গেছে, এ দুটি ডিপো লোকসান গুনেছে। গাবতলী ডিপো থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৮ হাজার ৮৭০ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৮৭ লাখ ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা। লোকসান হয়েছে ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪৮০ টাকা। মোহাম্মদপুর ডিপো থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৬৪ লাখ ৩ হাজার ১৬৮ টাকা। ব্যয় হয়েছে ১৩ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৬ টাকা। লোকসান হয়েছে ৪২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৬ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে চরাচলরত গণপরিবহন খাতে নেই কোন শৃঙ্খলা। বিশৃঙ্খল ভাবে চলছে গণপরিবহন এটি যেন পুরোনো অভ্যাস। গণপরিবহনকে শৃঙ্খলায় আনতে এবার কড়া পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ। একই সাথে সংস্থাটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ঢাকা নগর পরিবহনের সেবার মধ্যে এসি বাসও সংযুক্ত হচ্ছে। আর এসি বাসের ভাড়ার তালিকা না থাকায় সেটাও দ্রুত তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ই-টিকেটিং ব্যবস্থা, পর্যায়ক্রমে র্যাপিড পাস চালু করা, বাসে অন-বোর্ড ক্যামেরা, ড্যাশক্যাম ও জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হবে।
ঢাকা নগর পরিবহনকে কার্যকর করতেও পদক্ষেপ নিচ্ছে ডিটিসিএ। বেসরকারি পরিবহন মালিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সাড়া পাচ্ছে সংস্থাটি। বাস পরিচালনায় আগ্রহী ট্রাস্ট ট্রান্সপোর্ট, বোরাক পরিবহন, এইচআর ট্রান্সপোট নগর পরিববহের অধীনে বাস চালাতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
ডিটিসিএ’র সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসির মাধ্যমে ১১০ টিরও বেশি বাস স্টপ তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় আরো বাস স্টপের স্থান চিহ্নিত করে নির্মাণ করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয়তা যাচাই পূর্বক নতুন বাস স্টপ নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা হবে এবং দ্রুত নির্মাণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে চালক ও সহায়কদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
বোরাক পরিবহনের পরিচালক হাসান আহমেদ বলেন, আমার ২৯টা এসি বাস এখন রুপপুর পারিমানবিক কেন্দ্রে চলে। বাস গুলোর বয়স ২ থেকে ৩ বছর। এখন আমাকে যদি অনুমতি দেওয়া হয় এক সপ্তাহের মধ্যে ৩০টা বাস সরবরাহ করতে পারবো। আমি হেমায়েতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ চলার অনুমতি চেয়েছি। এখানে ৭০টি গাড়ি প্রয়োজন হবে, ৩০টি এসি ও ৪০টি নন-এসি বাস লাগবে। রুটটি লম্বা হওয়ার কারণে অনেক যাত্রীও পাওয়া যাবে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, ডিটিসিএ আগে থেকেই এসব নিয়ে অনেক পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তারা কোনোটিতেই সফল হতে পারেনি। নগর পরিবহন ঢেলে সাজানো উচিত। কিন্তু এটার অনেক সমস্যা আছে। বেসরকারি মালিকানার গাড়ি গুলোতে দায়দেনা আছে। এই গাড়িগুলো সর্বপ্রথম একত্রিত করতে হবে। নইলে এই গাড়িগুলোর দায় কে নেবে? যে যে রুট দিবে ওই রুটে যেসব গাড়ি আছে সেগুলো একত্রিত করার মতো হলে সেটা করবে। অন্যথায় সরকার এই গাড়িগুলো কিনে নিতে পারে বা রিপ্লেস করতে পারে। এই ব্যবস্থা না করে এলোপাতাড়ি রুট করে দেওয়া হলে আরও যানজট হবে, আরও সমস্যা হবে।
বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, বাসের ভাড়ার তালিকা সংশোধন বা পুনঃনিরধারন করতে হবে। আর ভাড়া আদায় শৃঙ্খলায় আনতে ১২০টি পজ মেশিন সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরমধ্যে ৩০টি পজ মেশিন এরই মধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে। সংগৃহীত পজমেশিন দিয়ে একটি রুটে চালানো সম্ভব আর বাকি ৯০টি সংগ্রহ করা হলে আরও দুইটি রুটে চালানো সম্ভব হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তিনি আরো বলেন, নতুন রুট চলার মধ্যেই আমরা এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে ফেলবো। ধারণা করছি এসি বাসের ভাড়া কিলোমিটার প্রতি ৩ দশমিক ১০ টাকা থেকে ৩ দশমিক ২০ টাকা হতে পারে।
ডিটিসিএর নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার বলেন, বিগত সময়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় পাইলটিং কার্যক্রমটি সফলতা পায়নি। দুটি রুটে এখনও বিআরটিসি বাস পরিচালনা করছে। তবে অবৈধ বাসের দৌরাত্ম্যে তারা আশানুরূপ সেবা প্রদান করতে পারেনি। গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। নতুন বাসগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে। ই-টিকেটিং ব্যবস্থা, পর্যায়ক্রমে র্যাপিড পাস চালু করা, বাসে অন-বোর্ড ক্যামেরা, ড্যাশক্যাম ও জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।