
নিজস্ব প্রতিবেদক, আশুলিয়া,সাভার, ঢাকাঃ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানাধীন ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড জামগড়া গফুর মন্ডল স্কুল রোডে স্থানীয় ফজলুল হক মিয়ার বড় ছেলে কলেজ পড়–য়া ছাত্র মোঃ ফারাবী আহমেদ হৃদয় (২১) কে টাকার লোভে কৌশলে অপহরণ করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে কিশোর গ্যাং মাদক সন্ত্রাসী অপহরণকারীরা। ভিকটিমকে অপহরণের পর তাদের চাহিদা মতো দাবিকৃত ৫০ লাখ টাকা না পেয়ে কথিত বন্ধু নামের অপহরণকারীরা হৃদয়কে শ্বাসলোধ করে হত্যা করে বস্তাবন্দী লাশ নিয়ে একটি পুকুরে ফেলে দেয়। র্যাব=৪ এর অভিযানে এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার (১৮ মে ২০২৩ইং) বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়া থানাধীন শ্রীপুর মোজারমিল এলাকার শিববাড়ি ষ্ট্যান হাউজিং এর একটি পুকুর থেকে নিহতের ভাসমান বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। উক্ত অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় এর আগে পুলিশ ও র্যাব কর্তৃক যৌথ অভিযানে ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া, টাঙ্গাইল ও রাজধানীর পল্লবী এলাকা থেকে পৃথক ৩ জনকে গ্রেফতার করেন। নিহত মোঃ ফারাবী আহমেদ হৃদয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। গত ৮ মে ২০২৩ইং জামগড়া নিজ বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন এই ছাত্র।
উক্ত ছাত্র অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জ সদরের পশ্চিম দাস পাড়া গ্রামের মোঃ বাবুল হোসেনের ছেলে মোঃ ময়েজ হোসেন পরাণ (২২) কিশোর গ্যাং সদস্য, পরান আশুলিয়ার জামগড়া স্থানীয় শফিকের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় একটি ফার্নিচারের দোকানে মাঝে মধ্যে কাজ করতেন। গতকাল বুধবার রাত ১০ টার দিকে আশুলিয়ার জামগড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অপরজন হলেন-বগুড়া জেলার সোনাতলা থানার মহেশপাড়া গ্রামের মোঃ তাহেলুর ইসলামের ছেলে ছোট সুমন মিয়া ওরফে বাপ্পী (২৫)। তাকে বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইলের সখীপুর থেকে গ্রেফতার করেছেন র্যাব-৪ এর চৌকস একটি দল। একইদিন দুপুরে রাজধানীর মিরপুর থেকে মোঃ আকাশ (১৯) কে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-৪ জানায়, গত (৮ মে ২০২৩ইং) সকাল ১০টার দিকে পরাণ কথিত বন্ধু পরিচয়ে ফারাবী আহমেদ হৃদয়কে কৌশলে তার ভাড়া বাসায় ডেকে নিয়ে যায়, পরে ভিকটিমকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী করে। এর মধ্যে ভিকটিমকে হত্যা করে তার লাশ একটি প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে রাখে তারা। পরে হত্যার ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে শ্রীপুরের একটি পুকুরের পানির ভেতরে বস্তাবন্দি করে লাশ ফেলে দেয়। দুইদিন পরে আসামিরা আবার ওই পুকুরে লাশ ভেসে উঠেছে কিনা দেখতে যায়, তারা নিহতের লাশ ভেসে উঠা দেখতে পেয়ে আবারও ওই লাশ পুকুরের উপরে তুলে ৮-১০টি ইট বস্তার ভেতরে ভরে ওই পুকুরের পানিতে লাশটি ডুবিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
র্যাব-৪ এর সিইও লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোহাম্মদ আব্দুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, অপহরণ ও হত্যা মামলার আসামিরা অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল ছিলো। ভিকটিমের পরিবাব সমৃদ্ধশালী ছিলো। তারা ভিকটিমের ধনসম্পদ দেখে লোভে পরে যায়, এরপর পরিকল্পনা করে হৃদয়কে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৮ মে সকাল ১০ টার দিকে হৃদয়কে কৌশলে পরাণের বাসায় শ্রীপুর এলাকায় ডেকে নিয়ে জিম্মি করে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে দুপুরে হৃদয়কে ৪জন মিলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হতে বালিশ চাপা দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ধরে রেখে মৃত্যু নিশ্চিত হয় আসামীরা। হত্যাকান্ডের দিন বিকেল ৪টার দিকে অপহরণ ও হত্যাকারীরা ভিকটিমের বস্তাবন্দি লাশ নিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। তিনি আরো বলেন, এখান থেকে সবার শিক্ষা নিতে হবে যে, বন্ধু নির্বাচনে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে। তিনি জানান, আসামীদ্বয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন, অদূর ভবিষ্যতেও এইরুপ হত্যাকারী ও অপহরণকারী চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব-৪ এর জোড়ালো সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকবে। এ দিকে আশুলিয়ার জামগড়া ক্রাইম জোন এলাকা রূপায়ন আবাসন-১ এর মাঠ ও জামগড়া এলাকায় কিশোর অপরাধ বেড়েই চলেছে, এই অপহরণ ও হত্যাকারী কিশোর গ্যাং বাহিনীর লিডার ছাড়া এইসব অপরাধমূলক কর্মকান্ড তারা করতে সাহস করতে পারে না বলে এলাকাবাসী অনেকেই অভিমত প্রকাশ করেন। অনেকেই এরকম অপরাধ করে আদালত থেকে জামিনে এসে আবারও সেই অপরাধ করে থাকে। পুলিশ তাদেরকে রহস্যজনক কারণে আটক করতে পারেন না, বেশিরভাগ বড় ধরণের অপরাধীদেরকে র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার করার নজির রয়েছে। উক্ত অপহরণ ও হত্যার সাথে আরো কেউ জড়িত আছে কিনা এ ব্যাপারে র্যাবের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ভুক্তভোগী পরিবার ও সচেতন মহল।
আপনার মতামত লিখুন :