• ঢাকা
  • সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা 


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৪, ৯:২৫ অপরাহ্ন / ১৭
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা 

মানছুর রহমান জাহিদঃ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় ফুল শাপলা। বিভিন্ন বিলে শাপলার সৌন্দর্য। শাপলা আমাদের জাতীয় ফুল। দশ-পনের বছর আগেও বিভিন্ন বিলে- ঝিলে প্রচুর পরিমান বিভিন্ন রঙ্গের শাপলা দেখা যেতো। কিন্তু এখন আর সেই আগের মত শাপলা ফুল চোখে পড়েনা। গ্রামগঞ্জে কালের পরিবর্তনের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের নয়নাভিরাম জাতীয় ফুল শাপলা।

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সাধারণরত ৫ প্রকার শাপলা দেখা যায়। শাপলা গুলো হচ্ছে সাদা, লাল, বেগুনী, হলুদ ও নীল রঙের। এদের মধ্যে সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ কারণে নদী-নালা, খাল-বিলে বিশেষ করে স্রোতবিহীন জলাশয়ে শাপলা ফুলে ছেয়ে থাকতো একটা সময়। সাধারণ মানুষ বিলের পানিতে অযত্নে লালিত শাপলার লতা সবজি হিসেবে খায় ও ফল ঢ্যাভ নামে পরিচিত এই খাদ্য সংগ্রহ করে পুড়িয়ে বা সিদ্ধ করে খাওয়া যায়। তবে অবহেলা ও অযত্নে আর কৃষি জমিতে অতিরিক্ত পরিমাণে কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন বিল-নদী-নালায় জাতীয় ফুল শাপলা হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম প্রায়।

খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন আর সাদা, লাল ধরণের শাপলা দেখা যায় না। কিন্তু বেগুনি ও নীল শাপলা প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে দিনদিন। যেখানে পানি জমে থাকে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে শাপলা ফুল ফোটে। শাপলা ছোট বাচ্ছাদের খুবই প্রিয়। ছোটরা শাপলা ফুল তুলে শাপলা ফুলের মালা গলায় পড়তো। আবার ড্যাভ শিশুদের প্রিয় খাবার এবং গ্রামগঞ্জের লোকেরা ড্যাপ দিয়ে খই ভেজে মোয়াসহ বিভিন্ন প্রকার সুস্বাদু খাবার তৈরি করতো। গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সবজি হিসেবেও খুবই প্রিয় শাপলা। অনেকে আবার শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকতো। এছাড়াও শাপলার অনেক ঔষধিগুণ রয়েছে। শাপলা দিনের বেলা ফুটে থাকে এবং সরাসরি কান্ড ও মুলের সাথে যুক্ত থাকে। পাতার সাইজ ২০-২৩ সে.মি. এই ফুলে ৪ থেকে ৫টি বৃতি থাকে ও ১৩ থেকে ১৫টি পাপড়ি থাকে। বছরের সবসময় শাপলা ফুল ফুটতে দেখা যায়। তবে বর্ষাকালে ও শরৎ মৌসুমে এই উদ্ভিদ জন্মের শেষ সময়।

এ বিষয়ে উপজেলার রয়্যাল ফিস ট্রেডিং এর সত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া রিপন বলেন, এক দশক আগেও পাইকগাছার প্রতিটি মাঠ, বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর পরিমাণে শাপলা ফুল দেখা যেতো। তখন পুকুর খাল-বিল ও জলাশয়গুলো লাল, সাদা, গোলাপী, বেগুনী, নীল ও বিরল প্রজাতির হলুদ শাপলা ফোটার কারণে চারিদিকে নয়ানাভিরাম দৃশ্যে পরিনত হতো। কিন্তু বর্তমানে সাদা প্রজাতির শাপলা ফুল গুলো বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেলেও দেখা যাচ্ছে না লাল, নীল বেগুনী ও গোলাপী শাপলা। এসব শাপলা ফুল হারিয়ে যাওয়া পিছনে বিভিন্ন কারণো রয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি জানান, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাট করে কৃষি জমি তে ঘর-বাড়ী তৈরি। আবার ফসলী জমিতে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার না করা এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের জাতীয় ফুল শাপলা হারাতে বসেছে। এক সময় বিলে-ঝিলে পুকুরে বর্ষা মৌসুমে নানা রঙের শাপলা ফুলের বাহারী রূপে মানুষের নয়ন জুড়িয়ে যেত। এখন আর বাহারী রূপ গ্রামবাংলায় আর দেখা যাচ্ছে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের জাতীয় ফুল শাপলা।