নিজস্ব প্রতিবেদকঃ জনস্বার্থে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। স্ব স্ব দফতরের জারিকৃত পৃথক আদেশে মো. মুনিবুর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পদে এবং মো. নুরুল ইসলামকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত আদেশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ আগস্ট রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অভ্যন্তরীণ নিয়োগ শাখার উপসচিব আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম মো.মুনিবুর রহমানের বদলি সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনে সই করেন। আর জনস্বার্থে জারিকৃত ওই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করার কথাও প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।
তবে, বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার করোনা আক্রান্ত হওয়ায় প্রজ্ঞাপনের জারিকৃত তারিখের দুই সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদেই বহাল আছেন মো. মুনিবুর রহমান।
অপরদিকে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বদলিকৃত আদেশ সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (এঅ্যান্ডআই) ড. মাইনুর রেজা চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে মো. নুরুল ইসলামকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়।
প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, আগামী ২৫ আগস্টের মধ্যে তাকে ছাড়পত্র গ্রহণ করে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। ২৫ আগস্টের মধ্যে ছাড়পত্র গ্রহণ না করলে ২৬ আগস্ট থেকে তিনি তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) হয়েছেন বলে গণ্য হবে। জনস্বার্থে তাকে বদলি করা হলো।
মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) রাতে মুনিবুর রহমানের বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসীম উদ্দীন হায়দার জানান, চলতি মাসের ১০ আগস্ট ইউএনও মুনিবর রহমানের বদলি সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কিন্তু সদর উপজেলার এসিল্যান্ড করোনা আক্রান্ত থাকায় তাকে কাজ চালিয়ে নিতে বলা হয়েছে।
এসিল্যান্ড সুস্থ হয়ে কাজে যোগ দিলেই ইউএনও তার কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে চলে যাবেন। কাজেই ইউএনওর বদলির বিষয়টা স্বাভাবিক।
উল্লেখ্য, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে ব্যানার অপসারণে যায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। সেখানে গেলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পক্ষ থেকে ব্যানার অপসারণে নিষেধ করা হয়।
এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উপস্থিতিতে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা গুলি চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরের দিন ১৯ আগস্ট বরিশাল সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে হুকুমের আসামি করে ৬০২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ইউএনও ও পুলিশের এক সদস্য।
মামলায় ২২ জনকে গ্রেফতার করলে তাদের মধ্যে ১৮ জনের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠিয়ে চিকিৎসার আদেশ দেন আদালত।
এরপর রোববার ২২ আগস্ট বরিশাল সদর উপজেলা নিবার্হী অফিসার মো. মুনিবুর রহমান ও কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলামসহ শতাধিক জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও এক স্টাফ। এই মামলাটি গ্রহণ করে পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন আদালত।
উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলার পর রোববার (২২ আগস্ট) রাতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে ১৮ আগস্টের রাতের ঘটনার বিষয়টি সমাধানের জন্য সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :