• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩১ অপরাহ্ন

ঢাকা মেট্রোপলিটনের ১৪ থানা ভাড়া ভবনে, জব্দ গাড়ি-মালামাল রাখার জায়গা নেই


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১২, ২০২৩, ৯:৩৬ পূর্বাহ্ন / ৮৭
ঢাকা মেট্রোপলিটনের ১৪ থানা ভাড়া ভবনে, জব্দ গাড়ি-মালামাল রাখার জায়গা নেই

মোঃ রাসেল সরকার,ঢাকাঃ বাংলাদেশ পুলিশের সবচেয়ে বড় ইউনিট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। নাগরিক জীবনে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে পুলিশের এ ইউনিট। ডিএমপিতে বর্তমানে ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত। তারা সরাসরি নাগরিক সেবা দেন। ডিএমপির আওতায় রাজধানীর ৫০টি থানা। এর মধ্যে ১৪ থানার কোনো নিজস্ব ভবন নেই। ভাড়া করা ভবনে চলছে পুলিশের কার্যক্রম। এ সব থানায় কর্মকর্তাদের থাকার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই। কর্ম পরিবেশও উপযুক্ত নয়। ফলে নাগরিক সেবা নিশ্চিতে থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের হিমশিম অবস্থা।

পুলিশ বলছে, ভাড়া করা ভবনে থানার কার্যক্রম কোনো মতে চালিয়ে নেওয়া গেলেও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডাম্পিং নিয়ে। থানার ভেতরে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় জব্দ গাড়ি ও মালামাল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতও যত্রতত্র পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে যায়।

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ছয় হাজার জনবল ও ১২ থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ডিএমপি। ২০০৬ সালে থানার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩টি। বর্তমানে ৫০ থানায় ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কর্মরত। ডিএমপিতে দায়িত্ব পালন করছেন একজন কমিশনার, ছয়জন অতিরিক্ত কমিশনার, ১১ জন যুগ্ম কমিশনার, ৪২ জন উপ-কমিশনার ও ৭৩ জন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। ২৪ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকা ঢাকা মহানগরীর নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে দৈনিক আট হাজার পুলিশ সদস্য রাত জেগে দায়িত্ব পালন করেন। থানাগুলোতে জনসাধারণের জন্য ২৪ ঘণ্টায় দায়িত্বে থাকে পুলিশ।

তবে ডিএমপির ৫০টি থানার মধ্যে এখনো নিজস্ব ভবন নেই ডিএমপির ১৪ থানার। থানাগুলো হলো, কামরাঙ্গীরচর, আদাবর, ভাষানটেক, উত্তরা পশ্চিম, শাহআলী, কদমতলী, দারুস সালাম, বংশাল, কলাবাগান, মুগদা, রূপনগর, বাড্ডা, হাতিরঝিল ও রমনা। এ সব থানার কার্যক্রম চলছে ভাড়া করা ভবনে। কোনো কোনো থানায় ৪০/৪৫ জন এসআই ও এএসএসআইয়ের জন্য মাত্র দুটি টেবিল বরাদ্দ। ফলে মামলার তদন্ত থেকে শুরু করে সব কাজে চলছে ধীরগতি।

উত্তরা পশ্চিম থানায় সরেজমিনে দেখা গেছে, রাস্তার পাশেই থানার ভবন। ভবনটি ভাড়া নিয়ে থানার কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে সেখানে গাড়ি বা জব্দ মালামাল রাখার কোনো জায়গা নেই। ভবনের সামনে একেবারে রাস্তা ঘেঁষে রাখা হয়েছে সরকারি গাড়ি। ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, পুরোপুরি আবাসিক ভবনের আদলে ভবনটি বানানো। দ্বিতীয় তলায় কর্মকর্তাদের দাপ্তরিক কক্ষ। তৃতীয় তলায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), পরিদর্শক (তদন্ত) ও অভিযানকারীর দপ্তর। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে, কোনো বাসার দরজা বন্ধ থাকা একটি কক্ষ। ভবনটির সব গুলো কক্ষই এমন। শুধু উত্তরা পশ্চিম থানা নয়, ডিএমপির ১৪টি থানার অবস্থা প্রায় একই রকম।

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মাসুদ আলম বলেন, থানার কার্যক্রম মোটামুটি চালিয়ে নেওয়া যায়। তবে নিজস্ব ভবন থাকলে থানার পরিসরটা বড় হতো। গাড়ি রাখার কোনো জায়গা নেই। জব্দ গাড়ি ও মালামাল রাখারও জায়গা নেই। একেবারে রাস্তায় এসব রাখতে হয়।

