মানছুর রহমান জাহিদঃ সপ্তাহের ব্যবধানে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন কাঁচা বাজারে শাক সবজির দামে আগুন ধরেছে। যার ফলে বর্তমানে ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে সবজি। বাজারে আসলে ক্রেতাদের মন পুড়ছে আর বুক ভরা কষ্ট নিয়ে আধা ব্যাগে ফিরছে বাড়িতে। মঙ্গলবার উপজেলা সদরসহ আশে পাশের কয়েকটি সবজি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারগুলোর চিত্র ছিল অন্যরকম যার ফলে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে সবজি ক্রেতারা। চড়া দামের কারণে কপাল পুড়েছে ক্রেতাদের। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে সকল প্রকার লোকাল সবজির দাম বৃদ্ধিতে ক্রেতাদের কাছে বিক্রেতাদের জবাব দিহি করতে হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কারণ দেখিয়ে আমদানি খরচ বৃদ্ধির কারনে বন্যায় সবজি খেত পানিতে তলিয়ে ও পচে যাওয়াসহ নানাবিধি কারণ সামনে এনে বাজারে সবজি আমদানি করতে খরচ বেশি হচ্ছে বলেই দাম বৃদ্ধির কারণ বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা। এদিকে দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতারা বাজারে গিয়ে তাদের ইচ্ছে মতো সবজি কিনতে পারছেন না বলে জানান ক্রেতারা। দাউ দাউ করে কাচা মরিচ, পটল, ঢেরশ, করলা, ঝিঙ্গে, বেগুন, সহ বিভিন্ন লোকাল শাক সবজির দাম অনেকটাই বেড়েছে। আর তাতেই চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষদের। তাদের স্বল্প আয়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ক্রয়ে নাজেহাল হয়ে যাচ্ছে। পাইকগাছা উপজেলা সদরসহ গদাইপুর বাজার, মানিক তলা বাজার, কাটিপাড়া বাজার, আগড়ঘাটা বাজার, কপিলমুনিসহ বিভিন্ন বাজার গুলিতে মরিচ- ৫৫০, ধনিয়া পাতা- ৫৫০, গাজর- ২২০ টাকা, ডিমের হালি- ৬০ টাকা, লাউ- ১শ টাকা (প্রতি পিস), বেগুন- ১২০, কচুর লতি- ৮০, মুলা ১'শ, পটল- ৮০, ঢেঁড়স- ৬০ টাকা, শসা- ৮০, সিম- ৪'শ, মিষ্টি কুমড়া- ৭০, করল্লা- ১২০, পেঁপে- ৪০, বরবটি- ১'শ, লাল শাক- ৫০, বাঁধাকপি- ৮০, আলু- ৬০, পেঁয়াজ-১২০, কচুরর্মুখী-৭০, টমেটো- ২৮০, কচু-৭০, কাঁচকলা-৭০, রসুন-২৪০, মেটে আলু -৮০, উচ্ছে-১'শ ও পল্লা-৩০ টাকা কেজি সহ সকল শাক সবজির দাম আকাশছোঁয়া। এদিকে গত সপ্তাহে প্রতি কেজির দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা ছিল অথচ সপ্তাহের ব্যাবধানে বাজারগুলিতে যা ইচ্ছে তাই হচ্ছে বলেন ক্রেতারা। মানিক তলা সবজি বাজারে সবজি ক্রেতা হানিফ জানান, এক সপ্তাহ আগে ব্যাগ ভরে বাজার করেছি। কিন্ত আজ ব্যাগের হাফটা ভরেছে। কাচা মরিচ, পটল, করলা, ঝিঙে, টমেটো সহ বিভিন্ন শাক সবজির দাম কয়েকগুন বেড়েছে। আরেক ক্রেতা জানান কোন আয় নেই তারপর আবার শাক সবজির এত দাম, কিভাবে সংসারের খরচ চালাবো ভাবতেই কান্না চলে আসে চোখে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খুচরা ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, পাইকারী বাজারে দাম চড়া থাকার জন্য তারা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন কেজি প্রতি ৫-১০ টাকা। পাইকগাছা উপজেলা সহ দেশে বন্যা থাকায় সবজি খেত পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যাওয়া এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন থাকার কারনে সবজির দামে প্রভাব পড়েছে। সবজি বিক্রেতাদের মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ীরা জানান, পাইকারি বাজার থেকে ক্রয়ের উপর নির্ভর করে খুচরা বিক্রি করতে হচ্ছে। সে কারনে খুচরো বাজার গুলিতে দাম বেশি। এছাড়াও তারা আরও বলেন সবজি বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলেই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিকে চড়া দামে মাল কেনায় খুচরা ব্যবসায়ীদের কম লাভ হচ্ছে বলেও তারা জানান। অপর দিকে ক্রেতারা অতিরিক্ত দামে সবজি ক্রয় করতে না পারায় তাদের সার্ধ্যের বাহিরে চলে যাচ্ছে। তবে সবজির বাজার মনিটারিং থাকলে কিছুটা দাম নাগালের মধ্যে থাকতো বলে মনে করেন সচেতন মহল।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, অতি বর্ষণ ও উত্তর বঙ্গে বন্যার কারণে সবজির খেত নষ্ট হওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ খুবই কম। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় দ্রব্য মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন ভাবে ফসল উৎপাদন হলে আবার জিনিস পত্রের দাম ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে চলে আসবে। তবে আমরা বাজার মনিটরিং করছি।