এম শিমুল খান, ঢাকাঃ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ভয়াবহ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংগঠনের পদ পেতে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও নিজের বাবা মায়ের পরিচয় বদলে ফেলেছেন তিনি। এছাড়া পদ বাণিজ্য সহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনা উপেক্ষা করে দলে পদ নিয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের ১১-১২ মে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের পদায়ন নিষিদ্ধ বর্নিত থাকলেও, কাউন্সিলের আগে মো. ইব্রাহিম মহানগর উত্তরের তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুসরাত জাহান নুপুরের কাছে নিজের ত্রুটিপূর্ন বায়োডাটা জমা দেন। এক্ষেত্রে ছাত্রলীগের পদ বাগিয়ে নিতে ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যবহার সেই সাথে পিতা এবং মাতার নাম ও অন্যান্য তথ্য সমূহে কারচুপির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, মনোনয়ন পত্রে লিপিবদ্ধ পিতা ও মাতার নাম যথাক্রমে মো. ইউসুফ আলী ও মেহেরুন নেসা। এছাড়া বিভ্রান্তি রয়েছে জন্ম তারিখ নিবন্ধের ক্ষেত্রে। ১৯৯০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ উল্ল্যেখ থাকলেও সে অনুযায়ী সম্মেলনের সময় মো. ইব্রাহিমের বয়স ছিলো ২৮ বছর আড়াই মাস।
১১-১২ই মে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত সম্মেলনের ২ মাস ২২ দিন পর সমালোচিত শোভন-রব্বানী কমিটি ঘোষণারা পাশাপাশি ঘোষণা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের শীর্ষ দুটি পদের নাম। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি পদে নিযুক্ত হন মো. ইব্রাহিম।
সূত্র মতে জানা যায়, সম্মেলন পূর্ববর্তী জমা দেওয়া মনোনায়ন তথ্যে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করেন তিনি। সেখানে বাবা, মা, জন্ম তারিখ সহ জাতীয় পরিচয়পত্রের পূর্নাঙ্গ তথ্যই বানোয়াট এবং ত্রুটিপূর্ন। বার্তা বাজারের হাতে আসা তথ্য প্রমাণে দেখা গেছে, ইব্রাহিমের জমা দেওয়া জাতীয় পরিচয়পত্র (নম্বর ১৯৯**********০০৪৩) নির্বাচনের কমিশনের সার্ভারেই নেই।
তবে তার প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র বার্তা বাজারের হাতে রয়েছে। যার নস্বর ১৯৮********০০০৪। যে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে মো. ইব্রাহিম পাসপোর্ট করেছেন। তার পাসপোর্ট নামম্বার ****৬২৯। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ দেখা যায় ০১ জানুয়ারি ১৯৮৯।
মো. ইব্রাহিমের প্রকৃত জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট অনুযায়ী ছাত্রলীগের সম্মেলনের সময় তার বয়স ছিল ২৯ বছর ৪ মাস ১০ দিন। যা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র ও সাংগঠনিক প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। নিয়ম অনুযায়ী তিনি ছাত্রলীগের কোনো পদ পেতে পারেন না। কিন্তু ভুয়া কাগজপত্র জমা দিয়ে পদ বাগিয়ে নেন।
এছাড়া তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টে মো.ইব্রাহিমের আসল পিতার নাম মো. আদম আলী পাত্তর। মায়ের নাম শাহানারা আক্তার। অর্থাৎ ইব্রাহিমের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার পিতা ও মাতা দুইজন করে। জন্ম তারিখও দুইটি।
অপরদিকে বিবাহিত কোনো ব্যক্তি গঠনতন্ত্র মতে ছাত্রলীগের কোনো পদে থাকতে পারেন না। কিন্তু মোঃ ইব্রাহিম বিয়ে করেছেন বলে সংগঠনটির একাধিক কর্মী নিশ্চিত করেছেন। তার স্ত্রীর নাম নিশাত জাহান তমা। বাড়ি বাগেরহাট জেলার রায়েন্দা থানার তাফালবাড়ি ইউনিয়নে।
স্ত্রীর সঙ্গে ইব্রাহিমে ঘনিষ্ট ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। তবে তার বিয়ের কাগজপত্র করা হয়নি বলে দলীয় একাধিক নেতাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা বাজারকে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মো. ইব্রাহিম জানান, দলীয় কার্যক্রম ও সাংগঠনিক দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে যখনই বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড কমিটির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বা মতামত প্রদান করি, তখনই কিছু সংখ্যক উগ্র এবং দল ভ্রষ্ট কর্মীরা আমার ব্যাপারে মিথ্যা প্রপাকান্ডা ছড়িয়ে থাকে।
যা ইতি পূর্বে বেশ কয়েক বার আমাকে বিব্রত করেছে। সেই সাথে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে আমাকে বাঁধা গ্রস্থ করেছে।
এ ব্যাপারে আরো বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থা আমার ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। অতি শীঘ্রই আমি এর আশু প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবো বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :