মনিরুজ্জামান অপূর্ব,ঢাকা : ভিন্নতার আঙ্গিকে দেখতে গেলে তৃতীয় লিঙ্গের জন্ম হওয়া থেকেই যাঁরা নিজ পরিবার থেকে ত্যাজ্য। তাঁরা আমার আপনার চোখে হিজড়া। এঁদের ভবিষ্যৎ বেঁচে থাকার কী আছে অবলম্বন। নেই সংসার। অন্তিম কালে নেই এঁদের আশার আলো জ্বালানোর প্রদীপ।
হিজরারা নবজাতক শিশুদের আশির্বাদের সূত্র ধরে প্রতিটা নবজাতকের পরিবারে এসে আপন হৃদয়ের মাঝে বুকে জড়িয়ে ঢোলোক বাঁজিয়ে নেচে-গেয়ে বিভিন্ন আঙ্গিকে আমাদের নবজাতক শিশুকে রংঙ্গে-ঢঙ্গে আশির্বাদ করে মায়ের কোলে তুলে দিয়ে দাবী করে নগদ অর্থ, শাড়ী ও চাউল।
কিন্তু ওদের ওই সামান্য দাবীটাকে আমরা স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারিনা। সেই ক্ষেত্রে আমরা বাক বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ি হিজরাদের সাথে।কিন্তু ওদের চাহিদা লক্ষ টাকা না হলেও সন্তান জন্ম গ্রহণ করার পরপরই আমরা পারিবারিক ভাবে থাকি হিজরা আতংকে। এই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জীবিকার উৎস ভদ্র সমাজের লোকদের কাছ থেকে হাত পেতে চেয়ে নেওয়া।
আজ এই করোনার মহামারীতে তাঁরা বড়ই অসহায় । এমন একজন কুষ্টিয়ার খোকসা পৌরএলাকার থানা পাড়ার হিজরা বস্তির হিজরা খুশি। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়েছেন তিনি।
করোনাকালীন জীবন দশার কথা জানতে চাইলে হিজরা খুশি দু’হাতে করোতালী বাঁজিয়ে করুন দুঃসহ জীবনের মর্মান্তিক ক্ষুধা যন্ত্রার নিঃসঙ্গ জীবনের কথা এক এক করে বলতে থাকেন।
আমরা কষ্টে জীবন কাটাচ্ছি প্রায় দুই বছর যাবৎ করোনার কারণে আমাদের প্রধান আয়ের পথ বন্ধ। কোনো বাসাবাড়িতে নবজাতক নাচানোর জন্য গেলে আমাদের বাড়ির মধ্যে বাড়িওয়ালারা ঢুঁকতেও দেয়না। আমরাও জোর করে ঢুঁকিও না।
তিনি আরো বলেন, আমাদের কেউ দেখে না। এমনিতেই আমরা হিজরা।সমাজের মানুষরা আমাদের ঘৃণা করে।
খুশির নিকট সরকারি ভাবে তাঁরা কোন সহযোগিতা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে হিজরা খুশি বলেন,আমরা দুই বছরের মধ্যে মাত্র একবার সরকারি ত্রাণ পাইছি। এছাড়া আর কোন সাহায্য পাইনি।সমাজের কোন বিত্তবানরাও আমাদের খবর রাখেনি।
হিজড়াদের ঘৃণা না করে সামাজিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। তারা অবহেলার পাত্র নয়; তারা তো কারও সন্তান, কারও ভাই, কারও বোন বা রক্তের আত্মীয়।
আপনার মতামত লিখুন :