নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে অর্থ নয়-ছয়ের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। বলা হয়, প্রকল্প অনুমোদনের আগেই দুর্নীতির শুরু হয়। গত বছরের ৯ অক্টোবর প্রকাশিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ টিআইবি’র এক প্রতিবেদনেও সেই চিত্র উঠে এসেছে।
সওজের উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩-৪০ শতাংশ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। টিআইবি’র ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সওজ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সর্বনিম্ন ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে।
টিআইবি জানিয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নে জবাবদিহির ঘাটতি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা সরাসরি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আনুকূল্য পাওয়ায় নিম্নমানের কাজ করা বা কয়েকজন ঠিকাদারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দৃষ্টান্ত নেই।
এমন দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধেও রয়েছে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। এসব অভিযোগের তালিকায় রয়েছে- নিয়োগ ও পোস্টিং বাণিজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অর্থপাচার, বাড়ি কেনা, সন্তানদের আমেরিকায় পড়াশোনা করানোসহ রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগও। নিজের লোক পদায়নে সৈয়দ মাইনুলের ফিরিস্তি অনেক বড়। তার বিরুদ্ধে ঢাকা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী পদে সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদের পিএস অশোক বাবুর ভাগ্নী জামাই রিতেশ বড়ুয়াকে নিয়োগ দেয়ার, শেখ পরিবারের সদস্য লিটন চৌধুরীর ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আব্দুল হামিদকে নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ দেয়া, মুন্সিগঞ্জের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিন রেজাকে ৫ আগষ্টের পর মাস্টার্স করতে দক্ষিণ কোরিয়াতে পাঠানোর অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি বলয় তৈরি এবং বিপ্লবী সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে এত অভিযোগ থাকার পরও স্বপদে এখনো বহাল আছেন তিনি। বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত এই সৈয়দ মাইনুল হাসান ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
তিনি বুয়েটে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য এবং আইইবি -২২ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের প্যানেলে নির্বাচন করে বিনা ভোটে সেন্ট্রাল কাউন্সিল মেম্বার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৯৬’ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সৈয়দ মাইনুল হাসান ১৮তম বিসিএসে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৯৯ সালের ২৫ জানুয়ারী সওজ অধিদপ্তরে সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে যোগ দেন। ২০২৩ সালের ২ জুলাই প্রধান প্রকৌশলী পদে নিযুক্ত হন।
সৈয়দ মাইনুল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং তদন্তের আগে তিনি যেনো দেশত্যাগ করতে না পারেন সেই ব্যবস্থা করতে জোর দাবি জানিয়েছেন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র জনতার প্রতিনিধিরা।
এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে সৈয়দ মাইনুল হাসানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :