এম শিমুল খান/মনিরুজ্জামান অপুর্বঃ রাজধানীসহ দেশবাসী জানেন অলিগলিতে দাঁড়িয়ে থেকে একদল উৎশৃঙ্খল ছেলেদের ইভটিজিং,চিৎকার চেঁচামেচি আর ছিনতাইয়ের মত চরম নির্মমতার কথা। এরা যদি কোন পথচারী মা-বাবার সাথে থাকা যুবতী মেয়েকে ইভটিজিং ও করে তবুও কিছু বলার নেই। ব্যাপারটা এমন বেশি কথা বললে প্রাণ নিয়ে যেতে পারবি না। আর রাজধানীতে অপরাধের প্রধান একটি ভয়ঙ্কর রূপ এই কিশোর গ্যাং। গ্যাং কালচারের’ নামে সারা দেশে কিশোরদের একটি অংশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। তারা দলবেঁধে মাদক সেবন করার পাশাপাশি পাড়া-মহল্লায় নারীদের উত্ত্যক্ত করে। ঝুঁকিপূর্ণ বাইক ও কার রেসিং তাদের ‘ফ্যাশন’।আধিপত্য বিস্তার আর কথিত ‘হিরোইজম’ দেখাতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধে জড়ায় তারা। এতে ঘটছে খুনোখুনির ঘটনাও। ‘ভার্চুয়াল’ জগতে ‘সিক্রেট গ্রুপ’ তৈরি করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করছে গ্যাংয়ের সদস্যরা। সেখানে ভয়ঙ্কর ‘সিক্রেট মিশনের’ খুঁটিনাটি বিষয়েও আলোচনা করছে। এসব কিশোর গ্যাংয়ের রয়েছে বাহারি সব নাম।
বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের এমন লাগামহীন দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কিশোর অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর পদক্ষেপ (হার্ডলাইন) নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্টরা। এরই অংশ হিসেবে ‘বিশেষ অভিযান’ শুরু হয়েছে। রাজধানীতে এখন ৭০ থেকে ৭৫টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গিয়েছে। এর মধ্যে উত্তরা ও মিরপুর এলাকাতেই গ্যাং রয়েছে সিংহভাগ। মারামারি, ছিনতাই, মাদকের কারবার এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে এসব কিশোররা। কয়েকদিন আগেই মিরপুরের ভয়াবহ হত্যাকান্ডের খলনায়করা কিন্তু এসব কিশোর গ্যাংয়েরই সদস্য কিংবা ওস্তাদ ছিল।
আর এসব কিশোর গ্যাং গ্রুদের মদদ দিচ্ছে কথিত বড় ভাইরা, ক্ষেত্রবিশেষ রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সম্প্রতি নগরীর উত্তরা আজমপুর রেললাইনের পাশে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় রক্তাক্ত হয় এক কিশোর। সিসিটিভির আরেকটি চিত্রে দেখা যায় একই এলাকায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের মহড়া। কয়েক বছর আগে উত্তরায় আদনান নামে এক ছাত্র কিশোর গ্যাংয়ের বলি হয় । উত্তর খানে তুচ্ছ ঘটনায় এক কিশোরকে খুন করে গ্যাং সদস্যরা। এর পরপরই ঘটে আরও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড। এছাড়াও তাদের হামলার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষও। র্যাব-পুলিশের অভিযানে এ পর্যন্ত কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকশ’ সদস্য গ্রেফতার হলেও এখনও সক্রিয় আছে অনেক। সাধারণ মানুষ বলছে, ‘অনেক সময় রাতে চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। রাস্তায় মারধর করে। অনেক সময় ছিনতাইয়ে বাধা দেয়ায় ছুরিকাঘাত করে।
গ্যাং লিডার হিসাবে নাম আছে এমন কিশোরদের অনেকে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। নেই স্থায়ী ঠিকানা। বেশ কয়েকজন রীতিমতো বখাটে বস্তিবাসী। ছিন্নমূল কিশোরদের অনেকে ইতোমধ্যে হাত পাকিয়েছে ছিনতাই-চাঁদাবাজিতে। পেশাদার অপরাধী হিসাবেও তালিকাভুক্ত অনেকে। কেউ কেউ জমি দখল বা মারামারিতে রীতিমতো ভাড়া খাটে। রাজনৈতিক পেশিশক্তির ঢাল হিসাবেও এদের ব্যবহার করা হয়। সংগত কারণে এদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন এলাকার প্রভাবশালী কিছু রাজনৈতিক নেতা। রাজধানীর মিরপুর এলাকা। বৃহত্তর এই এলাকায় এসব কিশোর গ্যাং সদস্যের উৎপাত আর দাপটে মিরপুরবাসীর অনেকের ঘুম হারাম। অনেকে জিম্মি হয়ে আছেন এদের কাছে।
পুলিশের তালিকা, মতামত এবং টিম ক্রাইম ডায়রির অনুসন্ধানে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। তালিকা অনুযায়ী ৭টি থানা এলাকায় কিশোর গ্যাং ২৩টি। এদের সদস্যসংখ্যা পাঁচ শতাধিক। গ্যাং লিডারসহ বেশির ভাগের বয়স ১৮ থেকে ২২ বছর। প্রতিটি গ্যাংয়ের পেছনের মদদদাতা রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। এছাড়া নাম আছে স্থানীয় দাগি মাস্তানদেরও। এদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক নেতা আবার কেউবা কাউন্সিলর পদবীর। সম্প্রতি জুন ২৪,২০২১ইং সালের দৈনিক যুগান্তরের ১২পিএম এর একটি তোহুর আহমেদের লেখা একটি প্রতিবেদনে এদের নামও প্রকাশিত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, কিশোর গ্যাং গ্রুপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাইনস্টার গ্রুপ, যার নেতা সিয়াম। টিএমসি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে মামুন আর শিশির। পাকুরিয়ার সোলেমান-মোবারক গ্রুপও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য জানায়, ‘এমনও আছে, মানুষ বিভিন্ন জায়গায় মামলাও দিয়েছে। কখনো আবার গ্রেফতারও হয়েছি। বড় কোন ঘটনা ঘটালে এলাকা ছেড়ে যায় অনেকে। পরে পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে পুনরায় ফিরে আসে।
কথিত বড় ভাইদের মদদেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্যাংয়ের কিশোররা। জানতে চাইলে ওই কিশোর বলেন, ‘অনেক সময় কোন সদস্য ধরা পড়লে বাকিরা বড়ভাইদের জানায়। তিনি আবার সব জায়গায় কথা বলে ছাড়িয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।’ পুলিশ রাজধানীতে ৭০ থেকে ৭৫টি গ্রুপের দেড় থেকে ২ হাজার জন।
আপনার মতামত লিখুন :