• ঢাকা
  • শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:০৩ অপরাহ্ন

আর কয় বছর পর আসবে সেই ১ মাস প্রশ্ন সচেতন মহলের : চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় হুমকির মুখে পরিবেশ


প্রকাশের সময় : মার্চ ৬, ২০২৫, ৭:০৫ অপরাহ্ন / ২৮
আর কয় বছর পর আসবে সেই ১ মাস প্রশ্ন সচেতন মহলের : চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় হুমকির মুখে পরিবেশ

মানছুর রহমান জাহিদ, পাইকগাছা, খুলনাঃ খুলনার পাইকগাছায় প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠা কয়লার চুল্লি। এ দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরেই যেন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কয়লা গোলার মালিকরা।‌ অন্যদিকে অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে গড়ে ওঠা কয়লা তৈরীর চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় পরিবেশ যেনো হুমকির মুখে।

এ সমস্ত অবৈধ কয়লার চুল্লি অপসারণের জন্য ২০২৩ সালে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হলে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন পরিবেশ সুরক্ষায় উপজেলার চাঁদখালীতে গড়া উঠা অবৈধ কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর কারখানা বন্ধ করতে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় ৬৯টি চুল্লির মধ্যে স্কাভেটর দিয়ে ৫টি অবৈধ চুল্লি ধ্বংস করা হয়েছিলো। বাকী কয়লা চুল্লি গুলো বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। মানবিক কারনে তখন ১ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ ও অপসারণ করার শর্তে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু শাহাজাদা ইলিয়াস মুচলিকা দেওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেন। কিন্তু দেখতে দেখতে প্রায় দু’বছর পার হয়ে গেলেও ফিরে আসেনি সেই পুর্বের ১ মাস। অথচ বর্তমানে এসব চুল্লির চিত্র দেখে মনে হচ্ছে যেনো সেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পরে আরও বেপরোয়া হয়ে নড়েচড়ে বসেছেন এ সমস্ত অবৈধ কয়লার চুল্লির মালিকরা। মুচলেকা অনুযায়ী বাকি ৬৪টি চুল্লি অপসারণ তো দুরের কথা বর্তমানে ৬৪ থেকে বেড়ে ১১১টি চুল্লি গড়ে উঠেছে। যেখানে অনায়াসে পুরছে সুন্দরবন থেকে চোরাই পথে কেটে আনা বিশাল বিশাল কাঠ। আর সামনে এলাকা থেকে সংগ্রহ করে কিছু ছোটখাটো কাট সিম্পল হিসাবে রাখা হয়। যা দেখে মনে হয় চোর পুলিশ খেলা।

জানা যায়, একটি চুল্লিতে প্রতিবার ২’শ থেকে ৩’শ মন পর্যন্ত কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিবার কমপক্ষে ২৫ হাজার মন কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতিমাসে প্রত্যেকটি চুল্লিতে ৩ থেকে চারবার কাঠ পুড়িয়ে কয়লা করা হয়। ফলে প্রতিমাসে কয়লার চুল্লিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লক্ষ মন কাঠ পোড়ানো হয়। ফলে ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সহ সামাজিক বন। অন্যদিকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের। চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকায় বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন, প্রকৃতি ধ্বংসসহ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও অদৃশ্য কারনে এতদিন কর্তৃপক্ষ নিরব ছিলো। অধিক লাভজনক হওয়ায় সবদিক ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসায় নেমে পড়েছেন এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ দিকে প্রকৃতি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ সহ সামাজিক বন ধ্বংস করে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরীর ক্ষমতার উৎস কি এমনটাই প্রশ্ন এলাকার সচেতন মহলের? তারা আরও জানতে চান, আর কয় বছর পর আসবে সেই ১ মাস? স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুল্লির কারনে রাস্তা দিয়ে চলা চল করা যায় না। চোখ জ্বালা করতে থাকে ও দম বন্ধ হয়ে আসে। তারা আরও বলেন, এ সমস্ত কয়লার চুল্লির বিষাক্ত ধোঁয়ার কারনে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে বসবাস করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে চোখের বিভিন্ন সমস্যা সহ শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা যেন লেগেই থাকে। এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, চুল্লির মালিকরা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অনায়াসে। যদি তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে তাহলে ১ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ দিয়ে তাকে হেনেস্থা করাসহ বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করা হয়। এদিকে চুল্লিতে কাঠের ব্যবহার, অধিক জনসংখ্যার চাপ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বন উজাড় হচ্ছে। তাই বর্তমানে বনজ সম্পদ রক্ষা করা না হলে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে, যার প্রভাব পড়বে প্রকৃতিতে। দিনের পর দিন এমনি ভাবে বনজ সম্পদ কেটে চলেছে যার কারণে পরিবেশ আজ বিপর্যয়ের মুখে।

এ বিষয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ চুল্লি মালিকদের সংগঠনের সেক্রেটারি সাঈদ জানান, আমাদের কোন বৈধতা নেই। প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লাখ লাখ টাকা মাশয়ারা দিয়ে এ ব্যবসা করতে হয় আমাদের। এরপরও সাংবাদিকরাও আসলে তাদেরকেও টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখি।

তিনি আরো বলেন, আপনারা এসেছেন এই বিষয়টা নিয়ে লেখালেখি করার দরকার নেই আপনাদের বিষয়েও আমরা দেখবো। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বিকাশ নাম্বার চান ও দুই হাজার টাকা বিকাশ করে পাঠানোর কথা বলেন। উক্ত বিষয়ে কয়লা চুল্লির অন্যান্য মালিকদের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে নারাজ।

এ বিষয়ে, পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, ইতিমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি। এ বিষয়ে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন।