মোঃ দীন ইসলাম,ঢাকাঃ নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ গাড়ী ছিনতাই চক্রের মূল সমন্বয়কসহ ৫ সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৪। গত ১১ আগস্ট ২০২১ তারিখ রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা থেকে গাড়ী ছিনতাই চক্রের ৫ জন সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করা হয়। উক্ত অভিযানে উদ্ধার করা হয় ৪টি পিকআপ। বর্ণিত গ্রেফতারকৃদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটিত হয়। এছাড়া বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী থেকে ও তথ্য পাওয়া যায়। ফলে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী অব্যাহত রাখে।
শুক্রবার ( ২৭ আগস্ট ) বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত র্যাব-৪ এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকায় অভিযান চালিয়ে গাড়ী ছিনতাইকারী চক্রের মুল সমন্বয়ক মোঃ আজিম উদ্দিন (৩৮), মোঃ রফিক উল্লাহ (২৬), মোঃ সেলিম (৫০), মোঃ কামরুল হাসান (২৬) ও ওমর ফারুক (২৫) নামের পাঁচ জন কে গ্রেফতার করে। এসময় তাদের কাছে থেকে ছিনতাইকৃত ৩ টি পিকআপ, ১ টি সিএনজি,১ টি পিস্তল, ১ রাউন্ড গুলি,৩ টি ছোরা, ১ টি চাইনিজ কুড়াল, ৬টি মোবাইলসহ নগদ ১২,০০০/- টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের মিডিয়া উইং কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ যানবাহন/গাড়ী ছিনতাই/ চুরি চক্রের সদস্য। এই সংঘবদ্ধ গাড়ী ছিনতাই কারী চক্রের সাথে ১৫-২০ জন জড়িত। এই চক্রের মূল হোতা ও সমন্বয়ক গ্রেফতারকৃত আজিম উদ্দিন। গত ১১ আগস্ট ২০২১ তারিখ এবং সদ্য অভিযানে গ্রেফতারকৃতরা তার অন্যতম সহযোগী। বিগত ৫-৬ বছর যাবত এই দলটি সক্রিয় রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইতিমধ্যে শতাধিক গাড়ী ছিনতাই/চুরি করেছে বলে জানায়। এ পর্যন্ত এই চক্রটি গাড়ী ছিনতাইয়ের মাধ্যমে কোটি টাকার অধিক কারবার করেছে বলে জানায়।
খন্দকার আল মঈন আরো জানায়, গ্রেফতারকৃতরা সাধারনত ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটসহ নারায়ণগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুর এর আশপাশের এলাকায় পিকআপ, সিএনজি ছিনতাই/চুরি করে থাকে। তাদের কৌশল সম্পর্কে জানায় তারা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে থাকে।
১ম দলঃ প্রথমত এই দলের সদস্যরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে গাড়ী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে। মূলত গাড়ী পার্কিং, গতিবিধি, চালক ও মালিক সম্পর্কে পূর্বেই তথ্য সংগ্রহ করে।
২য় দলঃ মূল হোতা/মূল সমন্বয়কের নির্দেশনা মোতাবেক এই দলটি মাঠ পর্যায় থেকে গাড়ী ছিনতাই/চুরি করে থাকে। এছাড়াও তারা ক্ষেত্র বিশেষে চালকদের প্রলুব্ধ করে ছিনতাই নাটক সাজিয়ে ছিনতাই বা চুরিকৃত গাড়ী নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারে। এছাড়া পার্কিং অবস্থায় গাড়ীর লক সহজে ভাঙ্গা যায়। এ দলের সদস্যরা গাড়ী ভাড়ার ছদ্মবেশে ভিকটিম চালকের সাথে যোগাযোগ করে। অতঃপর পথিমধ্যে চেতনানাশক ঔষুধ ভিকটিম গাড়ীর চালককে খাদ্য দ্রব্যের সাথে সেবন করিয়ে থাকে। পরবর্তীতে গাড়ীর চালককে রাস্তায় ফেলে দিয়ে তার মোবাইল ফোন হস্তগত করে নেয়।
৩য় দলঃ ছিনতাই বা চোরাইকৃত গাড়ী গ্রহণ করার পর এরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে রাখে। অতঃপর ভিকটিম চালকের মোবাইল হতে মূল মালিকের সাথে যোগাযোগ করে টাকা দাবী করে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে তারা টাকা প্রাপ্তির পর চোরাইকৃত গাড়ী নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেয়, যা মালিক সংগ্রহ করে নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা মালিককে প্রতারিত করে থাকে।
৪র্থ দলঃ নির্দিষ্ট কয়েকদিন ছিনতাই হওয়া গাড়ী লুকিয়ে রাখার পর মূল সমন্বয়কের নির্দেশনা মোতাবেক নির্দিষ্ট ওয়ার্কশপে প্রেরণ করা হয়। যেখানে গাড়ীর রং পরিবর্তন করা হয়। ক্ষেত্র বিশেষে গাড়ীর যন্ত্রাংশ বিচ্ছিন্ন করা হয়ে থাকে। যা পরবর্তীতে কম মূল্যে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও চোরাইকৃত গাড়ীর যন্ত্রাংশ সমূহ এক গাড়ীরটা অন্য গাড়ীতে এবং ভ‚য়া রেজিষ্ট্রেশন নম্বর প্লেট প্রতিস্থাপন করে থাকে, যাহাতে কখনো হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
৫ম দলঃ মূল সমন্বয়ক নিজেই এই দলের মূল ভুমিকা পালন করে থাকে। তার কয়েকজন সহযোগী দ্বারা ভ‚য়া কাগজপত্র তৈরী করে থাকে। সাধারণত তারা বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নাম যুক্ত করে ভ‚য়া কাগজপত্র তৈরী করে থাকে। পরবর্তীতে সেগুলো বিক্রি অব্দি ভাড়ায় দেওয়া হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, কমমূল্য হওয়ার কারণে এই চোরাই/ছিনতাইকৃত গাড়ীর একটি চাহিদা ও রয়েছে। এই যানবাহন সমূহ মাদক পরিবহনেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
গ্রেফতারকৃতদের সিন্ডিকেটের মূলহোতা সমন্বয়ক গ্রেফতারকৃত আজিম। সে সকল কর্মকান্ডের নেতৃত্ব, সমন্বয়, বন্টন ও ছিনতাইকৃত গাড়ীর বিক্রয়/ভাড়ার ব্যবসা করে। গ্রেফতারকৃত রফিক ও ফারুক নিজ গ্যারেজসহ বেশকয়েকটি গ্যারেজে গাড়ীর রং পরিবর্তন/মডিফিকেশন বা বিবর্তন করে থাকে। এরা ক্ষেত্র বিশেষে স্বশরীরে সম্পৃক্ত থেকে গাড়ী ছিনাতইয়ে কারিগরী সহায়তা প্রদান করে থাকে। গ্রেফতারকৃত সেলিম ও কামরুল যথাক্রমে পিকআপ ও সিএনজি’র দক্ষ চালক। তারা ছিনতাইয়ে মূলদলে যুক্ত থেকে ছিনতাইয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে।
সিন্ডিকেট সদস্যদের নামে রাজধানী ঢাকা সহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। এই সিন্ডিকেটে সদস্যরা পূর্বে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ছিল। তারা বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে জেলে অপরাধীদের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। মূলহোতা আজিমের নামে মাদক মামলাও রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।
আপনার মতামত লিখুন :