• ঢাকা
  • সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:১১ পূর্বাহ্ন

গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বিদেশে পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সক্রিয় এক প্রতারক চক্র : প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা ভুক্তভোগীদের


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ৬:২০ অপরাহ্ন / ৮৯
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে বিদেশে পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসা দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সক্রিয় এক প্রতারক চক্র : প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা ভুক্তভোগীদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের বড়দিয়া গ্রামের মৃত জয়নাল শেখের ছেলে জুবায়ের শেখ (৩৬), মিজানুর শেখ ওরফে মিজু শেখ (৪৫), হানজাল শেখ (৩২), স্ত্রী রহিমা বেগম (৬৫) ও পুত্রবধূ কেয়া বেগম (২৭) এর বিরুদ্ধে বড়দিয়া গ্রাম সহ আশপাশের গ্রামের সহজ সরল মানুষকে জাল ভিসা ও ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া ও ইতালিতে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

একাধিক ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতির খবর পেয়ে একাধিক ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বড়দিয়া গ্রামের ভুক্তভোগী জিসান শেখ ওরফে ছাব্বির শেখ (২০) এর পৈতৃক বাড়িতে উপস্থিত হন।

ভুক্তভোগী জিসান শেখের বাবা মালয়েশিয়া প্রবাসী আলমগীর শেখ (৪৫) তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, আমাদের একই বংশের সম্পর্কে তারা আমার ভাতিজা হয়। আমাদের পার্শ্ববর্তী বাড়ির জুবায়ের শেখ বর্তমানে ইতালিতে ঢুকেছে সে এবং তার ভাই মিজানুর শেখ ওরফে মিজু, হানজাল শেখ ও তাদের মা রহিমা বেগম আমার একমাত্র ছেলেকে বৈধপথে অস্ট্রেলিয়া পাঠানোর কথা বলে জাল ভিসা ও কাগজপত্র দেখিয়ে বিভিন্ন কিস্তিতে প্রথমে ১৫ লক্ষ ও পরে ৮ লক্ষ মোট ২৩ লক্ষ টাকা নিযে তাকে ইন্ডিয়া সহ বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে জিম্মি করে অমানবিক নির্যাতন করে তার ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে আমাদের নিকট থেকে আরো ২০ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ৪৩ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের মাধ্যমে ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য আমার জায়গা, জমি, পুকুর বিক্রি ও বন্ধক রেখে আমি সর্বমোট ৪৩ লক্ষ টাকা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছি। তারা তো আমার ছেলেকে ইতালিতে নিতে পারে নাই উল্টো টাকা ফেরত চাইলে হুমকি-ধমকি দেয়। এ বিষয়ে গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার সালিশ বৈঠক করেছেন। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত সকলের সামনে নগদ ২৩ লক্ষ টাকা আমাকে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেও মিজানুর শেখ ওরফে মিজু ও হানজাল শেখ তাদের গ্রামের বাড়িতে তালা দিয়ে আজ প্রায় তিন মাস ধরে আত্মগোপনে রয়েছে। ফোন দিলেও ফোন ধরে না আমি একজন প্রবাসী সারাজীবন প্রবাসে থেকে কষ্টার্জিত অর্থ এবং গ্রামের পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করে এই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়েছি। এরা শুধু আমার ছেলে নয় গ্রামের অনেকের কাছ থেকে বিদেশে পাঠানোর নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একজনকেও বিদেশে পাঠাতে পারেনি। আমি আমার পাওনা টাকা ফেরত সহ তাদের কঠিন শাস্তির দাবী করছি। ভুক্তভোগী জিসানের পিতা প্রবাসী আলমগীর শেখ সক্রিয় এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে খুব দ্রুতই আইনী ব্যবস্থা নিবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী বড়দিয়া গ্রামের ইঙ্গুল শেখের ছেলে এমরান শেখ বলেন, তারা আমাকেও বিদেশে পাঠানোর কথা বলে টাকা নিয়ে আমার সাথে প্রতারণা করেছে। পরে টাকা ফেরত চেয়ে না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে আমি মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা করেছি। মামলা নং মুকসুদপুর জি.আর-২৫০/২৪।

বড়দিয়া গ্রামের মুরুব্বি হাজী আমেদ আলী শেখ (৮০) বলেন, আলমগীর শেখের ছেলেকে লিবিয়ায় জিম্মি করে জুবায়ের শেখ ও তার ভাই মিজানুর শেখ ওরফে মিজু অনেক টাকা নিয়েছে। একমাত্র ছেলের প্রাণ বাঁচাতে নিরুপায় হয়ে আলমগীর শেখ তার জমি ও পুকুর আমার কাছে বিক্রি করেছে। এছাড়া এই উঠানেই প্রায় তিন মাস আগে আলমগীর শেখের ছেলে জিসান শেখকে বিদেশে পাঠানো বাবদ নেওয়া ৪৩ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে অনুষ্ঠিত সালিশ বৈঠকে গ্রামের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে জুবায়ের শেখ ও তার ভাই মিজানুর শেখ সালিশ বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের সাথে মুঠো ফোনে কথা বলে আলমগীর শেখকে ২৩ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। পরবর্তীতে যখন টাকা দেওয়ার সময় এসেছে তখনই মিজানুর তার পরিবার নিয়ে গ্রাম থেকে পালিয়েছেন। এছাড়া ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের বাড়ির প্রতিবেশীরা জানান বিদেশে পাঠানোর নাম করে মানুষের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত কোটি কোটি টাকা দিয়ে বড়দিয়া গ্রামে জুবায়ের শেখ ও মিজু শেখ পাশাপাশি বিশাল আকৃতির দুইটি বাড়ি নির্মাণ করছেন। সরেজমিনে গিয়েও তার সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জুবায়ের শেখ ইতালিতে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে অপর অভিযুক্ত তার আপন ভাই মিজানুর শেখ ওরফে মিজুর ০১৭…১৯৭ নম্বর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।