• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন

দুর্বল বেড়িবাঁধ এবং মাঠের ফসল নিয়ে মোচার আতঙ্কে উপকূলবাসী


প্রকাশের সময় : মে ১১, ২০২৩, ৩:৫৯ অপরাহ্ন / ১৫
দুর্বল বেড়িবাঁধ এবং মাঠের ফসল নিয়ে মোচার আতঙ্কে উপকূলবাসী

বিশেষ প্রতিবেদকঃ ঘূর্ণিঝড় মোচা নিয়ে শঙ্কিত উপকূলবাসী। দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে তারা মাঠের ফসল এবং ঘেরের মাছ হারানোর আশঙ্কায় ভুগছে। আবহওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে মোচা আগামী সপ্তাহে ভূভাগে আছড়ে পড়বে। তবে দেশের ঠিক কোন অংশ দিয়ে মোচা অতিক্রম করতে পারে তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।। তারপরও সাধারণ মানুষের মনে প্রবল জলোচ্ছাস ও প্রচন্ড ঝড়ে ঘরবাড়ি ভেঙে গৃহহীন হওয়ার আতঙ্ক বিরাজ করছে। উপকূলবাসী এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে ষাটের দশকে নির্মিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা উপকূলীয় অঞ্চলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধই খুব নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ২০০৭ সালে সিডর ও ২০০৯ সালে ঘুর্ণিঝড় আইলার আঘাতে খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার ৩৮টি পোল্ডারের ১ হাজার ৬৫১ কিলোমিটার বেঁড়িবাধের মধ্যে ৬৮৪ কিলোমিটার বিধ্বস্ত হয়। এ মুহূর্তে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সাতক্ষীরার প্রায় ৬২ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ। খুলনায় ঝুঁকিতে রয়েছে ৩৩ কিলোমিটার এবং বাগেরহাটে ঝুঁকিতে রয়েছে ৩০ কিলোমিটার বাঁধ। নদণ্ডনদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে প্রায়শঃ উপকূলীয় জনপদগুলো প্লাবিত হয়। ভেসে যায় মাছের ঘের, জমির ফসল। গৃহহীন হয় হাজার হাজার মানুষ। সম্প্রতি সেনাবাহিনী দু’বছর মেয়াদী একটি প্রকল্প শেষ করেছে। প্রকল্পের আওতায় সাইক্লোন আম্ফানের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার ১১ দশমিক ৫৩ কি.মি. বাঁধ সংস্কার ও পুননির্মাণ করা হয়েছে। গত বছর ৩০ মে খুলনার শেষ জনপদ কয়রায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বাঁধটি হস্তান্তর করা হয়। এই বাঁধ পুননির্মাণের ফলে দুটি জেলার তিনটি উপজেলার প্রায় ২ লাখ মানুষ পানি মুক্ত হয়েছে। এছাড়াও তাদের ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও মাছের ঘের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তবে অন্যান্য স্থানে বাঁধ দুর্বল থাকায় উপকূল জুড়ে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। সূত্র জানায়, উপকূলের বাঁধ মেরামতে গত দুই যুগে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও তেমন কাজের কাজ হয়নি। বরং সংস্কারের সময় ব্যাপক লুটপাট এবং পরিকল্পিতভাবে বাঁধ সংস্কার না করায় এ অবস্থা হয়েছে। তাছাড়া চিংড়ি নির্ভর অর্থনীতির অঞ্চল খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার অনেক স্থানে বাঁধ কেটে চিংড়ি ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করানোর কারণেও বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। এমন দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে উপকূলবাসী। সূত্র আরো জানায়, ঘুর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের পর খুলনার কয়রা উপজেলার ২১টি জায়গায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হয়। পাশাপাশি ২০ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধে মাটি ও বালুর বস্তা ফেলে সংস্কার করা হয়। বর্তমানে সাত কিলোমিটারের বেশি সংস্কার কাজ চলমান। তবে এখনো ৯ থেকে ১০ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে আছে। বর্তমানে উপজেলার ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রা রিং বাঁধ, ঘাটাখালী, হরিণখোলা, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মঠবাড়িয়া, ২ নম্বর কয়রা, হোগলা, গাজীপাড়া, গোলখালী, হাজতখালী, জোড়শিং ও মহেশপুর এলাকার প্রায় ১২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে নদীতে পানি বাড়লে ওই এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকতে পারে। এদিকে মাঠের ফসল ও ঘেরের মাছ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের মানুষ। এ মুহূর্তে মাঠে ধান কাঁটার কাজ প্রায় ৭০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি ৩০ শতাংশ ধান কাটতে দু’সপ্তাহ মতো সময় লাগতে পারে। যদি এর মধ্যে ঝড় আঘাত হানে তাহলে কৃষকদের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। সেজন্যই দ্রুত ধান কাঁটার কাজ চলছে। শুধু ধান নয়, মাছের ঘের নিয়েও আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলীয় অঞ্চলে। উপকূলীয় ৩ জেলায় লক্ষাধিক চিংড়ি ও অন্যান্য মাছের ঘের রয়েছে। এ অঞ্চলের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করেছে মাছ চাষ। দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে ঘের প্লাবিত হলে মাছ সব ভেসে যাবে। আর মাছ ভেসে গেলে কয়েক লাখ ঘের ব্যবসায়ীকে পথে বসতে হবে। অন্যদিকে যে কোনো ঘূর্ণিঝড় উপকূলের মানুষের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে দেয়। সর্বস্ব হারিয়ে তাদের পথে বসতে হয়। প্রাণহানি ঘটে। গবাদি পশু হারিয়ে কৃষককে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সুন্দরবন এবং সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি করা, বেড়িবাঁধের যথাযথ সংস্কার এবং দুর্যোগ পরবর্তী সাধারণ মানুষের দুর্দশা দূর করতে সরকারের আরো বেশি আন্তরিকতা প্রত্যাশা করে উপকূলের বাসিন্দারা।