• ঢাকা
  • বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ অপরাহ্ন

খুলার পাইকগাছার জিরবুনিয়া সমবায় সমিতিতে আস্থার সংকট : কোচো খুঁড়তে সাপ


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২১, ২০২৩, ১১:৫৯ পূর্বাহ্ন / ৪৫
খুলার পাইকগাছার জিরবুনিয়া সমবায় সমিতিতে আস্থার সংকট : কোচো খুঁড়তে সাপ

মোঃ মানছুর রহমান জাহিদ, পাইকগাছা, খুলনাঃ খুলনার পাইকগাছার দ্বীপ বেষ্টিত দেলুটি’র আলোচিত জিরবুনিয়া গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ এ আস্থার সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এখন কোঁচো খুড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসছে।

সমিতির বর্তমান সভাপতি ও ম্যানেজারের নামে আনিত অভিযোগের তদন্তকালে সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে নামে-বেনামে ২৬ লক্ষ টাকার প্রকল্প ঋন দেখানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। এমনকি জোর করে ভূয়া ঋনের টাকা আদায় করাসহ অন্যায় ভাবে ম্যানেজার অচিন্ত্যকেও চাকরীচ্যুতির অভিযোগও রয়েছে। ঐ সময় অডিড রিপোর্টে এসব ভয়ঙ্কর তথ্য বের হলেও নানা কারনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়ি ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি এমন অভিযোগ করলেন বর্তমান কমিটির সভাপতি ভোলটন কুমার মন্ডল। ইতোমধ্যে সমিতি’র সাধারন সম্পাদক অমিতাভ মন্ডল ও এক সদস্য কৌশিক সরকার সমিতি নীতিমালার ৪৯ ধারায় তদন্ত চেয়ে সভাপতি ভোলটন মন্ডল ও ম্যানেজার অজয় বিশ্বাসের বিরুদ্ধে ২৬ লক্ষ টাকা হস্ত মজুদের অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে শিউলী মল্লিক নামে এক সমিতির কর্মচারীও সভাপতির নামে আরোও একটি অভিযোগ করেন উপজেলা সববায় অফিসারের কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটির দু’সদস্য পাইকগাছা সমবায় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির ও কয়রা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা তানভীর মাসুদুল হাসান ১৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী সমিতির কার্যালয়ে দু’পক্ষকে নিয়ে তদন্ত করেন। তদন্তকালে সমিতির নথিপত্র দেখে সাবেক কমিটির বিশেষ করে সাধারন সম্পাদক স্বপন রায়ের বিরুদ্ধে ঋন সংক্রান্ত বিষয়ে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেণ ভুক্তভোগীরা।

এ সময় আরোও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি বিপ্রজিৎ সরকার, সদস্য অনিমা রানী মন্ডল, মনজুর শেখ ও ম্যানেজার অজয় বিশ্বাস।

অনুসন্ধানে জানাগেছে, উপজেলার জিরবুনিয়া গ্রাম উন্নয়ন বহুমুখী সমবায় সমিতি লিঃ রেজিঃ নং-৮৩, গত ১০ ডিসেম্বর-২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে সংশোধিত রেজিঃ নং-৪১,তাং ২-৫-২০০৫ সাল। পাইকগাছা, কয়রা, ডুমুরিয়া, দাকোপসহ বিভিন্ন স্থানের সাড়ে ৫ হাজার সদস্য আছে সমিতিতে। ক্যাশ রয়েছে ৭ কোটি টাকা ও ক্রয়কৃত ২৭ বিঘা জমি,১ টি মহেন্দ্রা, ৭রুম বিশিষ্ট সমিতির দো-তলা কার্যালয়। শেয়ার সদস্য ২ হাজার ৮শ এবং ৬ কোটির মত টাকা ঋন প্রকল্প চলমান।

