মোঃ রাসেল সরকারঃ আমদানির দোহাই দিলেও নেই কোনো কাগজপত্র। উৎপাদন আর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখেও কারসাজি। মাংস ব্যবসায়ীরাই বলছেন, রাজধানীর অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁয় এই মহিষের মাথার মাংসই ভোক্তার প্লেটে তুলে দেয়া হচ্ছে গরুর মাংস বলে।
রাজধানীতে গরুর মাংসের কথা বলে বিক্রি করা হচ্ছে আমদানি করা মহিষের মাথার মাংস তাও আবার মেয়াদোত্তীর্ণ। এমন খবরের সত্যতা যাচাই করতে লালবাগের ভাটা মসজিদ এলাকার একটি বাড়িতে পাওয়া গেল ফ্রিজভর্তি মাংসের প্যাকেট।
প্যাকেটের গায়ে লেখা আল তামাম। বাফেলো হেড মিট। অর্থাৎ মহিষের মাথার মাংস। ইংরেজি ও আরবিতে সব লেখা থাকলেও উৎপাদন আর মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ বাংলায়। ফ্রিজেই পাওয়া গেল আলাদা চর্বি। এই চর্বি মেশানো হয় মাংসের সঙ্গে। মাংস সাইজ করার পর তা পলিথিনের আলাদা প্যাকেটে করে সরবরাহ করা হয় হোটেল-রেস্টুরেন্টে। মাংসভর্তি পলিথিনের প্যাকেটও পাওয়া গেল ফ্রিজে। আরেকটি ফ্রিজেও মিলল মাংস। ব্যবসায়ীদের সহজ স্বীকারোক্তি এসব মাংসই তারা সরবরাহ করেন রাজধানীর বিভিন্ন খাবারের হোটেলে। হোটেল মালিকরা চালান গরুর মাংস বলে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এগুলো মহিষের মাংস। হোটেল মালিকদের কাছে মাহিষের মাংস বলেই বিক্রি করি। কিন্তু তারা সেগুলোকে মহিষ না গরু বলে বিক্রি করে, তা জানি না।
নবাবগঞ্জ বাজারেও পাওয়া যায় মহিষের মাথার মাংস। পরিচয় গোপন রেখে সংবাদকর্মীর সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন মাংসের দোকানদারের, মেলে সত্যতা।
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের একটি বাড়িতে গিয়ে কয়েকটি ফ্রিজে পচা মাংস পাওয়া গেল। জানা গেল অনেক মাংসের সঙ্গে এ পচা মাংস মেশানোর পর সরবরাহ করা হবে হোটেলে।
এক সময় মাংসের ব্যবসা করতেন এমন একজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কীভাবে নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ এসব মহিষের মাংস গরুর মাংস হয়ে যায়।
তিনি বলেন, কোম্পানি থেকে আসে। মাংস ব্যবসায়ীরা ২৫০ টাকা কেজিদরে কেনে। পরে হোটেলে দেয়ার সময় রক্ত ও চর্বি মিশিয়ে ৫৫০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে নিউমার্কেট, পলাশী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ ও নবাবগঞ্জ বাজারে বিক্রি করা হয়। এসবের ডিলার কাপ্তান বাজারের সাইদ মাহাজন। তার কাছ থেকেই বর্তমানে এসব এলাকার জন্য মাংস আনা হয়।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, নতুন নীতি অনুযায়ী এখন আর কেউ মাংস আমদানি করতে পারবে না।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা বলেন, ‘গত মাসেই আমদানি-রফতানির বাণিজ্য নীতি অনুমোদন হলো। তারপর থেকেই অনেক দরখাস্তই আমার দফতরে এসেছে। কিন্তু একটিতেও এ ধরনের মাংস আমদানির অনুমতি দেইনি।
খাবার অযোগ্য এসব মাংস মানবস্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি মিথ্যা গরুর মাংস বলে অধিক লাভবান হচ্ছে অসাধুচক্র।
আপনার মতামত লিখুন :