ভাড়া ভবনে কাজ চলছে বংশাল থানারও। এ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, কর্মকর্তাদের থাকার জায়গা নেই। অফিসের জন্যও পর্যাপ্ত জায়গা নেই। উপ-পরিদর্শক (এসআই) ও সহকারী উপ-পরিদর্শকদের (এএসআই) বসার পর্যাপ্ত টেবিল নেই। ৪৫জন এসআই ও এএসআইয়ের বসার জন্য মাত্র দুটি টেবিল রয়েছে। পরিদর্শকদের দু’জনের কক্ষে নেই বাথরুম। সব অফিস কর্মকর্তার জন্য একটি মাত্র বাথরুম। চাপাচাপি করে কাজ করতে হয়। ফলে যতটা সহজ ভাবে কাজ গুলো করতে পারতাম, তা করতে পারছি না।

ভাড়া ভবনের থানার কাজ চালাতে গিয়ে গাড়ি বা জব্দ মালামাল রাখতে বিপাকে পড়েন থানার কর্মকর্তারা। জায়গা সংকট থাকায় নিজেদের সমস্যার বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকারি নিজস্ব ভবন থাকলে সব কাজ সুশৃঙ্খল ভাবে করা যায়। ভাড়া ভবনে জায়গা কম। অনেক সুযোগ-সুবিধা নেই। ফলে কাজে ধীরগতি। যে সব গাড়ি জব্দ করা হয় সেগুলো জায়গার অভাবে থানায় রাখা যায় না। এ থানার জব্দ গাড়ি গুলো নিয়ে রাখতে হচ্ছে অন্য থানায়, যেখানে ডাম্পিং রয়েছে।

পুলিশকে যুগোপযোগী, দক্ষ ও জনবান্ধব বাহিনীতে উন্নীত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে যুক্ত ডায়নামিক রেসপন্স ইন্টিলিজেন্ট মনিটরিং সিস্টেম (ডিআরআইএমএস) ও সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ (সিআইএমএস) নানা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ডিএমপির সাফল্য বিশ্ব জুড়ে প্রশংসিত হয়েছে।

জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং, বিট পুলিশিং ও উঠান বৈঠকের মতো সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে নাগরিক সেবা দিতে যারা সরাসরি কাজ করেন, অনেক ক্ষেত্রে তাদের কাজের পরিবেশ নেই। বিশ্বের অন্য দেশের মতো সেই পরিবেশ রাজধানীতে তৈরি করাও সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, থানার জন্য মানুষ ভাড়া দিতে চায় না। থানার অফিস বারবার পরিবর্তন করা যায় না। অনেকটা স্থায়ী অফিসের মতো হয়ে যায়। কলাবাগানে পুলিশের কেনা ১৭ কাঠা জমি দখল নিয়ে জনসাধারণ আন্দোলন করলো। থানার জন্য নিজস্ব ভবন করতে জনগণকেই সহযোগিতা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, যে এলাকায় থানা রয়েছে সেই এলাকায় সরকারি অর্থায়নে জায়গা কিনে ভবন করার। সেটা হবেও হয়তো। কিন্তু বড় সমস্যা হলো জায়গা পাওয়া নিয়ে। থানার বিষয়টা যেমনই হোক ডাম্পিংয়ের বিষয়টি আরও ভয়াবহ। থানার সামনে যেভাবে গাড়ি রাখা হয়, এটা কোনো সভ্য দেশের সিস্টেম হতে পারে না। বিদেশে বিশাল এলাকা জুড়ে পুলিশ স্টেশন থাকে। একটা অংশে অফিস ও অন্য অংশে ডাম্পিংয়ে গাড়ি থাকে। সেখানে কেউ যেতে পারেন না। ঢাকা শহরে জায়গার বড় সংকট। ফলে এ অবস্থার মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হবে।

জঙ্গি দমন, নতুন নতুন অপরাধ ও অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা, সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, অস্ত্র-মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধ, নির্যাতিত নারী ও শিশুদের সার্বিক সহায়তাসহ থানা ও পুলিশের জনবল বহুগুণ বাড়লেও নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে ঘাটতি রয়েই গেছে। পুলিশ এখনো পুরোপুরি জনবান্ধব হয়ে উঠতে পারেনি। পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই হয়রানি, হেফাজতে মৃত্যু, মামলা না নেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করাসহ নানা অভিযোগ উঠছে।

এ সব ক্ষেত্রে নজরদারির বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, পুলিশের তদারকির বিষয়টি আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। কেউ দায়িত্বে অবহেলা করলে আমরা ওই কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে থাকি। আগামীতে এ তদারকি ও জবাবদিহিতা আরও বাড়বে। এতে বাহিনীর মধ্যে ছোট ছোট যেসব ভুল-ভ্রান্তি ঘটছে, তা দূর হবে। পুলিশ হয়ে উঠবে পুরোপুরি জনবান্ধব।