নিজস্ব প্রতিবেদক,খুলনাঃ খুলনার শেখ পাড়াস্থ্ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-৪ এ কর্মরত বঙ্গবন্ধু পরিষদ নেতা প্রভাবশালী উপ-সহকারী প্রকৌশলী আল মামুন চৌধুরীর ন্যাককার জনক হুমকি ও অনৈতিক প্রস্তাবে ভীত, সন্ত্রস্ত ও তীব্র অপমানে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের সিসিইউতে এক সপ্তাহ চিকিৎসা নিতে হয়েছে উক্ত দপ্তর এলাকার একজন রুগ্ন ক্ষুদ্র শিল্প গ্রাহককে।
বিষয়টি নিয়ে এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহক ও সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ফলে যে কোন সময়ে অভিযুক্ত প্রকৌশলীর উপর ও তার দপ্তরে হামলা ও হাঙ্গামা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। উক্ত ডিপ্লোমা প্রকৌশলীর এরকম অনধিকার, অনৈতিক ও বেআইনী কর্মকাণ্ডের প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ চেয়ে কেএমপির সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি ( জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী গ্রাহক যার নাম্বার -৩৭, তারিখ ০১.১২.২৪।
জি ডি সূত্রে এবং খুলনা মহানগরীর ডালমিল মোড়স্থ বিসমিল্লাহ মহল্লার স্থায়ী বাসিন্দা ভুক্তভোগী গ্রাহক কাজী নুরুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সাতক্ষীরা রোডে ” নুর পোল্ট্রি এন্ড ফিস ফিড কমপ্লেক্স ” নামে তার একটি ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর,বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ – ৪ এর নিরালা ফিডারের আওতায় উক্ত ক্ষুদ্র শিল্পে ৪৫ কিলোওয়াটের একটি থ্রি ফেজ বিদ্যুৎ সংযোগ( এল টি আই ) রয়েছে যার হিসাব নম্বর -১০৪ ২৩৯০ ১২ এবং বর্তমান প্রিপেইড মিটার নম্বর ৫০১৩ ০০০০ ৮৬৬। গ্রাহক ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছেন।
গ্রাহকের ডিজিটাল মিটারটি ওজোপাডিকোর দপ্তর থেকে প্রিপেইড মিটার দিয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। গ্রাহক বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী আদর্শের মানুষ হওয়ায় বিগত সরকার আমলে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার মুখে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসের পরে মিলটি আর ভালোভাবে চালাতে পারেননি। ফলে উহা একটি রুগ্ন ক্ষুদ্র শিল্পে পরিণত হয়। ইতিমধ্যে মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে কারখানাটির টিনের চাল কেটে চোর ঢুকে ছোট বড় দুই তিনটি মটরসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। উল্লেখ্য, গ্রাহকের বড় ছেলে কাজী মিজানুর রহমান বিএনপি খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন ১৯ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক।
দীর্ঘ প্রায় সাত বছর কারখানাটি অনেকটা অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। গ্রাহক একজন বয়স্ক মানুষ, কিডনি রোগী এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস নিতে হচ্ছে। সাত বছর পরে গত ১১.১১.২৪ তারিখ ওজেপাডিকোর বিবিবি-৪ দপ্তর থেকে দাপ্তরিক মোবাইল নাম্বার ০১৭০০-৭০৯৭৭১ থেকে গ্রাহকের মোবাইল নাম্বারে ফোন করে বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়ার জন্য বলে।
পরের দিন কিছুটা অসুস্থ বয়স্ক গ্রাহক তার সাথে লোক নিয়ে শেখপাড়া বিদ্যুৎ অফিসে নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ময়নুদ্দিন এর কক্ষে দেখা করেন। তখন তার কক্ষে বসা ছিলেন উক্ত দপ্তরের উপ সহকারী প্রকৌশলী আল মামুন চৌধুরী। নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল নয়- মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট বাবদ গ্রাহকের নিকট ২১০০০০/-( ২ লক্ষ দশ হাজার টাকা) পাওনা রয়েছে মর্মে নির্বাহী প্রকৌশলী সুন্দর করে বিষয়টি বুঝিয়ে বলেন। এ সময় তার অধ:স্তন উপ সহকারী প্রকৌশলী আল মামুন চৌধুরী কটু ও তির্যক ভাষায় হুমকি দিয়ে আগামী তিন দিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলেন অন্যথায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে মামলার মাধ্যমে পুলিশ দিয়ে কোমড়ে দড়ি বেঁধে টাকা আদায় করা হবে মর্মে অশোভন অঙ্গ-ভঙ্গি করেন। গ্রাহক মন- কষ্টে সেখান থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার কালে উক্ত আল মামুন চৌধুরী তার পিছনে এসে বলতে থাকে ” যত মুশকিল – তত আসান, লাখ খানে টাকা খরচ করেন…… সব ফায়সালা হয়ে যাবে “।
