নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাঃ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিগত কয়েক দশক যাবত প্রতিষ্ঠানটি একটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সকলের নিকট পরিচিত ছিল।
আয় বৃদ্ধি, ব্যয় সংকোচন ও যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের কঠোর নীতি অবলম্বন করে বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সেই সাথে বিআরটিসির বাৎসরিক আয়-ব্যয় যেখানে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ছিলো লোকসানে। সেখানে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটি লাভের মুখ দেখে।
এ ধারা অব্যাহত রেখে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে লাভ করে ৪৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে লাভ করে ২৫ কোটি ৪ লাখ টাকা। এই হিসেবে বিআরটিসি এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিণত হয়েছে।
বিআরটিসি সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যেই নতুন গাড়িবহর থাকা সত্ত্বেও মাসে প্রায় ৬ কোটি টাকা নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধ করা সম্ভব না হলেও বর্তমানে পুরাতন গাড়িরবহর দ্বারা মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করে উন্নয়নমূলক কাজ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুযোগ-সুবিধাদি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চালক, কারিগরসহ প্রায় ১,২৪০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিগত তিন বছরে সচল গাড়ির সংখ্যা ৮৮৫ টি থেকে ১,১৯৮ টিতে উন্নীত করা হয়েছে। বিগত তিন বছরে মেরামতকৃত গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও মেরামত খাতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হয়।
বিমানবন্দরে প্রবাসী বাংলাদেশি ও রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিমানবন্দর শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। পর্যটন শিল্পের বিকাশে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পর্যটক বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যাত্রীদের যাতায়াত সুবিধার্থে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এছাড়াও মেট্রোরেল কানেক্টিভিটি সার্ভিসসহ সেবার যাত্রীসেবার পরিধি আরো বিস্তৃত করা হয়েছে। বিআরটিসি গাড়িবহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত করা। বাংলাদেশের সকল জেলায় বিআরটিসি’র বাস পরিচালনা করা। চেসিস ক্রয় করে বিআরটিসি’র নিজস্ব কারখানায় গাড়ি তৈরি করা। ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টার ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সিস্টেম চালু করা। বিআরটিসি প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কসপ কার্যক্রম আরো আধুনিকায়ন করা হচ্ছে।
দীর্ঘকাল লোকসানে থাকলেও কয়েক বছর ধরে পরিবর্তন এসেছে সংস্থাটির কার্যক্রমে। এখন আরো বাস-ট্রাক বাড়াতে পারলে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে পারে সংস্থাটিতে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার সময় করপোরেশনটি খুবই খারাপ অবস্থায় ছিল। লোকসান আর ভর্তুকি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতাও বকেয়া ছিল। এরপর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তখনকার সময় এমনও হয়েছে ১৮ মাসের মতো বেতন বকেয়া ছিলো। ইতোমধ্যেই বকেয়ার অধিকাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। চরম অস্থিরতার মধ্যেও বেতন ১২ কোটি টাকা পরিশোধে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। সার ও খাদ্য পরিবহন সচল ছিল কারফিউ ও অস্থিরতার মধ্যেও।
বর্তমান সরকার ব্যয় সঙ্কোচনে জোর দিয়েছে। সে কারণে লোকসানি বিআরটিসি এখন লাভের মুখ দেখছে। দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে পারায় সফলতা এসেছে বলে মনে করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যন মোঃ তাজুল ইসলাম।
জানা গেছে, বিআরটিসির ২৪টি বাস ডিপো, দু’টি ট্রাক ডিপো, ২৬টি মেরামত কারখানা, দুইটি কেন্দ্রীয় মেরামত কারখানা ও ২৭টি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিআরটিসির বহরে এক হাজার ১৯৮টি বাস ও ৫০৫টি ট্রাক রয়েছে। ২০৩টি স্থানীয় ও ৫টি আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল করে বিআরটিসি গাড়ি। আগে বেতন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ের বকেয়া ব্যয় পরিশোধ করতে হচ্ছে বর্তমান প্রশাসনকে।
বিজ্ঞাপন, যন্ত্রপাতিসহ অতীতের বকেয়া পরিশোধের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
গত জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বিআরটিসির বহরে থাকা ২৪৫টি বিশ্ববিদ্যালয় বাস, ২৩৫টি স্টাফ বাস ও বিভিন্ন রুটে সক্ষমতার চেয়ে কমসংখ্যক বাস চলাচল করে। এই পরিস্থিতিতে নিরাপদে গাড়ি পরিচালনা ও যথা সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করাই ছিল চ্যালেঞ্জ। তবে পরিকল্পানা মাফিক কাজ করার ফলে সেটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে বিআরটিসি।
প্রতিকূল পরিবেশেও যাত্রী নিরাপত্তা বিবেচনা করে সর্বোচ্চসংখ্যক বাস ও ট্রাক পরিচালনা করা হয়। ২০২১ সালের আগে বহরে নতুন গাড়ি থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হতো না।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর বিআরটিসি আরো সক্ষমতা বৃদ্ধির আশা করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসির) চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যেই আপনারা জেনেছেন বিআরটিসি আর কোনো লোকসানি প্রতিষ্ঠান নেই। দক্ষতা ও দুর্নীতি মুক্ত রেখে কাজ করায় বিআরটিসি এখন লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত হয়েছে। পূর্বের যেসব সমস্যা ছিলো বর্তমান সময়ে সেগুলো কাটিয়ে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলো মেরামত করা হয়েছে। গাড়িবহরে নতুন বাস ও ট্রাক যুক্ত করাসহ দেশের সব জেলায় বিআরটিসির বাস পরিচালনা করার পরিকল্পনা রয়েছে। নিজস্ব কারখানা, ডিপো ও ট্রেনিং সেন্টার ব্যবস্থাপনায় অটোমেশন সিস্টেম চালু প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :