মনিরুজ্জামান অপূর্ব,ঢাকা : শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি বলেন, দেশে বেকার যুব সমাজের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত। এ খাতের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে এসএমই ফাউন্ডেশন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় সারা দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের পণ্য উৎপাদন, বাজার সংযোগ সৃষ্টি এবং দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসব উদ্যোগের ফলে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎপাদিত পণ্য আজ সারা বিশ্বে রপ্তানি হচ্ছে। কোভিড-১৯ এর মধ্যেও দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ও গ্রামে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা নিজেরাই নিজেদের কর্মসংস্থান তৈরি করছে। এ সকল উদ্যোক্তাদের জন্য দরকার দক্ষতা উন্নয়ন। এসএমই ফাউন্ডেশনের দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা তৈরির প্রয়াস আরো জোরদার করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ফাউন্ডেশন (এসএমই ফাউন্ডেশন) এবং The United Nations Industrial Development Organization (UNIDO) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আন্তর্জাতিক ‘এমএসএমই দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আজ ভার্চ্যুয়ালি এসব কথা বলেন। এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোঃ মাসুদুর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাননীয় শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ আখতার হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা এবং এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট মো: জসিম উদ্দিন। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেন ইউএনআইডিও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক প্রতিনিধি ভান বার্কেল রেনে (Mr. Van Berkel Rene)। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ মফিজুর রহমান।
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এমপি বলেন, অর্থনীতিতে কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয় অর্থনীতিতে এখাতের অবদান আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সিএমএসএমই খাতের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। এসএমই নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী ২০২৪ সালের এসএমই খাতের অবদান ৩২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনে এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখতে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান শিল্প প্রতিমন্ত্রী।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের তরুণ ও যুব সমাজ এখন চাকরি খুঁজছে না, নিজেরাই চাকরি দেয়ার ব্যবস্থা করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোক্তা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রত্যন্ত দ্বীপ জেলা ভোলা থেকে ২০১০ সালে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলেছিলেন। বর্তমানে ৭ হাজার ডিজিটাল সেন্টারে ১৩ হাজার উদ্যোক্তা কাজ করছে। আইসিটি খাতে ২০২৫ সালের মধ্যে ৩০ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান বলেন, এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন, অর্থায়ন, বাজার সংযোগ সৃষ্টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় সাফল্যের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। সরকারের দ্বিতীয় দফা প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে বরাদ্দকৃত ১০০ কোটি টাকা ২৪ জুনের মধ্যে বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন। কোভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার বৃদ্ধিতে উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
উল্লেখ্য, ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২১’ উদযাপন উপলক্ষে প্রথমবারের মতো এসএমই ফাউন্ডেশন এবং UNIDO’র যৌথ উদ্যোগে ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এবারের ‘আন্তর্জাতিক এমএসএমই দিবস ২০২১’ এর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘MSMEs: Key to an inclusive and sustainable recovery’। শোভন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতকে আরো এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে জাতিসংঘ ২৭ জুনকে ‘এমএসএমই দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে। সেই হিসাবে এ বছর সারা বিশ্বে পঞ্চমবারের মত দিবসটি পালিত হচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশন প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ‘এমএসএমই দিবস’ উদযাপনের উদ্যোগ নেয়।
আপনার মতামত লিখুন :