গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধিঃ গোপালগঞ্জের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী নিয়োগ পরিক্ষায় দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
স্বজনপ্রীতি করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের আত্মীয় মনিষা মীত্র ও জেলা প্রশাসকের ড্রাইভার শরিফুল ইসলামের ভাইয়ের শালিকা লামিয়া খানমকে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে। নিয়োগে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি ঘটনা মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে চাকুরী বঞ্চিত ও জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজির আহম্মদের কন্যা লিমা খানম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, চেয়ারম্যান দুর্নীতি দমন কমিশন ও
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগকারী লিমা খানম মুক্তিযোদ্ধা কোটার পরিবার কল্যাণ সহকারী পদের একজন প্রার্থী ছিলেন। তার গ্ৰামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নে।
এই নিয়োগ পরীক্ষাটি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি বাস্তবায়ন করেছে, যার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক (সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত যুগ্ম-সচিব) শাহিদা সুলতানা। সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অনাদি রঞ্জন মজুমদার এছাড়াও সদস্য হিসেবে ছিলেন গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন।
লিখিত অভিযোগের বর্ণনা থেকে জানা যায়,গত ২৫ নভেম্বর শনিবার একযোগে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্কুলে লিখিত পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ওইদিন রাতেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। পরের দিন ২৬ নভেম্বর শনিবার গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং রাত ২টা পর্যন্ত চলে। মৌখিক পরীক্ষায় আমিসহ ৫ জন প্রার্থীকে এক সাথে পরিক্ষার হলে ডাকে এবং সবাইকে নিজের নাম, পিতা/স্বামীর নামসহ ঠিকানা জানতে চায়, যা আমরা সকলেই বলতে পারি। পরে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের মূল কপিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চান, যা অন্যান্য প্রার্থীরা সঠিক ভাবে দেখাতে না পারলেও আমি আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদের কপিসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম হই। পরের দিন সকালে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে আমার নামের পরিবর্তে কৃতকার্যের তালিকায় লামিয়া খানমের নাম দেখতে পাই।
পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি লামিয়া জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানার ড্রাইভার শরিফুল ইসলামের শালিকা। পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে মৌখিক পরীক্ষায় যে ৫ জন অংগ্ৰহন করেছি তাদের মধ্যে আমিই একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রার্থী এবং নিয়োগ বোর্ড নাম মাত্র যে প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর করতে আমি সক্ষম হয়েছি। মৌখিক পরীক্ষায় এমন কোন কঠিন প্রশ্ন করা হয়নি যার উত্তর দিতে আমি ব্যর্থ হয়েছি। কোন অপরাধে আমার যোগ্যতা ও মুক্তিযোদ্ধা কোটা অনুসরণ করা হলো না সেটাই আমার প্রশ্ন।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক ও নিয়োগ বোর্ডের অন্যান্য সদস্যদের এমন অনৈতিক ও অসৎ কাজে আমি খুবই ক্ষতিগ্ৰস্ত ও মর্মাহত হয়েছি। লিমা খানম আরো অভিযোগ করেছে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক, পরিবার কল্যাণ সহকারী ও আয়া পদেও ব্যপক স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও ঘুষবাণিজ্য হয়েছে।
এ বিষয়ে আমার মত অন্যান্য পদের প্রার্থীরাও হতাশ ও মর্মাহত হয়েছে। যা সঠিক ভাবে তদন্ত করলে স্বজন প্রীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের তথ্য বেরিয়ে আসবে। প্রশ্নবিদ্ধ এই নিয়োগটি পুনরায় দিতে ও অনৈতিক ও অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্ধতন সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
এ বিষয়ে গোপালগঞ্জ পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালক অনাদি রঞ্জন মজুমদার প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমার আত্মীয়-স্বজন তো জেলার অনেকেই আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা অভিযোগ অস্বীকার করে মুঠোফোনে জানান, নিয়োগ পরিক্ষায় কোন অনিয়ম হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :