বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকাঃ আব্দুল হামিদ সাহেবের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের দ্বিতীয় মেয়াদোত্তীর্ণ হতে আর যৎসামান্য সময় বাকি এবং এ কারণেই আবারও সবার মনে ভাবনা ও আলোচনা দানা বেঁধেছে। হিসাব মতে আগামী বছরের ২৪শে এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে হামিদ সাহেবের দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রপতি কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে ৫ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন এবং সংবিধানের ৫০(৩) অনুচ্ছেদের আরোও উল্লেখ আছে যে, একাধিক্রমে হোক বা না হোক দুই মেয়াদের অধিক রাষ্ট্রপতি পদে কোন ব্যক্তি অধিষ্ঠিত থাকতে পারবেন না। অর্থাৎ মোঃ আব্দুল হামিদের রাষ্ট্রপতিত্ব চলতি মেয়াদই আজীবনের জন্য শেষ হয়ে যাবে।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে অথবা মেয়াদ শেষ হইলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। সেই মর্মে বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে আগামী ২০২৩ সালের ২৩শে এপ্রিল, রোজ রবিবার।
সংবিধানের বিধান অনুযায়ী যেহেতু ২৩শে এপ্রিলের আগে ৯০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে, সেহেতু আগামী বছরের ২৪শে ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে এবং আব্দুল হামিদ সাহেবের সাংবিধানিকভাবে আবার রাষ্ট্রপতি হওয়ার কোনো সুযোগ নাই, তাই এবার রাষ্ট্রপতি হবেন অন্য কেউ।
ফলে কে হতে যাচ্ছেন নয়া রাষ্ট্রপতি এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে এখনই আলাপ-আলোচনা এবং নানা রকম কথাবার্তা শুরু হয়েছে। তাছাড়া এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করাটি নানা কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
উল্লেখ্য যে, আব্দুল হামিদ সাহেব ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে অভিষিক্ত হন। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালের ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন দেন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত, বর্ষীয়ান নেতা জিল্লুর রহমান সাহেবকে। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুর পরে তৎকালীন সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ সাহেব রাষ্ট্রপতি হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন এবং প্রথম মেয়াদোত্তীর্ণ হবার পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও তিনিই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি পদে অভিষিক্ত হন। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে রাষ্ট্রপতি পদটি আলংকারিক হলেও নানা কারণেই এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদ।
বিশেষ করে দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন। এই জন্যই রাষ্ট্রপতি হিসেবে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়াও সংসদ নির্বাচনের আগেই রাষ্ট্রপতি পদটি নির্বাচিত হবে বলে এখন থেকে এনিয়ে জল্পনাকল্পনার উদ্ভব দেখা যাচ্ছে সর্বোপর্যায়ে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে সংলাপের আয়োজন করা হয়েছে, এই সংলাপের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক বিভাজন সুস্পষ্ট হয়েছে। রাষ্ট্রপতির পদটিকেও নিরপেক্ষতার জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং এরকম একটি পরিস্থিতিতে নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবেন সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
উল্লেখ্য যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর এদেশের ক্ষমতায় আসে। আর সেই থেকেই তারা টানা ৩ বার রয়েছেন ক্ষমতায়। তাদের এই ৩ বারের ক্ষমতার আমলে প্রথমবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন জিল্লুর রহমান। এরপর তাঁর মৃত্যুর পর সেস্থানে স্থলাভিষিক্ত হন মোঃ আব্দুল হামিদ সাহেব কিন্তু সংবিধানের ধারা অনুযায়ী তিনি আবার নতুন মেয়াদে রাষ্ট্রপতি থাকতে পারবেন না বিধায় বলাই যেতে পারে যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই নতুন রাষ্ট্রপতি পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আপনার মতামত লিখুন :