নিজস্ব প্রতিবেদক :দলকে সংগঠিত করা এবং আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়াই নতুন বছরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। তাই দলের তৃণমূলের কোন্দল নিরসন ও সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর দিকে আওয়ামী লীগ বেশি গুরুত্ব দেবে এ বছর। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা এমনটিই বলেছেন।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশের উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে তাদের উদ্যোগী হতে হবে। আইনের শাসন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়নেও কাজ করতে হবে সরকারকে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিদায়ি বছরে দল গোছাতে একাধিকবার কাজ শুরু করেও করোনার কারণে বন্ধ করতে হয়েছে। নতুন বছরে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরালো করার ব্যাপারে আলাপ চলছে। নতুন বছরে নব উদ্যমে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিন বছর পর পর সম্মেলন করার কথা। সে হিসাবে এ বছরে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরই মধ্যে ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৩৭টির সম্মেলন হয়েছে। তবে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ জেলা, মহানগর কমিটির সম্মেলন আয়োজন করতে হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিগত দুই বছরে অল্পসংখ্যক উপজেলা কমিটির সম্মেলন হয়েছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের প্রায় ৬৫০টি উপজেলা, থানা ও পৌরসভা কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালে জাতীয় সম্মেলনের আগে ১৩৮টির সম্মেলন হয়। গত দুই বছরে ৫০টি কমিটির সম্মেলন হয়েছে। এখনো ৪৫০টি কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ। এর মধ্যে অন্তত ৬২টির সম্মেলন হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ বছর আগে। ছয় থেকে ১৪ বছর আগে সম্মেলন হয়েছিল অন্তত ১৬৫টি উপজেলা, থানা ও পৌরসভার।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এ বছরে তৃণমূল থেকে সংগঠন গুছিয়ে আনা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হবে। জনপ্রিয়তা বাড়াতে আরো বেশি যত্নশীল নেতৃত্বকে সামনে আনতে হবে।
তিনি বলেন, এ বছর আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজও করতে হবে। নেতাকর্মীদের আরো বেশি গণমুখী হতে হবে।
২০২৩ সালের শেষে বা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে। টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এ বিরোধ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, নতুন বছরে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি, বিদ্যমান বিরোধ নিরসন, মেয়াদ উত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর কাউন্সিল ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন এবং দলকে আরো জনসম্পৃক্ত করার কাজ করতে হবে। প্রায় একই কথা বললেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমও।
তবে একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দেওয়া সরকারের জন্য বরাবরই বড় চ্যালেঞ্জ। এ বছর সরকার ও আওয়ামী লীগকে জনগণের মন জয়ে মনোযোগী হতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও লেখক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, অনেক দিন ধরেই দেশে অস্বাভাবিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ন্যায়বিচার ও সুশাসনও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :