
কে এম সাইফুর রহমান, গোপালগঞ্জঃ পবিত্র রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের স্বাস্থ্যের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে শুধু ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ও অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বেথুরীয়া ইউনিয়নের সাধুহাটি গ্রামের প্রভাবশালী এক খামার মালিকের বিরুদ্ধে মরা গরুর মাংস বিক্রির অভিযোগ করেছেন ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক গ্রামবাসী।
এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম। শুধু তাই নয় সম্প্রতি প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপিত নাম সর্বস্বহীন ওই গরুর খামারটি নিয়ে রয়েছে নানা ধোঁয়াশা।
স্থানীয় এলাকাবাসীদের দাবি ওই গরুর খামারটি রাজধানীর তেজগাঁও থানায় কর্মরত ওসি অপূর্ব হাসানের। তিনি অসৎ উপায়ে অর্জিত অর্থ দিয়ে খামারটি প্রতিষ্ঠা করেছেন। আইনী ঝুট ঝামেলা এড়াতে তাদের আত্মীয় ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য আরোজ আলী মোল্যার নাম ব্যবহার করছেন মাত্র। বাস্তবে একটি গরু কেনার সামর্থ্যও নেই ওই ইউপি সদস্যের। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন গ্রামবাসী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর অভিযোগ সূত্রে জানাগেছে, গত বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) তারাবি নামাজের কিছু সময় পূর্বে ওই খামারে পালিত একটি ষাঁড় গরু অসুস্থ হয়ে মারা যায়। পরে সোর চিৎকার দিয়ে তড়িঘড়ি করে সেই গরুটিকে বটি দিয়ে প্রথমে জবাই করেন আরোজ আলী মেম্বারের ছোট ভাই এরশাদ মোল্লা ও পরে অপূর্ব হাসানের মেঝ ভাই মুফতি আহসান হাবীব (এঞ্জেল)। এসময় চিৎকার শুনে সেখানে অনেকেই গিয়ে এরশাদ মোল্যা তার ভাই আব্বাস মোল্যা, মুফতি এঞ্জেল মিয়া সহ গুটি কয়েক লোক দেখতে পান। পরে এ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ষাঁড় গরুটি হঠাৎ স্ট্রোক করে অসুস্থ হলে মুফতি আহসান হাবীব (এঞ্জেল) হুজুর জবাই করেছেন বলে প্রচার করতে থাকেন। পরে তাদের আত্মীয় তুহিন মিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় কসাই এনে গরুর চামড়া ছাড়িয়ে মাংসগুলো একাধিক বড় বড় খন্ডে খন্ডিত করা হয়। এরই মধ্যে পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে মসজিদে সম্মানিত রোজাদারদেরকে ইফতারি করানোর জন্য একই গ্রামের নুরে এলাহী, মাজুস মিয়া সহ আরো বেশ কয়েকজন ওই গরুর মাংস কিনতে এলে সেখানে উপস্থিত থাকা কয়েকজন তাদেরকে ওই মাংস কিনতে বারণ করেন। পরে এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। ওই খামারের লোকজন এলাকায় মাংস বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে পরে ওই দিন রাতের আঁধারে একটি প্রাইভেট কার যোগে মাংসের খন্ডগুলো ঢাকায় পাঠিয়ে দেন বলে জানান গ্রামবাসী।
পরে শনিবার সকালে এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেসক্লাব গোপালগঞ্জসহ অন্যান্য সংগঠনের একাধিক সাংবাদিকগণ সাধুহাটী গ্রামের সেই খামারে সরেজমিনে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহের জন্য উপস্থিত হলে মেম্বার আরোজ আলী মোল্যা, তার ছেলে ফয়সাল মোল্যাসহ অজ্ঞাত বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীদেরকে লাঞ্ছিত করেন এবং তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেন। পরে এবিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা স্থানীয় রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আরজ আলী মোল্যা মেম্বার বলেন, স্ট্রোক করে গরুটি অসুস্থ হলে তা জবাই দিয়ে স্থানীয় কসাইদের মাধ্যমে সেই মাংস বিক্রি করে দিয়েছি।গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে খামারের মালিকানা তিনি দাবি করলেও তার স্বপক্ষে বৈধ কোন কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। পরের দিন ইউনিয়ন পরিষদে উক্ত খামারের বিপরীতে একটি ট্রেড লাইসেন্সের জন্য গিয়ে তিনি তা সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হন।
এদিকে অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রির বিষয়ে আমাদের প্রতিনিধি মুফতি আহসান হাবিব (এঞ্জেল) হুজুর, তার ছোট ভাই কাশিয়ানী উপজেলা ভাইস- চেয়ারম্যান খাজা মিয়া ও ঢাকায় কর্মরত বড় ভাই সরকারি কর্মকর্তা অপূর্ব হাসানের নিকট মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেন।
এ বিষয়ে বেথুরীয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিয়া বলেন, সমস্যা তো অবশ্যই হয়েছে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন।
বেথুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি এবং এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য গোপালগঞ্জ থেকে সাংবাদিকরা এলে তাদের সাথেও অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন আরজ আলী মেম্বার সহ তার লোকজন। শুনেছি এবিষয়ে তারা একটি অভিযোগ দিয়েছেন রামদিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে।
বেথুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অনাদী বাবু জানান, সাধুহাটি গ্রামে প্রতিষ্ঠিত গরুর খামারে জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এখন পর্যন্ত কোন ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয়নি। তবে রোববার সকালে আরোজ আলী মোল্যা ট্রেড লাইসেন্স নিতে পরিষদে এসেছিলেন। চেয়ারম্যান কাশিয়ানীতে থাকায় নিতে পারেননি পরে তিনি ফিরে যান।
কাশিয়ানী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা প্রীতিশ কুমার দাস বলেন, সাধুহাটী গ্রামের উক্ত খামারের নিবন্ধনের জন্য এখন পর্যন্ত কেউ কোন আবেদন করেননি। মরা গরু অথবা অসুস্থ গরুর মাংস যেটাই হোক না কেন তা বিক্রি করে থাকলে অবশ্যই অন্যায় করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের দেওয়া অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো.শহিদুল ইসলাম বলেন, রোববার আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হবে এবং আসামিদেরকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :