বিশেষ প্রতিনিধি: অতিরিক্ত জিবি আদায়ের প্রতিবাদে ধর্মঘটে নামলেন সিএনজি চালকরা। ‘দেবীদ্বার-চান্দিনা’ সড়কে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ওই ধর্মঘট চলে। পরে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে সিএনজি চালকদের এক মতবিনিময়ে নিয়ম বহির্ভূত জিবি আদায়ের বিষয়টি তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসে চালকরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএনজি চালক অভিযোগ করেন, বার্ষিক রেজিষ্ট্রেশন ফি, মাসিক টোকেনের টাকা এবং এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যাওয়ার পথে দৈনিক জিবি দিয়ে শুণ্যহাতে ঘরে ফিরতে হচ্ছে আমাদের। একদিকে লকডাউন অপরদিকে চাঁদার টাকা পরিশোধ করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতে ভিষণ কষ্ট হয়। নুন আনতে পান্তা ফুরায় আমাদের, আমরা কোথায় যাব? প্রশাসনও আমাদের আর্তি শোনেন না, এখন যদি সাংবাদিক ভাইয়েরা আমাদের নাম প্রকাশ করেন তাহলে ঘর থেকে তুলে এনে ওরা মারধর করবে।
দেবীদ্বার চান্দিনা সড়কের সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ষ্ট্যান্ড ইজারাদার কাজী সুমন বলেন, আমি শুধুমাত্র দেবীদ্বার চান্দিনা সড়কের পৌর এলাকার ইজারা নিতে ভ্যাট ও অন্যান্য খরচ সহ প্রায় ৪৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছি। আমি ৪০/৫০টি সিএনজি বার্ষিক রেজিষ্ট্রেশন ফি নিয়েছি ২হাজার ৫শত টাকা করে, দৈনিক ৮০ টাকা জিবি নেই, বিবিধ খরচের জন্য মাসিক টোকেনে ২৫০টাকা করে নেই। অপর দিকে চান্দিনা বাগুর স্টেশনের সাবেক ইজারাদার হাবু সরকার অবৈধভাবে আমার সিএনজিগুলো থেকে দৈনিক জিপি নেন আরো ৫০টাকা, তার পর প্রতি টিপে বাগুর স্টেশনে যতবার যাবে ততবারই ২০ টাকা করে আদায় করবে। এর পরও ১৫/২০টি ভিআইপি সিএনজি থেকে প্রতিদিন ২৫০ টাকা করে আদায় করেন, যাদের স্টেশনে যাত্রীর জন্য বসে থাকতে হয়না। আমার স্টেশনের সিএনজিগুলো পেসেঞ্জারের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়, পেসেঞ্জার উঠালে মারধর করে বের করে দেয়। অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারনে সিএনজি ড্রাইভাররা আজ ধর্মঘটে নেমেছেন।
অপরদিকে বাগুর সিএনজি স্টেশনের সাবেক ইজারাদার হাবু সরকার বলেন, গত জুন মাসে ইজারা দেয়া বন্ধ করায় আমি এক মাস বাকী থাকতেই সিএনজি স্টেশন ছেড়ে দিয়েছি। আমার পক্ষ থেকে কোন জিবি বা চাঁদা নেয়ার প্রশ্নই উঠেনা। দেবীদ্বারের কাজী সুমন প্রতিটি সিএনজি থেকে ৫ হাজার টাকা বার্ষিক রেজিষ্ট্রেশন ফি আদায় করছে, মাসিক টোকেনে নিচ্ছে ৬শত টাকা করে, দৈনিক জিপি আদায় করছে ৮০ টাকা করে। এর পরও পৌরসভার দক্ষিণ সীমান্তের পোনরা এলাকায় জিপি আদায়ের জন্য একটি টিম প্রতিদিন মোতায়েন করে রাখে। এ সড়কে যাতায়তকারী শত শত সিএনজি পৌরসভার এলাকায় না ঢুকলেও জিবি এবং মাসিক টোকেনের টাকা বাধ্যতামূলক দিতে হয় তাদের। জিবি না দিলে লাঞ্ছনার স্বিকারই নয়, সিএনজি আটক করে রাখার ঘটনাও নিত্যদিনের। তাই যাত্রীদের থেকে সিএনজি চালকদের অতিরক্ত ভাড়া আদায়ে বাগবিতন্ডা সহ নানা অনাকাঙ্খীত ঘটনা ঘটছে। এসবের প্রতিবাদ করায় কাজী সুমন কয়েকজন সিএনজি চালককে ক্ষেপিয়ে ধর্মঘটের নামে আমার বিরুদ্ধে অপ-প্রচার চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাড়া নির্ধারন কমিটির সাবেক আহবায়ক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার বলেন, পৌরসভার ইজারা দেয়ার মতো নির্ধারিত কোন জায়গা নেই, হাইওয়ে সড়কের জানজট নিরসন, ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জায়গা এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী চলাচল নির্ভিগ্ন করতে সিএনজি ইজারা প্রদান বন্ধের দাবী জানিয়ে আসলেও স্থানীয় প্রশাসন ওই দাবী কর্নপাত করেননি। ফলে যানজটই নয়, সড়কে দূর্ঘটনায় জানমলেরও ব্যপক ক্ষতির মুখমুখী হতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আরিফুর রহমান বলেন, চান্দিনা বাগুর স্টেশনে অতিরিক্ত জিবি আদায়ের অভিযোগ নিয়ে কয়েকজন সিএনজি চালক থানায় আসলে তাদের এ জাতীয় ঘটনা ঘটলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া এবং থানা পুলিশের সহযোগীতায় ওখানে সিএনজি’র শৃংখলা রক্ষায় বলন্টিয়ার্স নিয়োগ করা হবে বলে তাদের জানিয়ে দেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান বলেন, দেবীদ্বার পৌর এলাকার বাহিরে সকল সিএনজি স্টেশন ইজারা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শোনেছি বাগুর স্টেশনে চাঁদাবাজী হচ্ছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে এনেছে। সিএনজি স্টেশন ইজারা প্রদানের বৈধতা জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, স্থানীয় সরকারের আওতাধীন সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভার উন্নয়নে ইজারা দেয়ার বৈধতা আছে।
এ ব্যাপারে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, আমি সকল সিএনজি স্টেশন ইজারা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছি। পৌরসভা আমার এখতিয়ারে না থাকায় তা বন্ধ করতে পারিনি। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও ব্যাক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে সিএনজি স্টেশন ইজারা দেয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ কিংবা পৌরসভা ইজারা দিতে হলে নিজস্ব জায়গায় কিংবা বাস স্টেশন থাকলে শুধু মাত্র সেখানেই ইজারা দেয়া যায়। অন্যথায় সড়কের যানজট সৃষ্টিকরে, মালিকানা প্রতিষ্ঠান বা মার্কেটের ক্ষতি করে কিংবা অন্যের জায়গায় ইজারা দেয়ার কোন নিয়ম নেই।
আপনার মতামত লিখুন :