বিশেষ প্রতিবেদকঃ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) গৌতম কুমার বিশ্বাসকে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানা যায়। একই প্রজ্ঞাপনে আরও ১৩ কর্মকর্তাকে বদলি করে নতুন দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গৌতম কুমার বিশ্বাস বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা। ডিএমপিতে পদায়নের আগে তিনি ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার, পাবনা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ একাধিক ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন।
ছড়িয়ে পড়া পোস্টের তথ্য বলছে, গৌতম কুমার টানা চারবছর (২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত) পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নানান বিতর্কে জড়ান। বিশেষ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা মাগুরা-২ (শালিখা, মোহম্মদপুর ও সদরের কিছু অংশ) আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বীরেন শিকদারের নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন। সেই প্রভাব দেখিয়ে তিনি পাবনায় চলতেন। বিভিন্ন সময় ইসলামি জলসা বন্ধ, বিএনপি-জামায়াতের কর্মসূচি অনুমতি না দেওয়া এবং পণ্ড করে দেওয়াসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পাবনাবার্তা নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে গৌতম কুমারের তিনটি ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করা হয়। যার ক্যাপশনে লেখা হয়-‘‘পাবনায় থাকা অবস্থায় বিএনপি ও জামায়াতের বহু নেতাকর্মীকে লোমহর্ষক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নাম শুনলেই বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সব সময় তটস্থ থাকতেন। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে একাধিক তাফসির মাহফিল বন্ধ করার অভিযোগও রয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াতকে নির্যাতনের পুরস্কার হিসেবে ২০১৮ সালে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে পদোন্নতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা সরকার। তিনি আওয়ামী সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশ্যে গর্ববোধ করতেন। তার পদায়নে বিএনপি ও জামায়াতের নির্যাতিত নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ।’’ অবিলম্বে তার পদায়ন প্রত্যাহার করে তার বিচার দাবি করা হয়-ওই পোস্টে।
ওই পোস্টে ফরহাদ ইসলাম নামে একজন মন্তব্য করেছেন ‘মনে পড়ে কি পাবনা বাসীর। এই সেই ব্যক্তি যে পাবনা ইসলামিয়া মাদ্রাসার জালসা বন্ধ করে দিয়েছিল। জালসা শুরুর আগ মুহুর্তে।’
অ্যাডভোকেট নাজমুল হোসেন শাহীন লিখেছেন ‘এই পুলিশ অফিসার পাবনাতে থাকাকালে বিএনপি, জামায়াতকে ধ্বংস করেছে।’
জামায়াতে ইসলামীর পাবনা জেলার আমির আবু তালেব মন্ডল বলেন, ‘বিগত সরকারের আমলে পুলিশের সঙ্গে আমাদের অনেক দূরত্ব ছিল। বিশেষ করে তৎকালীন সরকার বিরোধী যারা ছিলাম তাদেরকে চাপে রাখা হতো। ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলোতে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করত পুলিশ। বিশেষ করে পাবনায় দারুল আমান ট্রাস্টের জলসার আয়োজন করা হলে অনুষ্ঠানের আগমুহূর্তে গৌতম কুমার সেটি পণ্ড করে দেয়। এছাড়া পুলিশি মিথ্যা মামলা আমাদেরকে ঘরে থাকতে দেওয়া হয়নি। সবসময় তারা দৌড়ের ওপর রেখেছিল।’
এদিকে অনুসন্ধান বলছে-পুলিশ কর্মকর্তা গৌতম কুমার এবং বীরেন শিকদারের বাড়ি মাগুরার শালিখা উপজেলার সিংড়া গ্রামে। তার বাবা (গৌতম) গোবিন্দ চন্দ্র বিশ্বাস ১ নং ধনেশ্বরগাতী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক। একই গ্রামের হওয়ায় গৌতম সাবেক এমপির পরিচয় দিতেন। তবে তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে আসে গৌতমের বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরপরেই গৌতম কুমারকে পুলিশের কম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোতে পদায়ন করা হয়। পাবনা থেকে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার হলে তাকে ময়মনসিংহ পিবিআইয়ে পদায়ন করা হয়। এরপর তিনি নৌ পুলিশের ঢাকা অঞ্চলের পুলিশ সুপার হন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাকে ডিএমপিতে পদায়ন করা হয়।
গৌতম কুমার বলেন, ফেসবুকের ওই পোস্ট আমার নজরে আসেনি। তবে আমার বাবা স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।