বিশেষ প্রতিনিধিঃ স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় আটক হয়ে জেলখানায় ছিলেন স্বামী মাসুম মোল্যা (৩৫)। সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পান তিনি। কিন্তু বের হয়ে দেখেন তার দুই স্ত্রী সেখানে উপস্থিত। তারা তাদের স্বামীকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। কারণ দুজনই চান নিজেদের স্বামীকে নিজেদের সঙ্গে নিয়ে যাবেন।
সোমবার ৩০ মে আদালত থেকে জামিন করিয়ে স্বামীকে নিতে কারাগারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন স্ত্রী তাসলিমা খাতুন। এ সময় সেখানে আরেক স্ত্রী রোজিনার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেখানেই স্বামীকে নিয়ে বাক-বিতণ্ডা হয় দুজনের। স্বামী বের হয়ে দুই স্ত্রীর রোষানলে পড়েন। এ সময় রোজিনা দাবি করেন তিনি মাসুম মোল্যার দ্বিতীয় স্ত্রী, জেল থেকে মুক্তি পেলে তিনি স্বামীকে নিয়ে ফুলতলায় চলে যাবেন।
জেলগেটে দুই সতীনের এই পরিচয়ে উভয়ের মধ্যে সৃষ্টি হয় উত্তেজনা। প্রথম স্ত্রী কোনোভাবেই তাকে সতীন মানতে নারাজ! একপর্যায়ে, জেলগেটে আসেন স্বামী মাসুমের ছোট ভাই রাজা মোল্যা। তিনি উভয়কে নিবৃত করে বলেন, আজ ভাই মুক্তি পেলে তোমাদের কারো সঙ্গেই সে যাবে না। আমার ভাইকে আমি বাড়ি নিয়ে যাব। পরে দেখা যাবে কী হয়।
এভাবে উভয় স্ত্রীর অপেক্ষার পালা শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। মাসুম মোল্যা জেলখানা থেকে বের হওয়া মাত্রই উভয় স্ত্রী তার হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে উপস্থিত লোকজন তাদেরকে নিবৃত করে। এ সময় উপস্থিত অনেকেই বলেন, মাসুম মোল্যা সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি কোথায় যাবেন। যেখানে যেতে চাইবেন সেখানেই যাবেন।
এ সময় উভয় স্ত্রী বলে উঠলেন, তুমিই বলো তুমি কোথায় যাবে! উত্তরে মাসুম বললেন, মূলত আমার জামিন কে করিয়েছ তখন উভয় স্ত্রী দাবি করেন তারা আলাদা-আলাদা অ্যাডভোকেটকে ফি দিয়েই ও খরচ করে তাকে মুক্ত করেছেন। এমনকি ছোট স্ত্রী চিৎকার করে বললেন, তুমি জানো না, আমার গহনা বেচে ৪ হাজার টাকা দিয়ে তোমাকে মুক্ত করেছি।
ঠিক পাল্টা উত্তরে, প্রথম স্ত্রী কোলে থাকা সন্তানের মাথা ছুঁয়ে কসম দিয়ে বললেন, আমি তোমার কথা মতো জেল খানায় খাদ্য-খাবার ও বিড়ি কিনে দিয়ে গেছি। এছাড়া আমি তোমার নারী নির্যাতনের মামলার বাদী তুমি উকিলের কাছে জেনে দেখো, আমার সম্মতি না থাকলে তুমি কোনো ভাবেই জামিন পেতে না। পরে উভয় স্ত্রীর কাছে যাবেন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাসুম মোল্যা নিজের ভাইয়ের হাত ধরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।
যশোর শহরের শংকরপুর গোলপাতা মসজিদ এলাকার বাসিন্দা ও প্রথম স্ত্রী তাসলিমা খাতুন এ বিষয়ে বলেন, ২০১৮ সালে কেশবপুর উপজেলার কলাগাছি গ্রামের সবুর মোল্যার ছেলে মাসুম মোল্যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। সেই থেকে তিনি শশুর বাড়িতেই থাকেন। তাদের তিন বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান আছে। তবে স্বামী মাসুম মোল্যা যশোরের শিল্পনগরী নওয়াপাড়ায় ঘাট শ্রমিকের কাজ করেন।
তিনি বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই তার চলাফেরা-কথাবার্তায় পরিবর্তন দেখা যায়। এমনকি, বাড়িতে স্ত্রী-শিশু সন্তানের খরচও দেন না। কিছু বললে, মারধর করেন। একাধিকবার এমন নির্যাতন করলে পারিবারিকভাবে মিমাংসায় ব্যর্থ হয়ে তিনি নারী পরিষদ নেত্রী অ্যাডভোকেট সেতারা খানমের সহযোগিতায় আদালতে মামলা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :