সায়মন সরওয়ার কায়েমঃ কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার শষ্যভান্ডার খ্যাত ধনকা বিলে ধান কাটা শুরু করতে পারছেননা চাষী ও গৃহস্হরা।ফসল কাটার মাস অগ্রাহায়ন শেষ হতে চলছে। তবুও এখানে শুরু হয়নি ধান কাটা।
উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের মধ্যখানে আনুমানিক তিন সহস্রাধিক হেক্টর আয়তনের এ বিলে চাষকৃত আমন ধান এখনো পাকেনি।
কৃষকরা বলছেন, জলাবদ্ধতার কারনে গত ভাদ্র আশ্বিন মাসে আমন ধান রোপন করতে প্রায় দেড় মাস বিলম্ব হয়েছে। তাই ধান পাকার মৌসূমও পিছিয়ে গিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরেই বর্ষায় এরকম জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে বিলজুড়ে।
এর কারন অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে উদ্বেগজনক তথ্য। ভূমি মালিক, কৃষক ও বর্গা চাষীরা বলছেন, গত প্রায় দুই দশক ধরে ধনকা বিল থেকে ক্রমাগত টপ সয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে প্রতি বছর বিলের জমি নীচু হতে হতে পুরো বিল এখন প্রায় পুকুরের মত হয়ে গেছে। তাই বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে বিলজুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
ভূমি মালিক হামিদ বলেন, বিলের দক্ষিণ পাশে পানি নিস্কাশনের খাল আছে। কিন্তু এখন খালের চেয়ে বিল অন্ততঃ গড়ে পাঁচ ছয় ফুট নীচু হয়ে গেছে। ফলে ঐ খাল দিয়ে আর পানি নিস্কাশন হয়না। তাই জলাবদ্ধতা এখন বিলের নিত্যসঙ্গী। ফলে আমন ধান রোপন, উৎপাদন ও সংগ্রহ পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর।
এলাকাবাসী জানান, প্রতি বছর আমন ধান কাটা শেষে পৌষ-মাঘ মাসে শুরু হয় ফসলী জমির ওপরের অংশ (টপ সয়েল) কাটার প্রতিযোগিতা।
কৃষক জাফর আলম বলেন, বিলজুড়ে ডজন খানেক শক্তিশালী এক্সেভেটর (ভেকু) নামিয়ে রাতদিন টপ সয়েল কাটা শুরু করে কয়েকটি সিন্ডিকেট। শতাধিক ডাম্প ট্রাকযোগে এসব মাটি সরবরাহ করা হয় বিভিন্ন ইট ভাটায়। এভাবে আবার রবি ধান রোপন পর্যন্ত দেড় দুই মাস দরে চলে ভয়াবহ এ টপ সয়েল কাটা।
স্হানীয়রা বলেন, ধনকা বিলের দুইটি ইট ভাটা ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার আরো অন্ততঃ দশটি ইট ভাটা ধনকা বিল থেকে মাটি সংগ্রহ করে। এর ফলে বিলের দো ফসলী উর্বর জমিগুলো নীচু হতে হতে এখন কোমর সমান গভীরতার জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে।
তাই প্রতি বছর আমন মৌসূম পিছিয়ে যায়। এর ধারাবাহিকতায় এ বছর এখনো ধানকাটা শুরু করতে পারেননি কৃষকরা। জমির উপরের উর্বর অংশ কেটে নেয়ায় একই সাথে কমছে ধান উৎপাদন।
এলাকার সচেতন মহল বলেন, এভাবে টপ সয়েল কাটা বন্ধ না হলে শষ্য ভান্ডার খ্যাত ধনকা বিল বিরান ও পরিত্যক্ত জলাভূমিতে পরিণত হতে বেশী দেরী লাগবেনা৷ এমনটি হলে এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে।
ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা বলেন, ফসলী জমি থেকে কেউ টপ সয়েল কাটলে আইনগত ব্যাবস্হা নেয়া হবে।