
বিশেষ প্রতিবেদকঃ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ডিডি হামিম সহ প্রভাবশালী তিন উপ পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান, মো. আসহাব উদ্দীন চৌধুরী ও ফারহানা বিলকিচ। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের প্রভাব খাটিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ সার্কেল গুলোতে ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযানিক সাফল্য তো নেই-ই, বরংচ আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড, আসামি গ্রেফতারে বাণিজ্য, সিনিয়র কর্মকর্তাদের সাথে অশোভন আচরণ, নিয়মিত অফিস না করেও বেতন নেয়াসহ অভিযোগের শেষ নেই! তবুও তারা এখনো দাপটের সঙ্গে ডিএনসির গুরুত্বপূর্ণ সার্কেল গুলোতে বসে আছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে বেড়িয়ে এসেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ডিডি হামিমের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ। আর এসব অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে তার মোবাইলের বিকাশ নম্বর পর্যালোচনা এবং ডিবিবিএল এলিফ্যান্ট রোড (১২.১০১.২৩০৮২৪) শাখায় ব্যাংক হিসাবটি পর্যালোচনার আহ্বানও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের দাবি, হামিম কি ভাবে টাকা চাঁদা তোলে তার এই অ্যকাউন্টগুলো পর্যালোচনা করলেই সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি জামাল উদ্দিনের সহযোগিতায় তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন উপ-পরিচালক ক্রয় পরিকল্পনা পদ। প্রধান কার্যালয়ে ৯ বছর চাকরির সুবাদে দুর্নীতির মাধ্যমে কামিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তৎকালীন সময় তার ব্যাংক একাউন্টের লেনদেন যাচাই করে সত্যতা পাওয়া গেছে। মাঠ থেকে নিয়মিত চাঁদা তোলার ব্যাপক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নিয়মিত চাঁদা না দিলে বাজেট প্রদান করতেন না বলেও জানা গেছে, এছাড়াও নিজেকে কতৃপক্ষের কাছে সব সময় সৎ দাবি করতেন। আর এটা প্রমান করতেই তিনি বাটন ফোন ও ভাঙ্গা মোবাইল ব্যবহার করতেন। অনেক সময় আর্থিক অসচ্ছলতা দেখানোর জন্য নোংরা কাপড়চোপড় পড়তেন তিনি। এছাড়াও অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে না জানিয়ে তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বঙ্গবন্ধু পরিষদ গঠন করেছেন এবং তাদের নাম ব্যবহার করেছেন। এজন্য অধিদপ্তরের প্রায় সব কর্মকর্তা এই হামিমের উপর ক্ষুব্দ।
সম্প্রতি তাকে পটুয়াখালীতে বদলি করা হলেও তিনি বেশির ভাগ সময় থাকেন ঢাকায় নিয়মিত অফিস করেন না এই সুযোগে তার অধঃস্থল কর্মচারীরাও নির্মিত অফিস অফিস করছেন না। হামিমের ক্ষমতার জোর আওয়ামী লীগ আমলে প্রায় সবাই জানে। তিনি সিনিয়রদের অমান্য করতেন এবং তাদের সাথে অশোভন আচরণ করতেন। প্রধান কার্যালয় কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহযোগিতায় সম্প্রতি তিনি তার স্ত্রীকে ঢাকার মধ্যেই পদায়ণের ব্যবস্থা করেছেন। তার স্ত্রীর মাধ্যমে তিনি নিয়মিত মাসোয়ারাও তোলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তারা বিভিন্ন মামলার বাদি হওয়ার নিয়ম থাকলেও তার স্ত্রী ফারহানা বিলকিস সাব ইনস্পেক্টর হলেও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তিনি কোন মামলার বাদি হন না এবং অফিসও করেন না।
আর খোঁদ সরকারি প্রতিষ্ঠান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এতোসব অভিযোগের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন মহলে নেতিবাচক প্রশ্ন উঠছে। এমনকি খোঁদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরেও চলছে কানাঘুষা।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কিংবা কর্মচারীদের মধ্যেই বিতর্কের সৃষ্টি হলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। আবার অনেকে ভাল কাজ করেও ভাল পোষ্টিং না পাওয়ায় অন্যান্যদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রশ্ন উঠছে, হামিম, হাবিবুর, আহসাব, বিলকিচদের পেছনে কারা রয়েছে? কারা এখনও স্বৈরাচার দোসরদের পুষে রাখার চেষ্টা করছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে?
এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে মহাপরিচালকের কাছে গিয়েছিল এই প্রতিবেদক। তবে মহাপরিচালকের স্টাফ অফিসার ড. মো. আবু সাঈদ মিয়া এই প্রতিবেদককে জানান এসব বিষয়ে ডিজি স্যার কথা বলবেন না। একই সঙ্গে জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।
পরবর্তীতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পাবলিক রিলেশন অফিসার সহকারী পরিচালক মোস্তাক আহম্মেদের সাথে কথা বললে এই প্রতিবেদককে জানান যে, এসব বিষয় আমার জানা ছিল না, আপনি এদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন, জবাবে প্রতিবেদক কেন লিখিত দিতে হবে বললে পিআরও জানান আমি এ বিষয় গুলো ডিজি স্যারকে অবহিত করব এবং স্যার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন।
কার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ জানুন। সম্প্রতিক সময়ে মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর (ডিএনসি) মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগগুলো জমা পরে। ডিডি হামিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাড়াও মো. হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয় উত্তরের গুরুত্বপূর্ণ তেজগাঁও সার্কেলের উপপরিদর্শক হিসাবে কর্মরত হাবিবুর রহমান। টাঙ্গাইলের ছেলে হাবিব ছাত্র জীবন থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিতুমীর কলেজে পড়াকালীন সময়ে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল। ছাত্রলীগের ক্যাডার থাকার কারনে এবং সাবেক স্বৈরাচার সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছের লোক হওয়ায় তাকে ২০২০ ইং সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকুরী দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে। চাকুরীর শুরুতেই নারায়নগঞ্জ জেলা, এরপর মাত্র কয়েকমাস পরে ঢাকা মেট্রো কার্যালয় দক্ষিণের লোভনীয় কোতয়ালী সার্কেলে বদলী হয়। বিগত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট বিদায় হলে অজ্ঞাত ক্ষমতার জোরে বদলী হয় ঢাকা মেট্রো কার্যালয় উত্তরের লোভনীয় তেজগাঁও সার্কেলে। অথচ এই হাবীবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে বাহিনীর তৎকালীন মহাপরিচালক খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান তাকে এই লোভনীয় সার্কেলে বদলী করেন।
মো. আসহাব উদ্দীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, বর্তমানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয় দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ কোতয়ালী সার্কেলের উপপরিদর্শক হিসাবে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে আসহাব উদ্দীন চৌধুরী ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বিভিন্ন মাধ্যমে জানা যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা কালীন সময়ে ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিল। এরপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ পাওয়ার কারনে স্বৈরাচার সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে নিজে পছন্দ করত যার কারনে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে ২০২০ ইং সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে চাকুরী দেন। সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কাছের লোক হওয়ায় চাকুরীর শুরুতেই বাগিয়ে নেন ঢাকা মেট্রো কার্যালয় উত্তরের লোভনীয় তেজগাঁও সার্কেল। এরপর আর তাকে পায় কে, তেজগাঁও সার্কেলে থাকাকালীন সময়ে কাওরান বাজারের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের গডফাদার ছিলেন এই আসহাব উদ্দীন বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে অভিযোগ পাওয়া যায়।
বিগত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও কোন ভাবেই বেগ পেতে হয়নি আলোচিত সমালোচিত এই উপপরিদর্শককে। গত তিনমাস পূর্বে ঢাকা মেট্রো কার্যালয় দক্ষিণের লোভনীয় কোতয়ালী সার্কেলে বদলী হয়। অভিযোগ আছে মোটা অংকের টাকা আর ক্ষমতার জোরে আসহাব উদ্দিন চৌধুরী কোতয়ালী সার্কেলে বদলী হয়েছেন। আসহাব উদ্দিনের সঙ্গে সরেজমিনে কথা বলার জন্য তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। এরপর কোতয়ালী সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তার নিকট উপপরিদর্শক আসহাব উদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে জানান, আসহাব উদ্দিন বিগত তিন দিন যাবৎ অফিসে আসেননা, কেন আসেনা জানিনা, তিনি ছুটিও নেননি বা মোবাইলেও জানাননি। কি বলব ভাই ক্ষমতাধর লোকতো, আমরা কিছু বললে আমাদের চাকুরী থাকবেনা।
ফারহানা বিলকিসের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, অন্যদিকে আছেন সাব ইন্সপেক্টর ফারহানা বিলকিচ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিতর্কিত, আলোচিত, সমালোচিত আর ক্ষমতাধর পটুয়াখালী জেলায় কর্মরত উপপরিচালক হামিমুর রশীদের স্ত্রী এবং নড়াইল জেলার পূত্রবধু ফারহানা বিলকিচ নানান কারনে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে থাকেন। সপ্তাহে একদিন অফিস করা, বাচ্চা নিয়ে অফিসে আসা, কথায় কথায় স্বামীকে দিয়ে চাকুরীচদ্রুত করাসহ নানান অভিযোগ এই ফারহানা বিলকিচের বিরুদ্ধে। এতসব অভিযোগের পরও স্বামী হামীমুর রশীদের ভয়ে কোন প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। ফারহানা বিলকিচের বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ থাকার কারনে মাত্র কয়েকদিন আগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো কার্যালয় দক্ষিণের লালবাগ সার্কেল হতে বদলী করেন ঢাকা জেলার ধামরাই সার্কেলে। অথচ শুধুমাত্র সার্কেলপরিবর্তন হলেও অন্য বিষয় পরিবর্তন না হওয়ায় এমন বদলী লোক দেখান এবং হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন অধিদপ্তরের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী।
এদের বিরুদ্ধে তদন্ত পুর্বক ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আপনার মতামত লিখুন :