• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ অপরাহ্ন

উৎকোচের বিনিময়ে চিকিৎসক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সনদ পরিবর্তনের অভিযোগ, ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় ভুক্তভোগীর পরিবার


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৭, ২০২৪, ৬:২০ অপরাহ্ন / ১৫৪
উৎকোচের বিনিময়ে চিকিৎসক ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সনদ পরিবর্তনের অভিযোগ, ন্যায় বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় ভুক্তভোগীর পরিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জঃ গোপালগঞ্জ জি.আর ৩৩৮/২৪ নং মামলায় অভিযুক্ত ও এলাকার প্রভাবশালী বিবাদী পক্ষের নিকট থেকে উৎকোচের বিনিময়ে বাক প্রতিবন্ধী ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসা সনদ (এমসি) পরিবর্তনের অভিযোগ পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস (বিএমডিসি এ-৭৭১৪৭) ও একই হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জমাদ্দার/সর্দার সোহেল শেখের বিরুদ্ধে। নানা অনিয়ম দুর্নীতির সাথে জড়িত ওই সোহেল শেখের বিরুদ্ধে এর আগেও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গোপালগঞ্জে দুদক কর্তৃক আয়োজিত গণশুনানিতেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা ছিলো কিন্তু তার এক আত্মীয় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চাকুরির সুবাদে তার প্রভাবে দুদক অভিযুক্ত সোহেল শেখের বিরুদ্ধে কার্যকর তেমন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মেডিকেল সনদ আদালতে জমা দেওয়ায় দায়েরকৃত উক্ত মামলায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় ভুগছেন ভিকটিম বাক প্রতিবন্ধী শান্ত সিকদার (১৪) ও তার পরিবার। ন্যায়বিচার পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় পরিবারটি। মামলার বাদী ও ভিকটিমের মা হ্যাপি বেগম গণমাধ্যমকে জানান, মামলায় আসামিপক্ষ সদর হাসপাতালের কর্মচারী সোহেল শেখের একই গ্রামের লোক ও আত্মীয় হওয়ায় সে তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে আমার প্রতিবন্ধী ছেলের সঠিক মেডিকেল রিপোর্ট বদলিয়ে মনগড়া একটা প্রতিবেদন পাঠিয়ে মামলাটি ধ্বংস করার পায়তারা চালিয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে আমি গোপালগঞ্জের মাননীয় জেলা প্রশাসক স্যারের সাথে সাক্ষাৎ করি এবং তার নিকট একটা অভিযোগ দেই। স্যার সঠিক মেডিকেল রিপোর্ট প্রাপ্তিতে অনেক সহযোগিতা করেছেন। শুনেছি একবার ভুল রিপোর্ট দিলে তা আর কখনোই সঠিক হয় না পরবর্তীতে আদালতে জমা দেওয়া সেই মিথ্যা ও অসত্য এমসির বিরুদ্ধে আমি না রাজি দিলে। বিজ্ঞ বিচারিক আদালত তা মঞ্জুর করে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পুনরায় সঠিক মেডিকেল এমসি প্রেরণের নির্দেশ দিলেও উক্ত হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস (ডিএমসি -এ২৯৩২৯) বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশ পেয়ে গত রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর ‘২৪) তড়িঘড়ি করে লোক দেখানো এক মেডিকেল বোর্ড গঠন করেন। ওই মেডিকেল বোর্ড নিয়েও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। রোববার সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে পর্যবেক্ষণে দেখা যায় গত ২২ আগস্ট তারিখে জরুরী বিভাগে বিষ খাইয়ে হত্যা চেষ্টার ভিকটিম বাক প্রতিবন্ধী শান্ত সিকদারকে অচেতন অবস্থায় নেওয়া হলে। সেই দিন জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস অচেতন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিক পর্যায়ে তার পাকস্থলী পরিষ্কারের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্টদেরকে। সেই সময় হাসপাতালের আউটসোর্সিং এর কর্মচারী আলমগীর ও কর্মচারী বিকু সহ অন্যরা ভিকটিম শান্ত সিকদারের পাকস্থলী ওয়াশ করে তাদের কোন বক্তব্য নেওয়া হয়নি। ঘটনার শুরু থেকে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকা গণমাধ্যমকর্মীদেরও কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি। অথচ অভিযুক্ত সোহেল শেখের বক্তব্য নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মেডিকেল বোর্ড। শুধু তাই নয় আমাকে ডিসি স্যারের নিকট গিয়ে এ অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেওয়ায় এবং আমার সন্তানের পেট থেকে সত্যিকার অর্থে বিষ বের করার কথা মুঠোফোনে জানানোর অপরাধে উক্ত হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেশ বিশ্বাস আউটসোর্সিং এর কর্মচারী আলমগীরকে চাকুরিচ্যুত করেছেন যা অমানবিক ও দুঃখজনক এবং হাসপাতালের কর্মচারী বিকুকেও শোকজ পাঠিয়ে নানাভাবে হয়রানি করছে। অথচ তিনি অভিযুক্ত ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস ও অভিযুক্ত কর্মচারী সোহেল শেখের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থাই নেননি। এদিকে উক্ত ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরপরই এসআই শরীফ রফিকুল ইসলাম ও ইউপি চেয়ারম্যান ভূইয়া মোহাম্মদ ইছানুর রশীদ রিপন ভাইও গণমাধ্যমকর্মীদের নিকট প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছের। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও বর্তমান আইও এসআই মোঃ মোকাররাম হোসেন আসামিদেরকেতো গ্রেফতার করেননি উল্টো আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর রেখেছেন। আমি জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, আপনার বাড়ি ঘর যা আছে তা লিখে নিচ্ছি। এখন বুঝলাম তিনি মাসখানেক আগে থানায় ডেকে কেন সাদা কাগজে আমার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। আমি আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, মাননীয় স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, মাননীয় স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজি, জেলা ও দায়রা জজ, জেলা সিভিল সার্জন মহোদয় সহ সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।

বাক প্রতিবন্ধী শান্ত সিকদারকে চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও বিষপানে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ সম্পর্কে অভিযুক্ত চিকিৎসক ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস (ডিএমসি এ-৭৭১৪৭) এর নিকট জানতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে এবিষয়ে কোন বক্তব্য দিবেন না বলে জানান।

উৎকোচ নিয়ে শান্ত সিকদারের মেডিকেল এমসি পরিবর্তনের বিষয়ে অভিযুক্ত সোহেল শেখের নিকট জানতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে একপর্যায়ে বলেন, আপনারা সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে যা লিখবেন লেখেন।

অভিযুক্ত চিকিৎসক চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সোহেল শেখ ও চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ভিকটিমের মায়ের মুঠোফোনে কথা বলা এবং মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নিকট তাদেরকে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেওয়ার অপরাধে আপনি কেন নিরপরাধ আউটসোর্সিং কর্মচারী আলমগীরকে চাকুরিচ্যুত করলেন! এ বিষয়ে জানতে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযুক্ত চিকিৎসক এবং কর্মচারীর বিরুদ্ধে আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে।

এ ঘটনায় ভিকটিম বাক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী শান্ত সিকদারের মা ও মামলার বাদি অভিযুক্ত কর্মচারী সোহেল শেখ, ডাঃ বিচিত্র কুমার বিশ্বাস ও তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ জীবিতেষ বিশ্বাস সহ অত্র হাসপাতালে মেডিকেল সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে গত ৬ অক্টোবর দুদক চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় চিকিৎসক সহ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে চরম ক্ষোভ জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীসহ সমাজের সচেতন মহল। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ ভবিষ্যতে চিকিৎসক ও পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলবে। অসহায় গরীবদের ন্যায়বিচার পাওয়ার আর কোনো পথই খোলা থাকবে না। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি প্রদান এবং বিচারপ্রার্থীদের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সচেষ্ট হবেন। এমনটাই প্রত্যাশা সকলের।