নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনাঃ খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি ও বর্তমান পুলিশের এডিসি এস এম কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা হয়েছে। সোমবার দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার বাদী দুদক খুলনার সহকারী পরিচালক রকিবুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে দুই ছাত্রদল নেতাকে আটক করে সদর থানার দ্বিতীয় তলায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।
মামলায় সম্পদ বিবরণীতে ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার তথ্য গোপন এবং ১ কোটি ২ লাখ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
এজাহারে বলা হয়েছে, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার শিবনগর গ্রামের মৃত আলহাজ্ব আব্দুল মান্নান শেখের ছেলে এবং খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (তৎকালীন সহকারী পুলিশ কমিশনার, দৌলতপুর অঞ্চল, কেএমপি, খুলনা) এস এম কামরুজ্জামান দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনপূর্বক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান এবং ১ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮২ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করে নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ১৪৯ টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ২ লাখ ৪৯ হাজার ৬৯৭ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ সর্বমোট ২ কোটি ৯০ লাখ ২১ হাজার ৮৪৬ টাকার সম্পদ প্রদর্শন করেন। কিন্তু অনুসন্ধানকালে এস এম কামরুজ্জামানের নামে ২ কোটি ৭ লাখ ১২ হাজার ১৪৯ টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ২ হাজার ৬৯ হাজার ৬৯৭ টাকার অস্থাবরসহ সর্বমোট ৩ কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার ৮৪৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের স্থাবর/অস্থাবর সম্পদের তথ্য গোপনপূর্বক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য প্রদান করতঃ দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, সম্পদ বিবরণী দাখিলকালে আসামি এস এম কামরুজ্জামান এর ২ কোটি ৭ লাখ ১২ হাজার ১৪৯ টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬৯৭ টাকার অস্থাবরসহ সর্বমোট ৩ কোটি ৯ লাখ ৮১ হাজার ৮৪৬ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। উক্ত সময়ে তার ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন ও রূপালী ব্যাংকে ৪৫ লাখ টাকার দায় ছিল। সুতরাং দায় বাদে তার নীট সম্পদের মূল্য ২ কোটি ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ৮৪৬ টাকা। তার অতীত জীবনের সঞ্চয়, বেতন-ভাতার আয়, বাড়ি-ভাড়ার আয়, মাইক্রো-বাস ভাড়া হতে আয়, সঞ্চয়পত্রের সুদ প্রাপ্তি ও জমি বিক্রয় বাবদ মূলধনী আয় হতে মোট গ্রহণযোগ্য আয়ের পরিমাণ ২ কোটি ২৪ লাখ ৮১ হাজার ৭১৮ টাকা।
তিনি পারিবারিক ব্যয় ও ঋণ পরিশোধ বাবদ ৬২ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৪ টাকা ব্যয় করেন। অর্থাৎ তার নীট আয়/সঞ্চয়ের পরিমাণ ১ কোটি ৬২ লাখ ৪৯ হাজার ২৬৪ টাকা। ফলে এস এম কামরুজ্জামানের জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ দাড়ায় ১ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮২ টাকা।
সুতরাং এস এম কামরুজ্জামান বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগে চাকরি করার সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৮২ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজ মালিকানা ও ভোগ দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :