
নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জ পৌর এলাকার পানির প্লান্টের সক্ষমতা ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়া, পৌর এলাকায় বসবাসরত পৌরবাসীর পানির চাহিদা অপ্রতুল হওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে পৌর এলাকায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সুপেয় পানি সরবরাহ অনিশ্চিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে বিষয়টি মারত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলেও মনে করছে পৌর কর্তৃপক্ষ
গোপালগঞ্জ পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পৌর এলাকায় পানির গ্রাহক সংখ্যা ৯ হাজার ৯০০ জন। এসব গ্রাহকদের প্রতিদিনের পানির চাহিদা ৬০ এমএলডি (মিলিনিয়াম লিটার পার ডে)। কিন্ত বর্তমানে পৌরসভা প্রতিদিন পানি সরবরাহ করতে পারছে মাত্র ১৩-১৪ এমএলডি, যা চাহিদার কেবল শতকরা ২৫ ভাগ পূরণ করছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, গোপালগঞ্জ পৌরসভার শিশুবন এলাকায় প্রধান পানি সরবরাহ ও শোধনাগারের অবস্থান। এটি আবার দু’টি অংশে বিভক্ত। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ২০০০-২০০১ সালে প্রথম প্লান্ট ও ২০১৯-২০২০ সালে দ্বিতীয় প্লান্টটি স্থাপন করে। শুরুতে প্রথম প্লান্টের পানি ফিল্টারিং ক্যাপাসিটি ছিল ৫৪০ ঘন মিটার/ঘন্টা। বর্তমানে ওই প্লান্টের পানি ফিল্টারিং ক্যাপাসিটি ৩০০ ঘন মিটার/ঘন্টায় নেমে এসেছে। দ্বিতীয় প্লান্টটির ফিল্টারিং ক্যাপাসিটি স্বাভাবিক থাকায় এর ওপর লোড বেশি পড়ছে। এছাড়া পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য একটি আয়রন রিমুভাল প্লান্ট, সদর উপজেলার কাজুলিয়ার বিলে ভূগর্ভস্থ পানি সরবরাহ প্লান্ট ও মানিকহার এলাকায় মধুমতি নদী থেকে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সরবরাহ প্লান্ট রয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে এসব প্লান্ট থেকে চাহিদা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে পানি পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, ২০২৪ সালে প্রধান পানি সরবরাহ প্লান্টের মেরামত ও সংস্কারে গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়। যা বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশন থেকে অনুমোদন লাভ করলেও অদৃশ্য কারনে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে। এছাড়া, দুই বছর আগে একটি নতুন প্লান্ট স্থাপনের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি দেশি-বিদেশি প্রতিনিধি দল টুঙ্গিপাড়ার বর্ণির বাওরে সমীক্ষা যাচাই করে। কিন্তু পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি বলে অনুসন্ধানে জানা যায়।
অপরদিকে, ২০২৪ সালে আরো ৬টি ওয়ার্ড বৃদ্ধি করে ১৫টি ওয়ার্ডে পৌরসভার এলাকা বর্ধিতকরণ করা হয়। আগে পৌর এলাকার সীমানা ছিলো ১৩.৮২ বর্গ কি.মি, বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩০.৭০ বর্গ. কি.মি। পৌর এলাকার পাওয়ার হাউজ রোড, আরাম বাগ, মাস্টারপাড়া, পুলিশ লাইন্স এলাকা, তেঘরিয়া, মন্দারতলা, হেমাঙ্গণ, মুন্সীপাড়া, রসুলপাড়া ও শান্তিবাগ এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য পাইপলাইন রয়েছে। কিন্তু চাহিদা মতো ওইসব এলাকার মানুষ প্রয়োজনীয় পরিমাণে পানি পাচ্ছেন না।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার পাওয়ার হাউজ রোডের প্রফেসর আজমল পাশা, হেমাঙ্গন এলাকার সিরাজ কাজী ও মাস্টারপাড়ার গৃহবধূ স্বপ্না বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে চাহিদা মতো পানি পাচ্ছি না। দিনে মাত্র ১-২ ঘন্টার জন্য আমরা পানি পাই। সামন্য এ পানি দিয়ে আমাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ হয় না। গণমাধ্যমে নিরবচ্ছিন্নভাবে পানি সরবরাহে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন পৌর এলাকার ওই সকল ভুক্তভোগীরা।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার উপ-সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ ও পানি) স্বরূপ বোস বলেন, পৌর এলাকায় বর্তমানে যে পরিমানে পানির চাহিদা রয়েছে পুরাতন প্লান্টটি ২৪ ঘন্টা ব্যাপি বিরামহীনভাবে পরিচালনা করে শতকরা ২৫ ভাগ গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সংস্কার না করে এভাবে চললে প্লান্টটি যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাবে। প্লান্টটি সংস্কার, নতুন প্লান্ট এবং বর্ধিত এলাকার জন্য পাইপ লাইন স্থাপন করে পানির সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পৌর এলাকায় পানি সরবরাহ করা একেবারেই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়েজ আহমেদ বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ডিপিপি জমা দেওয়া রয়েছে। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয়ও এ বিষয়ে নিরলসভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আশা করছি প্রকল্পটি অনুমোদন হলে গোপালগঞ্জ পৌরবাসীর পানির সমস্যা নিরসন হবে।
গোপালগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপসচিব) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, বর্তমানে পৌরসভার পানি সরবরাহ প্লন্টের যে সক্ষমতা রয়েছে তা দিয়ে ৫-৬ হাজার গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। কিন্তু কাগজ-কলমে এ সংখ্যা ১০-১২ হাজার। এছাড়া প্রতিদিন পানির সংযোগ নিতে নতুন গ্রাহকদের সংযোগের আবেদন জমা পড়ছে। এর আগে, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে পুরাতন পানি সরবরাহ প্লান্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং বর্ধিত এলাকায় নতুন পাইপ লাইন সংযোগের লক্ষে একটি ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন অনুমোদন দেওয়ার পর ওই ডিপিপি-টি এখন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :