
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ গাজীপুরে বাড়ি দখলের চেষ্টায় ১৪ বছরের এক কিশোরকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পশ্চিম জয়দুবপুর, গনি মুন্সিরটেক ওয়ার্ড নং-২৬, থানা-সদর, মহানগর গাজীপুর, এলাকায় বাড়ি দখল করতে মোঃ ফাহিম, পিতা মোঃ শরীফুল ইসলাম সাজু ১৪ বছরের একটি সপ্তম শ্রেনির স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে
ধর্ষণের মিথ্যা মামলা ও হামলা পরে পরিবারকে এলাকা ছাড়া করার অভিযোগ উঠছে। মোঃ মিজান (৪৫) পিতা মোঃ মোহন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম খোকন, মোঃ সাইফুল(৩৫) পিতা মোঃ মোহন মিয়া, মোসাঃ ফাতেমা (৫৫), স্বামী-মোঃ মিজান, মোঃ হিরা(৩০), মোঃ শাকিল সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ তারিখে মোসাঃ হাসি (৩৪), স্বামী-মোঃ রুবেল বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মোঃ ফাহিমকে এবং তার সঙ্গে মোঃ রমজান ও মোঃ শাওনকে অভিযুক্ত করা হয়।
ভুক্তভুগি পরিবার অভিযোগ করে বলেন মোঃ মিজান (৪৫) পিতা মোঃ মোহন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুল ইসলাম খোকন, মোঃ সাইফুল(৩৫) পিতা মোঃ মোহন মিয়া, এর পরিকল্পনায় এমন ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ফাহিমের পরিবারের দাবি, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা।
ফাহিমের মা বলেন, আমার ছেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগ তুলে আমাদের পরিবারকে এলাকা ছাড়া করা হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর আমার ছেলে তার সপ্তম শ্রেনির পরীক্ষা দিতে নিজ এলাকা গাজিপুরে গেলে সেখানে তারা আমার ছেলেকে বাসা থেকে তার সৎ ফুপু হাসি ও সৎ দাদি, সৎ-চাচা শুভ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায় তার দাদার অসুস্থতার কথা বলে, নিজ বাসায় হত্যার উদ্ধ্যেশে এলোপাথারি ভাবে মাথা ও শরীলে আঘাত করে গুরুত্বর আহত করে। পরে তারা মনে করে আমার ছেলে মারা গেছে তা বুঝে তারা বাড়ির সামনে ফেলে পালিয়ে যায়। সে খান থেকে এক রিক্সা চালক উদ্ধার করে গাজীপুর সদর শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল হাসপাতালের গেটে ফেলে চলে যায়, হাসপাতাল ক্রতিপক্ষ আহত আমার ছেলের প্রাথমিক চিকিৎশা শেষে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে।
পরে আমরা বিষয়টি শুনে হাসপাতালে ছুটে যাই। ঘটনাটি নিয়ে আমরা থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়নি। পরে গত ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে উল্টো আমার ছেলের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করা হয়।
তিনি আরও জানান, মামলার পর ফাহিমকে হাসপাতালে থেকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়।
ফাহিমের মা আরও অভিযোগ করেন, তারা আমার স্বামীকে মেরে ফেলতে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। কিন্তু আমরা যতবার থানায় পুলিশের সাহায্য নিতে গিয়েছি, পুলিশ কোনো সহায়তা করেনি।
৫ আগস্টের পর তারা ডাকাতির গুজব ছড়িয়ে আমাদের গুম করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ভাগ্যক্রমে আমরা বেঁচে গেছি। এখন তারা আমার ছোট ছেলে ওমরকেও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে এবং আমার ছেলে ফাহিমকে জেলের ভেতর হত্যা করার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা এখন পুরোপুরি নিঃস্ব। কার কাছে যাব, কার কাছে সাহায্য চাইব? যার কাছেই যাই, তারা টাকা দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়। আমি আমার স্বামী-সন্তান নিয়ে বাঁচতে চাই। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আমাদের সাহায্য করুন।
ফাহিমের বাবা বলেন, তারা আমার ছেলেকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। মামলা দেওয়ার পর থেকেই তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করছে। যার কারণে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তারা আমার ওপর নজরদারি করতে আমার মোবাইল ফোন হ্যাক করেছে, যার ফলে আমি কার সঙ্গে কথা বলছি, কী করছি সবকিছু তারা নজরদারি করছে। সেই অনুযায়ী তারা আমার ওপর হামলা ও ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমি যেখানে সাহায্য নিতে যাই, সেখানেও তারা টাকা ছিটিয়ে দেয়, যার কারণে পুলিশ ও সাংবাদিকরা আমাকে সাহায্য করছে না।”
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলের জীবন তারা মিথ্যা মামলায় ধ্বংস করে দিয়েছে, এখন আমার ছোট ছেলেকে মেরে ফেলতে চায়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখে আমি আমার বসতবাড়ি গাজীপুরে গেলে, তখনও তারা আমার ওপর হামলা চালায়। আমি কোন ভাবে প্রাণ বাঁচিয়ে গাজীপুর সদর থানায় গিয়ে সাহায্য চাই।
পুলিশ ঘটনা তদন্তে গেলে, তাদের সামনেই আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ আমাকে থানায় নিয়ে আসে। এরপরও তারা আমার বাড়িতে হামলা চালিয়ে আমার মাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে এবং বাড়ির সমস্ত আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। নিজের জীবন বাঁচাতে সেদিন গভীর রাত পর্যন্ত থানায় থাকতে বাধ্য হই। পরে ভোর ৫টা ২০ মিনিটে আমি কোনোভাবে নিজেকে রক্ষা করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিই।”
পুলিশের বক্তব্য: গাজীপুর সদর থানার ওসি তদন্ত জানান, আমরা বাদীর মৌখিক জবানবন্দি পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ করেছি এবং ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর ঘটনার প্রকৃত সত্য জানা যাবে। ইতোমধ্যে মামলায় উল্লিখিত তিন আসামির মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং একজন এখনও পলাতক রয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবার প্রশাসনের কাছে ন্যায়বিচার এবং নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :