মিশারুল ইসলাম, খুলনাঃ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য মেয়র এবং সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর প্রার্থীরা জোরেশোরেই মাঠে নেমে পড়েছেন। বিশেষ করে পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে ইফতার কেন্দ্রিক তৎপরতা শুরু করেছেন অনেকেই। ইতোমধ্যেই মাহে রমজানকে স্বাগত এবং ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকেই পোস্টার টাঙিয়েছেন নগরীতে।
এদিকে, কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বিএনপির কোনো নেতার পক্ষে প্রার্থিতার বার্তা আসেনি। তবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সাম্যবাদী দলসহ আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।
নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, খুলনা সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে। দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি করপোরেশনে আগামী ১২ জুন ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
মেয়র প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল, সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতা আবদুল গফফার বিশ্বাস, জাপা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মহানগর সভাপতি মিজানুর রহমান বাবু, সাবেক জাপা নেতা এস এম মুশফিকুর রহমান, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের খুলনা জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য প্রকৌশলী সৈয়দ কামরুল ইসলাম, আগুয়ান-৭১ এর প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী।
বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে দলটির প্রার্থী তালিকায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মনিরুজ্জামান মনি এবং বর্তমান মহানগর আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রার্থীরা ওয়াজ মাহফিলসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েও সাধারণ মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বিশেষ করে রমজানে ইফতার অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন মসজিদে তারাবি ও জুমার নামাজে হাজির হয়ে দোয়া প্রার্থণা করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
নির্বাচনের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, অনেক আগে থেকেই আমি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। এমনকি আমার দলও নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে।
বিএনপির সাবেক নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমার দল তো এ কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবে না। এই কারণে দল স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করেছে। দল যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমি ও মনি তো প্রার্থী হিসেবে আছি। আমরা দলের পপুলার প্রার্থী।
তিনি আরও বলেন, দল যদি নির্বাচনে যায় তাহলে আমি ও মনিরুজ্জামান প্রস্তুত থাকবো। দলের নেতাকর্মীদের চাপ আছে আমাদের ওপর। নাগরিক সমাজের লোকরা আমাদের বলেছেন তারা সরকারকে একা সুযোগ দিতে চায় না। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী চায়। যেহেতু খুলনা বিএনপিতে দলের মধ্যে একটি বিভক্তি রয়েছে। খুলনা বিএনপির পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা দূর করে একটি ভালো কমিটি দেওয়ার জন্য আমরা প্রেস কনফারেন্স করেছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের ৫২০ নেতা ও হাজার হাজার কর্মী দলের কার্যক্রমের বাইরে আছে। আমরা আবেদন করেছিলাম সবাইকে সম্মান দিয়ে দলে ফিরিয়ে নেওয়ার। কিন্তু দল সেটা এখনও করেনি। প্রায় দেড় বছর হতে চললো। এজন্য নেতাকর্মীদের মনের মধ্যে ব্যথা বেদনা আছে। নির্বাচন করার বিষয়ে তাদের চাপ আছে আমাদের প্রতি। আমরা সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। খুব দ্রুতই আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবো দলের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে যাবো কিনা।
মহানগর বিএনপি সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই আমাদের। আমরা এখন আন্দোলনে আছি। এসব নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। আমাদের কথা স্পষ্ট আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে তারপর এসব স্থানীয় নির্বাচন।
জাপা জেলা সভাপতি এস এম মুশফিকুর রহমান বলেন, খুলনা সিটিকে উন্নয়নের মডেল বলে কেউ কেউ। কিন্তু আসলে কী সঠিক উন্নয়ন হয়েছে? এ প্রশ্ন আজ হাজারও মানুষের। সরকার ও দাতা সংস্থা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে শত শত কোটি টাকা দিয়েছে। কিন্তু সেই উন্নয়ন আগামীতে জনভোগান্তিতে রূপ নিতে যাচ্ছে। প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা নগরীর ড্রেনেজ ও সড়ক উন্নয়নের কাজ চলছে। অপরিকল্পিত এ প্রকল্প খুব শিগগিরই জনভোগান্তিতে রূপ নেবে। খুলনা বিভাগের এক সময়ের জেলা শহর বরিশাল নিকট অতীতে বিভাগ ও সিটি কর্পোরেশন হলেও তার তুলনায় খুলনা এখন অনেক পিছিয়ে রয়েছে। খুলনাকে এগিয়ে নিতে চাই।
বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের খুলনা জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ কামরুল ইসলাম বলেন, খুলনা নগরীকে দুর্নীতি মুক্ত, উন্নত সড়ক, নগরবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন এবং জলাবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবো।
আগুয়ান-৭১ এর প্রতিষ্ঠাতা ও কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নগরবাসীর অধিকারগুলোকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে আগুয়ান-৭১ এর তরুণরা রাজনীতিতে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিগত ৫০ বছরের গতানুগতিক রাজনীতি এবং দেশের এখন নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তি থাকলেও আমরা মনে করি নির্বাচনকে তরুণদের একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়া উচিৎ। আমরা বিশ্বাস করি, এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তরুণদের ঐক্যবদ্ধতা খুলনার রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১৫ মে সর্বশেষ কেসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে তালুকদার আবদুল খালেক ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু। তিনি পান ১ লাখ ৯ হাজার ২৫১ ভোট।