আল মামুন চৌধুরীর দুর্ব্যবহার ও অনৈতিক প্রস্তাবে মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে বাসায় গিয়ে গ্রাহক তার বড় ছেলেকে বিষয়টি জানান। অতঃপর তিনি অসুস্থতা বোধ করতে থাকেন। রাত ১১ টার পরে অসুস্থতা বৃদ্ধি পেলে তাকে খুলনা মহানগরীর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে হার্ট অ্যাটাক বলে তাৎক্ষণিক সি সি ইউ তে ভর্তি করান। এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ব্যয়বহুল চিকিৎসাধীন থেকে তিনি বর্তমানে বাসায় ডাক্তারের চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি খানিকটা সুস্থ হয়ে ডাক্তারের অনুমতিতে বের হয়ে সোনাডাঙ্গা থানায় গিয়ে জিডি করেন। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, আল মামুন চৌধুরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিডার না হয়েও তিনি গ্রাহকের জীবন সংকটে ফেলতে এবং অনৈতিকতার সাথে আর্থিকভাবে লাভবান হতে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবামূলক সংস্থায় কর্মরত থেকে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য মূলক ভাবে এরকম হিংস্র আচরণ করেন।
যে কারণে গ্রাহক মানসিক, শারীরিক এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভবিষ্যতেও তিনি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা এরকম অমানবিক আচরণের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। সে কারণেই তিনি এরকম অন্যায় ও অমানবিক আচরণের প্রতিকার এবং ক্ষতিপূরণ চেয়ে থানায় জিডি করেছেন।
এখানে উল্লেখ্য, একটি বিশেষ জেলার বাসিন্দা হওয়ায় বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক পদ পদবী ও সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে মানুষকে হয়রানি এবং বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন মর্মে উক্ত আল মামুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে গত ৩.১১.২৪ তারিখ ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে জনৈক এলাকাবাসী একটি আবেদন করেন। আবেদনে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরিপ্রাপ্তি , একই সময় চাকরি দেখিয়ে সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে দুই মাস খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওজোপাডিকো থেকে বেতন গ্রহণ, বিধি-বিধানকে তোয়াক্কা না করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে সম্পূর্ণ অন্যায় ভাবে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্বের ক্ষতি সাধন করা, নিজের আত্মীয়-স্বজন পুলিশ প্রশাসনে কর্মরত থাকায় অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে নিজস্ব লোক দিয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে ও প্রিপেইড মিটার ক্রয়ে অনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া, ওজোপাডিকোর সদর দপ্তরের প্রশাসনে নিজ এলাকার লোক উচ্চপদে কর্মরত থাকায় প্রভাব খাটিয়ে শহরে নিজ বাড়ীর এলাকায় পোস্টিং নেয়া, ক্ষমতাও অর্থ-বিত্তের জোরে পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে দুর্ব্যবহার করাসহ নানাবিধ অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দৈনিক সংযোগ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ” ওজোপাডিকো খুলনার প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ ” শিরোনামেও খবর প্রকাশিত হয়েছে।
তবে শুধুমাত্র মিটার ভাড়া, ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট বাবদ এত বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়ার কথা বিদ্যুৎ বিভাগ দাবি করলেও গ্রাহককে বিগত সাত বছরে কোন চিঠি, নোটিশ এবং এমনকি কখনো ফোন করেও বলা হয়নি মর্মে গ্রাহক জিডিতে উল্লেখ করেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও চরম অসন্তুষ্টি বিরাজ করছে।
আপনার মতামত লিখুন :