জানাগেছে, ৬ ফ্রেব্রুয়ারি-১৭ সালের কমিটি একটি ঋনদান প্রকল্প গ্রহন করে ৫ জনের নামে ২৬ লক্ষ টাকার লোন দেখান। এদের মধ্যে সমিতি’র সহ-সভাপতি বিপ্রজিৎ সরকারের নামে ৩ লক্ষ, সাবেক ম্যানেজার অচিন্ত্য মন্ডলের নামে ৮ লক্ষ, বিথিকা রানীর নামে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ও তার স্বামী প্রভাত সরকারের নামে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা ও সমিতির সাবেক সভাপতি প্রয়াত সুশান্ত সরকারের ছেলে সুকল্যানের নামে ১১ লক্ষ টাকার ঋন দেয়। কিন্তু যাদের নামে ঋন দেখানো হলেও কোন রেজিষ্টার বা গ্রহিতরা এ সম্পর্কে কিছুই জানেনা এমন অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি বিপ্রজিৎ সরকার জানান, কাগজে কলমে আমার নামে ৩ লক্ষ ও অন্যদের নামে মোট ২৬ লক্ষ টাকার ঋন দেখানো হয়। যার কোন ভাউচার রক্ষিত নেই। আমার প্রকল্প সভাপতি করা হলেও অথচ তা আমি কিছুই জানিনা। তিনি অভিযোগ করেন ২০২০ সালে প্রকাশ্যে সম্মান ক্ষুন্ন করে আমার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। তিনি আরোও বলেন, এসমস্ত ঋন সংক্রান্ত বিষয়ে সাবেক কমিটির সম্পাদক স্বপন কুমার মন্ডলকে বহুবার বলা স্বত্ত্বেও সে আজও পর্যন্ত সমিতি অফিসে আসেননি।
অন্যদিকে প্রভাত-বিথিকা সরকার দম্পত্তি জানান, দুটি পৃথক লোনে আমাদের নামে ৬ লক্ষ ৮২ হাজার টাকা ঋন দেখানো হয়, অথচ আমরা কিছুই জানিনা।

সুত্র আরোও জানায়, সাবেক ম্যানেজার অচিন্ত্য মন্ডলের নামে ৮ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকার ঋন দেখানো হয়। এ পর্যায়ে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ এনে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। এ নিয়ে যুগ্ম জেলা জজ ৪র্থ আদালতে ৭/১৮ মামলা ও অতিঃ জেলা জজ আদালতে আপিল -২৩/১৭ মিস আপিল মামলা রুজু হয়। পরবর্তীতে সাবেক কমিটি সভাপতি ও সম্পাদক এ ঋনের বিষয়টি ভুল স্বীকার করেন। এ টাকা বর্তমানে ম্যানেজার অজয় বিশ্বাসের ৩৯৮৫ নং রশিদে জমা করা হয়।
এ বিষয়ে সমিতির সভাপতি ভোলটন কুমার মন্ডল জানান, আমি দ্বিতীয় মেয়াদে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হলেও সাবেক কমিটি কোন দায়িত্ব বুঝে দেয়নি। যা কর্তৃপক্ষ অবহিত। ঋন সংক্রান্ত লক্ষ লক্ষ টাকার অনিয়ম করে রেখে গেছে। কেউ-কেউ এর দায়ভার আমার ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে। তবে তদন্তকালে সাবেক আদায়কারী শিউলী রানী তার ভুল বুঝতে পেরে সভাপতির নামে আনিত অভিযোগ লিখিত ভাবে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।

অন্যদিকে সাধারন সম্পাদক অমিতাভ মন্ডল বলেন, মুলত সমিতির বিশাল অংকের টাকা উদ্ধারসহ ১০ বছরের যাবতীয় হিসাব নিতে এ অভিযোগ করেছি।

পুর্বের ঋন সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য নিতে সাবেক কমিটির সম্পাদক স্বপন কুমার মন্ডলের ০১৭১৮ ৪৬১৪৭০ মোবাইল নস্বরে যোগাযোগ করলে ফোন বন্ধ থাকায় মতামত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তবে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ১ দিনের তদন্তে সবকিছু পরিস্কার না হলেও পুর্বের কমিটির ঋন সংক্রান্ত অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। তিনি আরোও বলেন, নথিপত্র পর্যালোচনা ও ৪৯ ধারায় ১০ বছরের হিসাব-নিকাশের তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।