
বিশেষ প্রতিবেদক, ঢাকাঃ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবারও বার্তা দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা জানেন ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তাদের কাজ শুরু করেছে। ৬টি সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো খুবই ইতিবাচকভাবে সংস্কারকাজে সাড়া দিয়েছে, তাদের মতামত তুলে ধরছেন। কোন রাজনৈতিক দল কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবে একমত হয়েছে, কোনটিতে দ্বিমত হয়েছে-সেসব তারা জানাচ্ছেন। এটা আমাদের জাতির জন্য অত্যন্ত সুখকর বিষয়, প্রতিটি রাজনৈতিক দল সংস্কারের পক্ষে মত দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত নেওয়ার কাজ এখন চলমান আছে। কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে সেগুলো চিহ্নিত করা এবং তার একটা তালিকা প্রস্তুত করা। যেসব দল এতে একমত হয়েছে তাদের স্বাক্ষর নেওয়া। এই তালিকাটিই হবে জুলাই চার্টার বা জুলাই সনদ।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, আমাদের দায়িত্ব জাতির সামনে পুরো প্রক্রিয়াটা স্বচ্ছভাবে তুলে ধরা এবং প্রক্রিয়া শেষে নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচনের ব্যাপারে আমি আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
তিনি বলেন, আমরা চাই, আগামী নির্বাচনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। এজন্য নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনায় নির্বাচনের জন্য তৈরি হতে শুরু করবে বলে আশা করছি।
মহান স্বাধীনতা দিবস ও পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, পুরো বিশ্ব বুঝে গেছে, আমরা জাতি হিসেবে সততার পরিচয় বহন করি না। দেশবাসীর মতো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও চায় আমরা দুর্নীতি মুক্ত হই। তারা আমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করতে চায়। দুর্নীতিমুক্ত হওয়া ছাড়া বাংলাদেশের কোনো গতি নেই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদকে দুর্নীতিমুক্ত রাখার পাশাপাশি আগামী দিনেও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি ঠেকাতে বদ্ধপরিকর।
ড. ইউনূস বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের অংশ হিসেবে সরকারি অফিসগুলোতে ই-ফাইলিং ব্যবস্থা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই ব্যবস্থা চালু হলে দুর্নীতি কমে আসবে। এতে কোন অফিসে, কোন টেবিলে, কোন ফাইল আটকে আছে তা দেখা যাবে সহজেই। অসহায় নাগরিকদের টুঁটি চেপে ধরে অবিশ্বাস্য পরিমাণ টাকা দিতে বাধ্য করা হয়। টাকার যে লেনদেন ও ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হয়, সেটা থেকে নাগরিকদের বাঁচানোর জন্য আমরা বদ্ধপরিকর।
এ সময় নাগরিকদের পরামর্শ চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অনলাইনে সেবা চালুর মাধ্যমে কিভাবে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা হয়, সে বিষয়ে আমাদের লিখুন-ই-মেইল করুন।
এর আগে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাতটায় জাতির উদ্দেশে তার এ ভাষণ শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার এই ভাষণ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার সরাসরি সম্প্রচার করছে।
আপনার মতামত লিখুন :