নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকাঃ ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করে আলোচনায় আসা চিত্রনায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ। চিত্রনায়িকার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে পরীমণির সঙ্গে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর যোগাযোগ ছিল। ওই সব ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পরীমণি ঢাকার বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে যাতায়াত করতেন। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন আহমেদ ঢাকা বোট ক্লাব ছাড়াও গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাব, উত্তরা ক্লাবসহ ঢাকার কয়েকটি অভিজাত ক্লাবের সদস্য। চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে নাসির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। পরীমণি মূলত অভিজাত ক্লাব পাড়ায় পরিচিতি পান ব্যবসায়ী নাসিরের হাত ধরে। ঢাকার অন্যান্য অভিজাত ক্লাবে পরীমণির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আছে কি না- সে বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ অনুসন্ধান করছে।
সূত্র জানায়, গত বছরের জুলাই মাসে করোনার লকডাউনের মধ্যে পরীমণির ব্যবহৃত সাদা রঙের গাড়িটি সামান্য দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হলে পরদিন তিনি সাড়ে ৩ কোটি টাকা দিয়ে ইটালির বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান ফিয়াটের মাসেরাতি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি কিনেন। ঘটনার দিন ৮ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে তিনি তার পুরাতন সাদা রঙের গাড়িতে যান। ক্লাব থেকে তাকে কোলে করে বের করে কালো রঙের মাসেরাতি গাড়িতে করে বনানীর বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে ৭ জুন রাতে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে যাওয়ার জন্য তিনি সাদা রঙের গাড়িটি ব্যবহার করেছিলেন।
এদিকে, ডিবি পুলিশের রিমান্ডে থাকা নাসির উদ্দিনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। নাসিরের সঙ্গে পরীমণির যোগাযোগ ছিল কি না- সে বিষয়ে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে এখনও স্বীকার করেননি। তবে পরীমণির সঙ্গে নাসিরের পূর্ব পরিচয় থাকা সত্তে¡ও ঢাকা বোট ক্লাবে ঘটে যাওয়া ঘটনার সঙ্গে তৃতীয় কোনো পক্ষের যোগসূত্র আছে কি না- তা খতিয়ে দেখছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।
অপরদিকে, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, কমিউনিটি ক্লাবের ঘটনাটি আমাদের গুলশান টিমের এলাকায়। আমরা বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনা করবো। এ বিষষয়ে যে কোন ধরনের অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা জেনেছি ৭ জুন গভীর রাতে পরীমণি ওই ক্লাবে গিয়েছেন, ৯৯৯-এর একটি ফোনে ওখানকার ঘটনাটি জানতে পারে পুলিশ। তবে পরবর্তীতে এটা নিয়ে কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আমরা এ নিয়ে কাজ করবো।
ঢাকা বোট ক্লাবের ঘটনার আগের দিন দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান অল কমিউনিটি ক্লাবে চিত্রনায়িকা পরীমণি জোর করে ঢুকে ভাঙচুর করেন। মদ চেয়ে না পেয়ে তিনি তার সহযোগীদের নিয়ে গ্লাস, অ্যাশট্রে এবং বেশ কিছু প্লেট ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিষটি নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) জানিয়েছে।বিরুলিয়ার বোট ক্লাবের ঘটনায় পরীমণির অভিযোগের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, এ বিষয়ে পরীমণিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, একটি মামলা হয়েছে ঢাকা জেলাতে। যেহেতু মামলাগুলো চলমান, পরীমণি অবশ্যই প্রয়োজনে সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আসবে। জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত শেষে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যাবে।
এদিকে, ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পরীমণির দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার নাসির উদ্দিন মাহমুদ গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবেরও সদস্য। এ বিষয়ে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল বলেন, নাসির উদ্দিন মাহমুদ উত্তরা ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমাদের ক্লাবেরও উনি সদস্য, কিন্তু উনি কখনো আসেন না। এখনও তিনি সদস্য পদে আছেন।
পরীমণি দাবি করেছেন, মূল ঘটনা থেকে নজর সরাতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তার বিরুদ্ধে অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ করা হচ্ছে। নাসির গ্রেপ্তার হওয়ায় এখন তার পক্ষ নিয়ে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি আলমগীর বলেন, পরীমণির বিরুদ্ধে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আইনগত কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হবে না। সাংবাদিকরা জানতে চেয়েছে, তাই ব্যাখ্যা করেছি। ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী যে সদস্যের মাধ্যমে পরীমণি এসেছিলেন, সেই সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে, গত ৭ জুন রাত পৌনে ২টার দিকে গুলশানের অল কমিউনিটি ক্লাবে ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে পরীমণির বিরুদ্ধে। গত বুধবার রাতে অল কমিউনিটি ক্লাবের সভাপতি কে এম আলমগীর ইকবাল গণমাধ্যমকে জানান, রাত ১১টার পর ক্লাব বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু পরীমণি নিয়ম বহির্ভ‚তভাবে ক্লাবের বারে প্রবেশ করে মদ অর্ডার করেন। ওয়েটাররা সেই মদ পরিবেশন করতে না চাওয়ায় ১৫টি গ্লাস, ৯টি ট্রে ও বেশকিছু হাফ প্লেট ভাঙচুর করে পুলিশ ডেকে নিজেকে হেনস্তার অভিযোগ করেছিলেন পরীমণি। যদিও পরীমণি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, অল কমিউনিটি ক্লাবে ৭ জুন রাতের ঘটনার পরদিন ৮ জুন রাত সাড়ে ১২টায় উত্তরার বিরুলিয়ায় তুরাগ নদের পাড়ে অবস্থিত ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার শিকার হন বলে অভিযোগ করেন পরীমণি। পরে বিষয়টি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরার পর গত রবিবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বর্ণনা দিলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। এরপর সোমবার সাভার মডেল থানায় নাসির উদ্দিনকে প্রধান অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করা হলে পরীমণিকে বোট ক্লাবে নিয়ে যাওয়া অমিসহ প্রধান অভিযুক্ত নাসিরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি গুলশান বিভাগ। বর্তমানে তারা ডিবি হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :