মোস্তাইন বীন ইদ্রিস (চঞ্চল),খুলনা: খুলনায় আগামীকাল শনিবার বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সমাবেশ পণ্ড করতে ‘রাজনৈতিক চাপে’ খুলনায় শুক্রবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দু’দিন আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর রাতে খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি ও খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথ ভাবে এ সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। যদিও বলা হয়েছে, সড়ক-মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচলের প্রতিবাদে এই ধর্মঘট।
বিএনপি’র পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, ২২ অক্টোবর শনিবার বিএনপি’র খুলনা বিভাগীয় গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এই বাস ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। অবশ্য বাস মালিক ও মোটর শ্রমিক নেতাদের একেক জনের কথা একেক রকম। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিকজন বলেছেন, বাস বন্ধ রাখার পেছনে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। এই ধর্মঘটের ফলে সাধারণ নাগরিকরা দুর্ভোগে পড়েছেন। চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেওয়া পরীক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।
খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব বলেন, বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের সঙ্গে শ্রমিক ইউনিয়ন একাত্মতা প্রকাশ করেছে। সে কারণে আমরা কোনো গাড়ি চালাবো না।
খুলনা বাস-মিনিবাস কোচ-মাইক্রোবাস মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়, বরং জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি ও সড়ক-মহাসড়কে নসিমন, করিমন, মাহিন্দ্রা, অতুল, ইজিবাইকসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচলের প্রতিবাদে মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দু’দিন পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে সময় আরো বাড়তে পারে।
এই বিষয়ে খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমির এজাজ খান অভিযোগ করে বলেন, খুলনার বিভিন্ন উপজেলা এবং বিভাগের অন্যান্য ৯টি জেলা থেকে গণসমাবেশে নেতাকর্মীদের যোগদানে বাধা সৃষ্টি করতেই পরিকল্পিতভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্যে ১০ জেলার নেতা-কর্মীদের বিকল্পভাবে সমাবেশে আগে ভাগেই খুলনা শহরে আসতে বলা হয়েছে। যে কোনো মূল্যে ২২ তারিখে নগরীর সোনালী ব্যাংক চত্বরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল হবে। সমাবেশস্থলসহ সারা খুলনা মহানগরী জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
এদিকে, খুলনা থেকে আন্তঃজেলা সংযোগকারী ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ যাত্রীরা ভয়ানক দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন। আরো বেশি বিপাকে পড়েছেন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা। সমাজ কল্যাণ বিভাগসহ একাধিক দপ্তরে নিয়োগের জন্য শুক্রবার লিখিত পরীক্ষার দিন ধার্য রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ একাধিক শহরে এই পরীক্ষা গুলো অনুষ্ঠিত হবে। খুলনার ১৮টি রুটে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২শ বাস চলাচল করে।
সমাবেশে যোগদানে ইচ্ছুকরা আসছেন: আগামীকালের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে ইতোমধ্যে খুলনায় দলীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ চলে এসেছেন। নির্ধারিত দিনে সমাবেশে আসতে ব্যর্থ হওয়া, পুলিশি ঝামেলা এড়ানো, পরিবহন সংকট, সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানিসহসহ নানা কারণে তারা আগে ভাগেই খুলনায় এসে হোটেল, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি বা বিকল্প কোনো পরিবেশে অবস্থান নিয়েছেন। সমাবেশ সফল করতে দলীয় নেতারাও কর্মী-অনুসারীদের বিকল্প পথে খুলনা শহরে জড়ো হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। এদিকে, বিএনপি’র জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ হতে লাঠি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। আজ শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকেও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার খুলনার ডাকবাংলা এলাকার সোনালী ব্যাংক চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করেছে। সমাবেশ আয়োজনে দলটি প্রশাসনিক অনুমতি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বৃহস্পতিবার সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। খুলনা বিভাগের ১০ জেলা, উপজেলাসহ সর্বত্র সভা, বৈঠক, প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে। সমাবেশের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলনও করা হয়েছে। নেতাদের দাবি, সরকার ভীত হয়ে সমাবেশ যাতে সফল না হতে পারে সেজন্য বাস-মালিক-শ্রমিকদের ব্যবহার করে ২১ ও ২২ অক্টোবর খুলনার ১৮টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তারপরও বিএনপির সমাবেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। সমাবেশ সফল হবেই।
খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা জানান, সমাবেশে যোগ দিতে ইতোমধ্যেই খুলনায় নেতাকর্মীরা আসতে শুরু করেছেন। তারা পুলিশি ঝামেলা এড়াতে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি, আবার কেউ কেউ হোটেলে অবস্থান করছেন। খুলনার এই সমাবেশ হবে স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ। খুলনার জেলা-উপজেলার মানুষ প্রয়োজনে পায়ে হেঁটে এসেই সমাবেশে যোগ দেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোন প্রতিবন্ধকতাই নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারবে না।
বিএনপির সমাবেশকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। তারাও শনিবার নগর ও জেলা কার্যালয়ে দলীয় কর্মসূচি রেখেছে বলে জানিয়েছেন খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুজিৎ অধিকারি। তিনি বলেন, খুলনায় বিএনপিকে সমাবেশের নামে কোনরকম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী এ বিষয়ে নজরদারি করে চলেছেন। পরিস্থিতি বুঝে যে কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে, পুলিশের পক্ষ থেকেও বিএনপির এই সমাবেশকে ঘিরে নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা সদরের বাইরের কোনো অপরিচিত বা সন্দহজনক লোক দেখলে তাকে শহরে আসার কারণ জানতে চাওয়া হচ্ছে। তাছাড়া হোটেল ও গেস্টহাউজে যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া কাউকে অবস্থান করতে দেওয়া হবে না বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার রাশিদা সুলতানা জানান, কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি পুলিশ মেনে নেবে না। একটি রাজনৈতিক দল ২২ তারিখে খুলনায় সমাবেশ আহ্বান করেছে। সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনরকম বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি বা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি না ঘটে, সে বিষয়ে পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।