আয়েশা সিদ্দিকী, ঢাকাঃ ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার বাসে সরকার নির্ধারিত ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হলেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বাস টার্মিনালে যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষা, মহাসড়কে লেগে রয়েছে দীর্ঘ যানজট।করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে এতসব দুর্ভোগ নিয়ে ঘরমুখো হয়েছেন রাজধানীবাসী।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। তিনদিনের ছুটি শেষে শুরু দেশব্যাপী শুরু হবে ১৪ দিনের কঠোর বিধি-নিষেধ। যাতে বন্ধ থাকবে সব ধরনের অফিস-আদালত। আর এ কারণেই শত দুর্ভোগ মাথায় নিয়ে আপন ঠিকানায় যাত্রা করেছেন নগরবাসী। সোমবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় সন্ধ্যা থেকেই সড়কে মানুষের চাপ বাড়তে থাকে। মঙ্গলবার সকালেও একই দৃশ্য। সেই সঙ্গে মহাসড়কে যানবাহনের চাপও বেড়েছে। পাশাপাশি ভাঙা রাস্তা, বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা, গবাদি পশুবাহী ট্রাক চলাচল ও গরুর হাটের কারণে যানজট তীব্র থেকে আরও তীব্র হয়েছে।
করোনার কারণে ঈদুল ফিতরে গ্রামের বাড়ি যাননি মৌলভীবাজারের ভানুগাছ বাজারের বাসিন্দা সোহেল রানা। তবে মায়ের সঙ্গে কোরবানি ঈদ পালন করতে যাচ্ছেন এবার। মঙ্গলবার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে বাসে জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি।
সোহেল রানা বলেন, সকালেই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে এসেছি। বাস ছাড়ার কথা ছিল সকাল ১১টায়। কিন্তু মহাসড়কে যানজটের কারণে এখনো গাড়ি টার্মিনালে আসতে পারেনি। জানি না কখন আসবে!
এদিকে যাত্রার আগে বাসগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে এ দৃশ্য নজরে পড়েনি। সেই সঙ্গে বাসে প্রবেশের মুখে যাত্রীদের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ছিল না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব মালিক ও কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছি, তারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পরিবহন পরিচালনা করেন। যে কোম্পানি বা মালিক আইন লঙ্ঘন করে পরিবহন পরিচালনা করবে তাদের সদস্যপদ আমরা বাতিল করবো। আমরা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অনুরোধ করেছি তারা যেন সড়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।
অন্যদিকে কমলাপুর রেলস্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে লোকাল ও কমিউটার ট্রেনগুলোতে নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই।
মঙ্গলবার সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে অনলাইনে টিকিট কেটে আসা যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করছেন। টেনগুলো অর্ধেক আসন ফাঁকা নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে।
মেইল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করায় সেখানে বেশ ভিড় জমেছিল। টিকিট কাটার লাইনেও ছিল না স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। একজন আরেকজনে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটেছেন।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাস সুজন বলেন, লোকাল ট্রেনে স্বাস্থ্যবিধি না মানার আশঙ্কা আমাদের ছিল। কারণ লোকাল ট্রেন প্রতিটা স্টেশনে থামে। সেখান থেকে প্রচুর যাত্রী ওঠে। এটা বন্ধ করা গেলে লোকাল ট্রেনগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাবে।
স্বাস্থ্যবিধি বলে যে একটা শব্দ আছে সেটি সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গিয়ে বোঝা যায় না। স্বাস্থ্যবিধির সর্বোচ্চ লঙ্ঘন করে লঞ্চের ডেকে ছাদে যাত্রী নিয়ে সদরঘাট থেকে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের উদ্দেশে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। যদিও অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে অতিরিক্ত ৩০টি লঞ্চ সংযোজন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঘুরে দেখা যায়, ঈদ যাত্রার শেষে মুহূর্তে হাজার হাজার মানুষ গভীর রাত থেকেই জড়ো হতে থাকেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। অনেক যাত্রী আগেই লঞ্চে উঠে জায়গা দখল করে রাখছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে লঞ্চ চলাচলের নির্দেশ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কয়েকটি লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই হলেও ঘাট ছেড়ে যায়নি।
এদিকে হাতিয়া, বেতুয়া লাইনের লঞ্চ ঘাটে না পাওয়ায় পন্টুনে যাত্রীদের ভিড় আরও বেশি বাড়ে। কেউ কেউ ভিড় ঠেলে হন্যে হয়ে খুঁজছেন নির্দিষ্ট গন্তেব্যের লঞ্চ। এতে পন্টুনে মানা হয়নি স্বাস্থ্যবিধি। সেখানে মাস্ক ছাড়াই যাত্রীদের যাতায়াত করতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানা যায়, মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রায় ২৫টি লঞ্চ দেশের বিভিন্ন রুটে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে গেছে। এসময়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে এসেছে প্রায় ৫০টি লঞ্চ। ঈদ উপলক্ষ্যে অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন লঞ্চ একটু বেশি যাওয়া আসা করছে। সোমবার ১১৫টি লঞ্চ ছেড়ে গেছে। মঙ্গলবার সব মিলিয়ে ১২৫টির মতো লঞ্চ রাত সাড়ে ১২টার মধ্যে বিভিন্ন রুটে ছেড়ে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :