হাবিবুর রহমান হাবিব,নওগাঁঃ নওগাঁয় অসুস্থ কিডনি রোগে আক্রান্ত সন্তানকে খুনের মামলায় সন্ধেহ মুলক ভাবে ফাঁসানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন অসহায় একমাত্র সন্তানের পিতা-মাতা মোঃ গোলাম নাবিদ সনেট ও তার স্ত্রী নাছরিন সুলতানা। তার সঙ্গে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধিদের বিচারও চান তাহারা।
১১ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংবাদিক ফোরাম নওগাঁ জেলা শাখায় তাহারা উপস্থিত হয়ে সন্ধেহ আসামীর বাবা মোঃ গোলাম নাবিদ সনেট লিখিত পাঠ করেন।
তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, তাদের বাড়ী চকদেব (সরিষাহাটির মোড়) মহিলা কলেজ পাড়া নওগাঁ, সদর নওগাঁ। পার-নওগাঁ পানি উন্নয়নের পিছনে খলিফা পাড়ায় বাড়ী, মোঃ আব্দুস সোবহানের সাথে তাদের পারিবারিক ভাবে একটি সম্পর্ক আছে। গত ১৮ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে বেলা আড়াইটার সময় তার ছেলে মোঃ গোলাম শাফির ফোনে কল করে জানায়, তার ছেলে নাহিন গত ১৬ডিসেম্বর সকাল ১১টা থেকে কোন খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। সে আরো বলে ফেইসবুকে দেখেছে, নওগাঁ সদর থানায় একটি অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার করেছে, দেখুন ওটা কার লাশ। তিনি ব্যাস্ত থাকায়, অন্যের মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ঐ লাশের বয়স ৩৫/৪০ হবে তাই সোবহানকে জানান, তার ছেলে নাহিন নাও হতে পারে।
পরবর্তীতে রাতে সোবহান তাকে ফোন করে জানায়, সেটা তার ছেলের লাশ এবং মৃত নাহিনের মাকে রাজশাহী থেকে আনতে যেতে হবে বলে গাড়ী নিয়ে থানায় যেতে বলে। থানায় গিয়ে জানতে পারেন,মৃত নাহিনের চোখ, উপড়ে ফেলেছে এবং লিঙ্গও অর্ধেক কেটে নিয়েছে। সোবহান ওসিকে জানান, তার মৃত ছেলের স্ত্রী হাবিবা এঘটনায় জড়িত থাকতে পারে তখন পুলিশ হাবিবাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এবং জিজ্ঞেসাবাদ করেন। এরপর তার ছেলে গোলাম শাফিকে দেখিয়ে বলেন, সে এঘটনায় জড়িত ছিলো কি-না, তখন হাবিবা জানায়, না, সে ছিলো না। তবে ৭/৮ মাস পূর্বে একটা গোন্ডগোল হয়েছিলো। ওসি সাহেব তার ছেলের সাথে মৃত নাহিনের কেমন সম্পর্ক ছিলো তা লিখিত ভাবে লিখে দিতে বলেন এবং তার ছেলে লিখে দেয়। রাজশাহী থেকে খবর পেয়ে সোবহানের স্ত্রী ও মেয়ে সন্তান সিএনজি যোগে থানায় আসেন। পরবর্তীতে তারা সকলেই বাড়ী চলে যায়।
পরেরদিন ১৯ডিসেম্বর গোলাম নাবিদ সনেটের ছেলে গোলাম শাফি ও ভাতিজা গোলাম শিফাত মৃত নাহিনে দেশের বাড়ীতে বাদ আছর, জানাযায় শরিক হয়ে,কবর দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে পুলিশ তাদের আটক করে প্রথমে রাণীনগর নিয়ে যায় পরবর্তীতে নওগাঁ সদর থানায় নিয়ে যায়। রাতে ফোনে জানতে পেরে থানায় গিয়ে দেখেন, তার ছেলে আছে, পুলিশদের কাছ থেকে জানতে পারেন, তার ছেলের কোন দোষ বা কিছু নেই কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহ মুলক ভাবে রাখা হয়েছে এবং তার ভাতিজা অসুস্থ থাকায় তাকে বাড়ীতে পাঠিয়েছে। পরেরদিন ২০ডিসেম্বর থানায় গিয়ে দেখেন তার সন্তানকে সন্ধেহ মুলক উক্ত মামলায় ৩নম্বর আসামী করে কোর্টে চালান দেওয়া হয়েছে এবং মৃত নাহিনের স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়েছেন।
অন্যদিকে মৃত নহিনের বাবা সোবহান সকল সন্দেহ আসামীর পিতা-মাতাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে,টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে এবং ১নং সন্ধেহ ভাজন আসামীর অবিভাবকের কাছ থেকে,রিমান্ড থেকে বাঁচানো ও মামলা থেকে অব্যহতির কথা বলে ২০ হাজার টাকাও নিয়েছে বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, তার এ্যাডভোকেট সাহেব কাগজ পত্র দেখে অবাক হয়েছেন। তদন্ত অফিসার কোর্টে রিমান্ড চাওয়ার সময় লিখেছেন, সন্ধেহ ভাজন আসামী আর রিমান্ড শেষে কোর্টে প্রেরণের কাগজে লিখেছেন এজাহার ভুক্ত আসামী, সেখানে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীও নেই, এটা কি করে সম্ভব।
তিনি ও তার স্ত্রী নাছরিন সুলতানা বলেন, তাদের একটি মাত্র অসুস্থ সন্তান, সে এখন ছাত্র মানুষ, এবার ঢাকা কর্মাস কলেজে অনার্স করছে এবং কিডনি রোগে অাক্রান্ত। কয়েক মাস পর পর তাকে ডায়লোসিস করতে হয়। আমরা বাবা-মা হয়ে তার সুচিকিৎসা করতে পারছি না। আমি এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রসাশনের কাছে এবং আপনাদের কাছে আকুল আবেদন জানাই, সত্যিকারে প্রকৃত হত্যাকারীর সঠিক বিচার হোক কিন্তু আমার নিরপরাধ,নির্দোষ অসুস্থ একটিমাত্র ছেলেকে এ মামলা থেকে অব্যহতি প্রার্থনা করছি। এবং তার সঙ্গে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকারীদের বিচারও চাচ্ছি।
এ বিষয়ে মামলাটির তদন্ত অফিসার সাব ইন্সপেক্টর কৃষ্ণপদ এর কাছে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, ৩জন সন্ধেহভাজন আসামীদের আটক করে রিমান্ডে নিয়ে কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে যাদের সাথে সমস্যা ছিলো মৃত নাহিনের। এবং তদন্ত ডিজিটাল পদ্ধতিতেও তদন্ত চলছে। সিডি কপি পেলে জানা যাবে বলে জানান।
আপনার মতামত লিখুন :