এইচ এম সাগর হিরামন, খুলনা অফিসঃ খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা উপজেলার পাশেই অবস্থিত ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের বুক চিঁরে বয়ে গেছে পাচুরামের খাল। ৬’শত ফুট দৈর্ঘ এ খালের দাগ নম্বর ৪০০৪৯। খালের শুরুতে ৫১ ফুট প্রস্থ হলেও শেষে এসে ৩৫ ফুট প্রস্থ। বর্ষা মৌসুমে এ খাল দিয়ে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হয়।
এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে খালের এই পানির উপর নির্ভর করে গড়ে উঠেছে চিংড়ি ও মাছের ঘের। খালের পাড়ে অনেকেই মাছের ঘেরের পাশাপাশি ও সবজির আবাদ করে থাকে। বর্তমানে দখল বিলীন এ খাল। খালের শুরুতে ডোবার মতো থাকলেও বাকি পুরোটাই বালু দিয়ে ভরাট করে সাইনবোর্ড লাগিয়েছে একটি আবাসন প্রকল্প। এতে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বর্ষা ঋতু আসার পূর্বেই জলাবদ্ধতার আশংকা করছেন স্থানীয়রা। পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডুমুরিয়ার গুটুদিয়ায় পাচুরামের খাল বালু দিয়ে ভরাট করে একটি আবাসন প্রকল্প সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। আবাসন প্রকল্পের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় মুখ খুলছেন না স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলছেন এসব দখলদারেরা প্রভাবশালী। তাই প্রশাসনকে জানানোর পরও তাদের দখলদারিত্ব বন্ধ হয় না। এতে নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সুত্রমতে, জেলার অন্তত ২৫ শতাংশ খাল ভরাট হয়ে বেদখলে চলে গেছে। খাল ভরাট করে বাড়ি-ঘর বা স্থাপনা নির্মাণ করছেন প্রভাবশালীরা। জেলায় সবচেয়ে বেশি সরকারি খাল ও জলাশয় ভরাটের ঘটনা ঘটছে ডুমুরিয়া উপজেলায়। শহরের কাছে থাকায় এ উপজেলার চক আসানখালী, বিলপাবলা, জিলেরডাঙ্গা, ভেলকামারী, উপজেলা সদরের জোয়ারের বিলসহ প্রায় প্রতিটি এলাকায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জমি কিনে তা বালি দিয়ে ভরাট করছে। একই সঙ্গে খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগের খাল ভরাট করা হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শরীফ আসিফ রহমান বলেন, সরকারি খাল ভরাট করা বেআইনি। এ ধরনের খালের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। এরূপ যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, কোন অবস্থাতেই কৃষি জমির শ্রেণির পরিবর্তন করা যাবে না। যদি বিশেষ কারণে শ্রেণি পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়ে তবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে তা করতে হবে। খাল উদ্ধার করে সেটি খনন করে জলাধার সৃষ্টি করলে কৃষি পণ্য উৎপাদনে ভুমিকা রাখবে।
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: ইকবাল হোসেন বলেন, সরকারি খাল ও জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। সে ক্ষেত্রে ডুমুরিয়া গুটুদিয়ার পাচুরামের খালসহ সকল খাল দখলের অভিযোগ প্রমানিত গলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরা তদন্ত পৃর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।
খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, সরকারি খাল ও জলাশয় ভরাট করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যারা এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য পলাশ বলেন, এক সময়ে এখানে খরস্রোতা খাল ছিলো। এখন নেই। প্রভাবশালীদের লোলুপ দৃষ্টির কাছে আমরা ক্ষীন। তবে কে বা কারা দখল করেছে তা নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।
গুটুদিয়ার ইউনিয়ন চেয়ারম্যান তুহিনুল ইসলাম বলেন, দখলদাররা সবাই বিত্তবান ও প্রভাবশালী। তাদের কাছে নেতৃত্ব ধোপে টিকছে না। সে ক্ষেত্রে আমি নিজেকে ব্যার্থ বলবো।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া ফুলতলা) আসনের এমপি ও সাবেক মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। অপরাধী মানে সে অপরাধী তার কোন আলাদা পরিচয় নেই। সে যে-ই হউক । খাল ভরাট কেউ করতে চাইলে বা করলে অবশ্যই তা অবমুক্ত করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে আমার সর্বাত্বক সহযোগিতা থাকবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনার সমন্বয়কারি এ্যাড বাবুল হাওলাদার বলেন, নদী নালা খাল বিল, এটা দেশের প্রান। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, মানুষের জীবন জিবীকা ইত্যাদির পূর্বশর্ত। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকারি খাল ভরাট করা বা শ্রেনী বিভাগ করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। প্রাকৃতিক খাল ভরাট করে কোন প্রকল্পই কাম্য নয়। যেকোন মূল্যে এরকম কর্মকান্ড বন্ধ হওয়া উচিত। তিনি এ সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও আইনত পদক্ষেপের আহবান জানান।